হালদায় একের পর এক গাঙ্গেয় ডলফিন মারা যাচ্ছে। সর্বশেষ মৃত ডলফিনটি ভেসে ওঠে গত ৩ নভেম্বর নদীর বাড়িঘোনা এলাকায়। ২০১৭ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৬ বছরে মারা গেল ৪০টি। ফলে হালদায় উদ্বেগজনক হারে গাঙ্গেয় ডলফিন কমছে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএনের তথ্য মতে, বাংলাদেশে যে সাত প্রজাতির ডলফিন আছে তৎমধ্যে হালদায় থাকা গাঙ্গেয় ডলফিন একটি। এটি মিঠাপানির ডলফিন। আন্তর্জাতিক এই প্রতিষ্ঠানের মতে ইরাবতি ও গাঙ্গেয় দুই প্রজাতির ডলফিন এখন বিশ্বজুড়ে বিপন্ন প্রাণীর লাল তালিকায়। গবেষকদের মতে কর্ণফুলী, সাঙ্গু ও হালদায় গাঙ্গেয় ডলফিনের সংখ্যা ২শ থেকে দেড়শ এর মতো। তবে এই সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে কমছে।
রাউজান, হাটহাজারী ও ফটিকছড়ির উপর দিয়ে প্রবাহিত এই নদী দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হিসাবে পরিচিত। এটি সরকার ঘোষিত বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ। বিশেষায়িত এই নদীতে অব্যাহত ভাবে ডলফিন মৃত্যুর ঘটনা জলজ প্রাণীর উপর অশনি সংকেত বলে মন্তব্য করেছেন নদীর মৎস্য সম্পদ নিয়ে কাজ করে আসা গবেষকগণ। তারা মনে করছেন এভাবে ডলফিন মারা যেতে থাকলে অল্প সময়ের মধ্যে হালদা ডলফিন শূন্য হয়ে পড়ার পাশাপাশি মৎস্য সম্পদের উপরও বিরূপ প্রভাব আরো বাড়বে।
হালদা গবেষক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিদ্যা বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, নদীতে মাছ চোরদের জালপাতা, হালদার মুখে বালুবাহী বড় বড় যান্ত্রিক নৌযান ও ড্রেজার চলাচল, কলকারখানার তরল বর্জ্যে পানি দূষণ রোধে সত্যিকার অর্থে কঠোরভাবে আইনের প্রয়োগ করা দরকার। তা করা না হলে এই নদীর জলজ প্রাণী রক্ষা কঠিন হবে।
হালদার আরেক গবেষক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ডলফিন মৃত্যুর জন্য দায়ী নদীতে মাছ চোরদের পাতা কারেন্ট জাল, নদীর শাখা খালের মুখে ভেঙে থাকা স্লুইচ গেট। জোয়ারের পানিতে ডলফিন বিচরণ করতে গিয়ে নদীর শাখা খাল গুলোতে প্রবেশ করে। অনেক সময় প্রবেশ ও বাহির হওয়ার পথে নষ্ট স্লুইচ গেটে আঘাত প্রাপ্ত হয়। সর্বশেষ ক্ষত নিয়ে ডলফিন মারা যায়। এছাড়া কলকারখানার তরল বর্জ্যে নদীর পানি দূষণসহ ডলফিন মৃত্যুর আরো অনেক কারণ রয়েছে।