হালিশহর আনন্দবাজারে ছুরিকাঘাতে যুবক খুন

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৬:১৮ পূর্বাহ্ণ

নগরীর বন্দর থানাধীন হালিশহর আনন্দবাজার ময়লার ডিপো থেকে ময়লা সংগ্রহ ও বিক্রি নিয়ে বিরোধের জেরে এক যুবককে খুন করা হয়েছে। তার নাম মো. জসিম উদ্দিন। গত মঙ্গলবার রাতে হালিশহর আনন্দবাজার ময়লার ডিপোকেন্দ্রিক টিজি কলোনি এলাকায় প্রতিপক্ষের লোকজন গলায় ছুরি চালিয়ে জসিমকে গুরুতর আহত করে। পরে গতকাল সকাল ৭টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় গতকাল রাত ১০টা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, ৫ আগস্টের আগে হালিশহর আনন্দবাজার ময়লার ডিপো থেকে ময়লা (ভাত, আপেল, কমলা, হাসপাতালের বর্জ্য) সংগ্রহ করে বিক্রি করত একটি পক্ষ। ৫ আগস্টের পর জসিম ও তার প্রতিপক্ষরা এ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নেয়। ঘটনার দিন মঙ্গলবার এ ব্যবসার বিরোধ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয় এবং মারামারির ঘটনা ঘটে। এর একপর্যায়ে প্রতিপক্ষের লোকজন জসিমের গলায় ছুরিকাঘাত করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত জসিমকে প্রথমে চমেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে তাকে বেসরকারি মেট্রোপলিটন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গতকাল সকালে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জসিম মারা যায়।

বন্দর থানার ওসি কাজী মোহাম্মদ সুলতান আহসান উদ্দিন আজাদীকে বলেন, জসিমরা সাত ভাই। তাদের একজন বোন রয়েছে। বাবা জয়নাল আবেদীন সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগের একজন কর্মী। বাড়ি ভোলায়। তবে দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে তারা চট্টগ্রাম নগরীতে বসবাস করে আসছেন। হালিশহর আনন্দবাজার টিজি কলোনিতে তাদের বসবাস। প্রতিপক্ষরাও একই এলাকায় বসবাস করে। জসিমের বাবা জয়নাল আবেদীন যেমন ময়লা টানার কাজ করেন তার ছেলে জসিম ও জসিমের ভাইয়েরাও এ কাজ করেন।

ওসি বলেন, ময়লার ডিপোকেন্দ্রিক ময়লা সংগ্রহ ও বিক্রির ব্যবসা ৫ আগস্টের আগে করতো একটি পক্ষ। ৫ আগস্টের পরে ভিকটিম জসিম ও তার প্রতিপক্ষরা এর দখল নেয়। এই ব্যবসাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে মঙ্গলবার রাতে তাদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। জসিমকে ছুরিকাঘাত করা হয়। দিপু নামের একজন তার গলায় ছুরিকাঘাত করে। পরে আজকে (বুধবার) সকালে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। ঘটনায় জড়িতদের ধরতে আমাদের অভিযান চলছে। এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

তিনি আরও বলেন, ময়লার ডিপো থেকে ময়লা সংগ্রহ করে বিক্রির বিষয়টি অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। ময়লাগুলো মাছ ও মুরগির খামারে বিক্রি করা হয়। আর সেসব মুরগি, মাছ আমরা খাচ্ছি। বিষয়টি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না। আমরা এখন বিষয়টি দেখব এবং এ ব্যবসাকে কেন্দ্র করে যাতে আর কোনো ঘটনা না ঘটে সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

জসিমের চাচা মো. বশির আজাদীকে বলেন, জসিম খুবই ভালো ছেলে ছিল। এলাকায় তাকে সবাই পছন্দ করত। ময়লার ডিপো থেকে নষ্ট ভাত ৫ টাকার পরিবর্তে ৯০ টাকায় বিক্রি করছিল ফরাজী নামের একজন। সে এলাকায় ত্রাসের সৃষ্টি করেছে। এসবের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় আমার ভাতিজা জসিম। এ কারণে জসিমকে ফরাজী টার্গেট করে এবং মঙ্গলবার রাতে গলায় ছুরি চালিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। ময়লার ডিপো থেকে ময়লা সংগ্রহ এবং বিক্রির পর তা কী কাজে ব্যবহার হতো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ক্রেতারা এসব ময়লা মাছ ও মুরগির খামারে ব্যবহার করতেন। তিনি বলেন, আমরা জসিমের জানাজাসহ সার্বিক বিষয়ে ব্যস্ত রয়েছি। তাই আজকে (বুধবার) মামলা করছি না। আগামীকাল (আজ বৃহস্পতিবার) আমরা ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করব। বশির বলেন, তার ভাতিজা জসিম বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত রয়েছে অনেক দিন ধরে। জেলও খেটেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ও সে রাস্তায় ছিল। জসিমের প্রতিপক্ষরাও বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে ওসি কাজী মোহাম্মদ সুলতান আহসান উদ্দিন বলেন, ভিকটিম জসিম ও তার প্রতিপক্ষ কারোরই রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ততা আমরা পাইনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআলিফ খুনের ১০ আসামি আরেকটি মামলায় গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধকক্সবাজারে থানা ঘেরাও, সাবেক ছাত্রলীগ নেতার মার্কেটে তালা