ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ১৬ জনের নামে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে রাজধানীর পূর্বাচলে ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দ নেওয়ায় মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই প্রথম পুতুলকে দুর্নীতির কোনো মামলায় আসামি করা হল। গতকাল রোববার গণমাধ্যমকে বিষয়টি জানিয়েছেন দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন। তিনি বলেন, তথ্য গোপন ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে পুতুলের নামে প্লট বরাদ্দের অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় দুদকের সমন্বিত জেলা ঢাকা–১ এ মামলাটি (নম্বর–৩৯) করা হয়েছে। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।
এ মামলার বাকি আসামিরা হলেন, জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মো. নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য মেজর (ইঞ্জি.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি–২) শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপ–পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান ও হাবিবুর রহমান।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, পুতুলের নিজের বা তার পরিবারের অন্য সদস্যদের মালিকানায় ঢাকা শহরে রাজউকের এলাকায় বাড়ি বা ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা রয়েছে। এ তথ্য গোপন করে রাজউকের আরেক প্রকল্প পূর্বাচল নতুন শহরে প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন পুতুল। সরকারের সর্বোচ্চ পদে থাকাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের প্রভাবিত ও ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। এজাহারে বলা হয়, আসামিরা একে অন্যের সঙ্গে যোগসাজশ করে নিজেরা লাভবান হয়ে ও অন্যকে লাভবান করার জন্য পুতুলের নামে প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। এক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগও আনা হয়েছে।
এ মামলার অভিযোগে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার ছাড়াও বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে শেখ হাসিনা নিজ নামে ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নম্বর সড়কের আশপাশের এলাকা থেকে ১০ কাঠা করে মোট ৬০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ছোট বোন শেখ রেহানা এবং তার ছেলে–মেয়ে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিকের নামে প্লটগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা ১০ কাঠার প্লট (প্লট নম্বর ০০৯) বরাদ্দ পেয়েছেন। ২০২২ সালের ৩ অগাস্ট তার নামে রাজউক প্লটের বরাদ্দপত্র দেয়। সজীব ওয়াজেদ জয় (প্লট নম্বর ০১৫) এবং মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলও (প্লট নম্বর ০১৭) ১০ কাঠা করে প্লট পেয়েছেন। জয়ের বরাদ্দপত্র ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর দেওয়া হয় এবং ১০ নভেম্বর মালিকানা সংক্রান্ত রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়। পুতুলের বরাদ্দপত্র দেওয়া হয় ওই বছরের ২ নভেম্বর। শেখ রেহানাও ১০ কাঠার প্লট (প্লট নম্বর ০১৩) বরাদ্দ পেয়েছেন। তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের (প্লট নম্বর ০১১) এবং মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকের (প্লট নম্বর ০১৯) নামেও একই পরিমাণের প্লট বরাদ্দ হয়েছে।
গত বছরের অক্টোবর শেখ হাসিনার পরিবারের ছয় সদস্যের নামে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়ম নিয়ে সংবাদমাধ্যমে আসা অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দেয় হাই কোর্ট।