বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন, শেখ মুজিব ’৭১ সালে পালিয়ে ছিলেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে গ্রেপ্তার হওয়ার জন্য বাসায় বসেছিলেন। সেটি আওয়ামী লীগ নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে তার বইয়ে লিখেছেন। গতকাল মঙ্গলবার বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটাকে ভূতের মুখে রামনাম বলে মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, তাদের (আওয়ামী লীগ) মুখে গণতন্ত্রের কথা মানুষ বিশ্বাস করে না। খবর বাংলানিউজের।
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী শাসনের পতন হয় গত ৫ আগস্ট। শেখ হাসিনাসহ দলের নেতাদের একটা বড় অংশ বিদেশে পালিয়ে গেছেন। অনেকে গ্রেপ্তার হয়ে জেলে আছেন। বাকি নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে। দলের বিপর্যস্ত এই পরিস্থিতিতে হাছান মাহমুদ যখন বিএনপির সঙ্গে কাজ করতে আওয়ামী লীগের আগ্রহের কথা বলছেন, তখন দলটির ভেতরে এ ধরনের চিন্তা থাকতে পারে বলে বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করছেন। তবে বিএনপি নেতারা তা নাকচ করে দিয়েছেন।
লন্ডনভিত্তিক টেলিভিশন ‘চ্যানেল এস’ হাছান মাহমুদের এক সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে গত রোববার। সেই সাক্ষাৎকার দেশের কয়েকটি পত্রিকা ও অনলাইনে প্রকাশ করা হয়েছে। সাক্ষাৎকারে হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে না পারা আওয়ামী লীগের বড় রাজনৈতিক ভুল ছিল। তিনি বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বিএনপির সঙ্গে কাজ করতে তার দল (আওয়ামী লীগ) আগ্রহী। বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক ক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থানের সঙ্গে তিনি একমত বলেও মন্তব্য করেন। তবে আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনে দলটির নেতাদের যারা বিএনপির কড়া সমালোচক ছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হাছান মাহমুদ।
হাছান মাহমুদ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের কাজ করার আগ্রহের বিষয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সে ব্যাপারে বিএনপির বক্তব্য জানতে চাইলে দলটির মহাসচিব গণমাধ্যমকে বলেন, ভূতের মুখে রামনাম। আমরা আগেও বলেছি এবং এখনো বলছি, তারা (আওয়ামী লীগ) এখন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কথা বলে। এ কথা শুনলে ঘোড়াও হাসবে।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, গণতন্ত্র আনতে দেশের মানুষ তাদের (আওয়ামী লীগ) তাড়িয়ে দিয়েছে। তারা দেশ থেকে পালিয়ে গেছে। তাদের মুখে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কথা শোভা পায় না। আওয়ামী লীগ দেশে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, তারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার কথা বললে সেটা জনগণ বিশ্বাস করে না বলে উল্লেখ করেন বিএনপির মহাসচিব।
আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ১৫ বছর ধরে জনগণের ওপর নির্মম নির্যাতন করেছিল। এরা দেশের অর্থনীতিকে ফোকলা করে দিয়েছে। আমাদের ৬০ লাখ নারী–পুরুষ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। ইলিয়াস আলীসহ ৬০০ এর বেশি নেতাকর্মীকে গুম করেছে। বিপদ শেষ হয়নি নতুন করে বিপদ আসার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, এমন ইঙ্গিত দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির ওপর সবসময় আঘাত এসেছে। আমাদের সজাগ থাকতে হবে। বহু চেষ্টা করে কেউ বিএনপিকে ভাঙতে পারেনি। বিএনপির সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে নারীরা।
জাতীয়বাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনা। সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহাম্মেদ।