হালদায় কমছে না মাছ চোর ও বালুখেকোদের উৎপাত

১৫ দিনে ১৪ হাজার মিটার জাল উদ্ধার, বালুর চার নৌকা ধ্বংস

রাউজান প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ২৯ এপ্রিল, ২০২১ at ৭:৪০ পূর্বাহ্ণ

দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে কমছে না মাছ চোর ও বালুখোকোদের উৎপাত। এ নদীর জীববৈচিত্র্য ও মা মাছ রক্ষায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের পরও তাদের দৌরাত্ম্য থেমে নেই। বিশেষায়িত এই নদীটিকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণার পর মাছ চুরি ঠেকাতে ও যান্ত্রিক নৌযান বন্ধে কয়েকটি স্থানে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হালদা নদীতে যেকোনো সময় মা মাছ ডিম ছাড়তে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে এপ্রিল মাস থেকে জুন-এই তিনমাস হালদায় প্রজনন মৌসুম। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ দিনে হাটহাজারী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও নৌ পুলিশের পৃথক পাঁচটি অভিযানে সাড়ে ১৪ হাজার মিটার অবৈধ ঘের জাল জব্দ ও এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। এসময় ধ্বংস করা হয়েছে সর্বমোট চারটি ইঞ্জিন চালিত নৌকা। সর্বশেষ গত ২৭ এপ্রিল, ইন্দ্রিরাঘাট, সরকারহাট, গুয়ামর্দন থেকে তিনটি বালুবাহী নৌকা জব্দ করে ধ্বংস করা হয়েছে। এর আগে ২২ এপ্রিল সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত হালদায় অভিযান চালিয়ে পাঁচ হাজার মিটার নিষিদ্ধ ঘের জাল জব্দ করেছে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমীন। ২০ এপ্রিল সকাল ১০টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত এই কর্মকর্তার নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে নদীর পাড় কেটে মাটি উত্তোলনে ব্যবহৃত সরঞ্জামসহ একটি ট্রাক্টর ও ২ হাজার মিটার ঘেরা জাল জব্দ করা হয়। ১৯ এপ্রিল হালদা নদীর মা মাছ রক্ষায় রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জোনায়েদ কবির সোহাগ অভিযান পরিচালনা করেন। তার সাথে ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি অতীশ দর্শী চাকমা। তাদের পরিচালিত অভিযানে একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকা ধ্বংস ও অন্যদের সতর্ক করা হয়।
১৭ এপ্রিল চট্টগ্রাম সদরঘাট নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবিএম মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে হালদা-কর্ণফুলীর মোহনা থেকে কচুখাইন পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে প্রায় ৬ হাজার মিটার অবৈধ জাল উদ্ধার করা হয়। এসময় তিন থানা (রাউজান, হাটহাজারী ও বোয়ালখালীর) মোহনা থেকে বোয়ালখালীর এক বাসিন্দাকে জাল পাতার অপরাধে গ্রেপ্তার করে মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষন আইন-১৯৫০ (সংশোধনী ২০১৩ইং) এর ৫(১) ধারায় মামলা দেয়া হয়। ১৫ এপ্রিল দুপুরে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন পরিচালিত অভিযানে ১ হাজার ৫শ মিটার জাল জব্দ করা হয়। আইন অনুসারে কালুরঘাট কর্ণফুলীর সংযোগস্থল থেকে প্রায় ৫৩ কিলেমিটার দৈর্ঘ্য এই নদীতে সারাবছর মাছ শিকার, বালুউত্তোন, ইঞ্জিন চালতি নৌকা চালাচল সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ নদীতে চলাচলরত যান্ত্রিক নৌযানের ডুবন্ত পাখার আঘাতে মা মাছসহ ডলফিনের মৃত্যু হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা গবেষক মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, হালদা নদীতে অন্যান্য বছরের তুলনায় অবৈধ জাল পাতা, দূষণ অনেক কমে আসছে। রাউজান কিংবা হাটহাজারী কোন অংশে দূষণ বা অবৈধ জাল পাতা হচ্ছে, সেটি দেখার বিষয় নয়, যেখানে জাল পাতা হবে সেখানে অভিযানে নামতে হবে দুই উপজেলা প্রশাসনকে।
রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জোনায়েদ কবির সোহাগ বলেন, হালদা নদীর রাউজান অংশে মাছ চুরি, বালু উত্তোলনসহ দুষ্কৃতিকারীদের অপতৎপরতা প্রায় বন্ধ হয়েছে। আমরা মৎস্য বিভাগ, র‌্যাব, পুলিশ, আনসার ও এনজিও সংস্থার সহযোগিতায় অভিযান অব্যাহত রেখেছি।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, প্রজনন মৌসুম শুরু হওয়ায় হালদা নদীতে মা মাছের আনাগোনা বেড়েছে। নদীর পানির ভৌত ও রাসায়নিক গুণাগুন এবং নদী তীরবর্তী পরিবেশ বিগত বছরগুলোর তুলনায় দূষণমুক্ত হওয়ায় মা মাছ ও ডলফিনের অবাদ বিচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাউজানে প্রধানমন্ত্রীর উপহার পাচ্ছে ৭ হাজার ৪শ মানুষ
পরবর্তী নিবন্ধশিল্পীদের জন্য ভালোবাসার উপহার