হালদা থেকে প্রতি সেকেন্ডে তিনশ কিউবিক মিটার পানি কর্ণফুলী নদীর স্রোতে মিশে যায়। তিনশ কিউবিক মিটার থেকে মাত্র ১.৮৭ কিউবিক মিটার পানি দেশের সবচেয়ে বড় শিল্পাঞ্চল মীরসরাই ইকোনমিক জোনের জন্য নেওয়া হবে; যা কর্ণফুলীর স্রোতে মিশে যাওয়া পানির দেড়শ ভাগের এক ভাগ।
অপরদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের জন্য ফেনী নদী এবং মুহুরী লেক থেকে পানি নেওয়া হবে। ট্রিটমেন্ট করে ব্যবহার করা হবে সাগরের লবণাক্ত পানিও। এসব উৎসের পাশাপাশি হালদা নদীকেও একটি উৎস হিসেবে রাখা হচ্ছে। দেশের সব বড় বড় প্রকল্প নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা হয় বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, এই প্রকল্পটি নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের জন্য পানি নেওয়ার বিষয়টি হালদায় কোনো প্রভাব ফেলবে না। গতকাল শনিবার মীরসরাই ইকোনমিক জোন ঘুরে দেখা গেছে, পুরো এলাকা জুড়ে চলছে উন্নয়নের মহাযজ্ঞ। বাস্তবায়িত হচ্ছে অসংখ্য প্রকল্প। ভবন নির্মাণের পাশাপাশি সাগর থেকে মাটি এনে এলাকা ভরাট করার কার্যক্রমও চলছে।
মীরসরাইয়ের উপকূলীয় এলাকার পাশাপাশি সীতাকুণ্ড এবং ফেনী থেকেও বেশ কিছু অংশ নিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় ইকোনমিক জোন। ত্রিশ হাজার একর ভূমিতে চলছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। ইতোমধ্যে চীন, জাপান, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, ইংল্যান্ড ও ভারতসহ বিশ্বের নানা দেশের অনেক কোম্পানি এই শিল্পাঞ্চলে জায়গা বরাদ্দ নিয়েছে। অনেকে আগ্রহ প্রকাশ করে জায়গা বরাদ্দ চেয়েছে। দেশের বড় বড় প্রায় প্রতিটি শিল্প গ্রুপই গড়ে তুলছে শিল্প কারখানা। আগামী দশ বছরের মধ্যে এই ইকোমনিক জোনে অন্তত ১৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। গতকাল ইকোনমিক জোন পরিদর্শনে আসেন বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী। তিনি আজাদীর কাছে অর্থনৈতিক অঞ্চলের নানা দিক তুলে ধরেন। শিল্পাঞ্চলে পানি সরবরাহ নিয়ে সাম্প্রতিক আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। একটি সাধারণ জিনিস নিয়ে অহেতুক বিতর্ক করা হচ্ছে। বিতর্ককে ‘পার্ট অব ডেভেলপমেন্ট’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, দেশের সব বড় বড় প্রকল্প নিয়ে কম-বেশি বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা হয়েছে। এটি নিয়েও হচ্ছে।
নিজেকে হালদাপাড়ের সন্তান উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই নদীর প্রতি আমার মমত্ব কম নয়। কিন্তু এই অর্থনৈতিক অঞ্চলটি শুধু মীরসরাইয়ের নয়, চট্টগ্রামেরও নয়; পুরো দেশের লাখ লাখ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে দেবে। তাই এই অর্থনৈতিক অঞ্চলটিকে হেলা করার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, নদীর কোনো ক্ষতি না করে নদীর স্রোতকে উন্নয়নের স্রোতে সমন্বয় করিয়ে দেশে মানুষের ভাগ্য ফেরাতে হবে।
পবন চৌধুরী বলেন, বর্ষাকালে পানি লাগবে না। প্রচুর পানি উল্টো সংকট তৈরি করবে। মুহুরী প্রজেক্টের পানির ব্যবহার হবে এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে। এর বাইরে সাগরের পানিকে লবণমুক্ত করেও ব্যবহার করা হবে। শুষ্ক মৌসুমে যখন স্থানীয়ভাবে পানির সংকট তৈরি হবে, তখন হালদা থেকে ১.৮৭ কিউবিক মিটার পানি মীরসরাইয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক না করে সহায়তা করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার একেএম ফজলুল্লাহ গতকাল বলেন, হালদা তো পুকুর নয় যে, কিছু পানি নিলে এটি শুকিয়ে যাবে। যে পানি বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে নেওয়ার কথা হচ্ছে সেটি তোলা না তোলার উপর হালদার কোনোকিছু নির্ভর করে না। জোয়ার-ভাটা নির্ভর এই নদীতে প্রতি সেকেন্ডে ৩০০ কিউবিক মিটার পানি স্রোতের সাথে সাগরে মিশে যায়। এই পানি আমরা না নিলেও সাগরে মিশে যাবে, নিলেও সাগরের কোনো লাভ-ক্ষতি হবে না।