শুষ্ক মৌসুম এবং রাবার ড্যামের জন্য ফটিকছড়ির ভূজপুরের পর থেকে শুকিয়ে যায় হালদা নদী। তবে রাবার ড্যাম খুলে দেয়া এবং কিছুটা বৃষ্টির পর আবারো প্রাণ ফিরেছে হালদা নদীতে। প্রাণ ফিরলেও এ নদীকে বাঁচতে দিচ্ছে না মাটিখেকোরা। উপজেলার পাইন্দং ইউনিয়নে নদীর পাড় কেটে মাটি বাণিজ্যে তৎপর একাধিক সিন্ডিকেট। এসব সিন্ডিকেটের থাবার শিকার হয়ে বিগত কয়েক বছরে হালদার পাড় বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে। এদিকে নদীর উপর এসব কর্মকাণ্ডের কারণে সরকারের কোটি টাকার ব্লক ধসে গেছে। সিন্ডিকেটের এহেন তৎপরতা দ্রুত থামানো না গেলে হুমকির মুখে পড়বে হালদা নদী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার পাইন্দং ইউনিয়নের, যোগিনীঘাট, ফকিরাচাঁন এলাকার ৪–৫টি স্পটে হালদার পাড় কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। এদিকে নির্বিচারে নদীর পাড় কাটার ফলে বিলীন হতে চলেছে বেড়িবাঁধ রক্ষায় নির্মিত কোটি কোটি টাকার সিসি ব্লক। পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য হারিয়ে হুমকির মুখে পড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা। কাটা অংশ এতই গভীর ও প্রশস্ত যে, বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টিতে অনায়াসে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় বিস্তীর্ণ এলাকা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, এ এলাকায় নদীর পাড় কাটা কাজে জড়িত রয়েছে রাজনৈতিক দলের পরিচয়দানকারী সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের সদস্যরা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে হালদা নদী থেকে রাতদিন বালু উত্তোলন করে দেদার বিক্রি করছে।
এদিকে দিনের পর দিন মাটি ও বালুর গাড়ি চলাচলের কারণে স্থানীয় সড়কগুলো খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। অতিরিক্ত গাড়ি চলাচলে ধুলাবালুতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে বাসিন্দাদের জীবন। এ নিয়ে স্থানীয়রা বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ জানালেও প্রতিকার পায়নি বলে জানান।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রধান ও হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির কো–অর্ডিনেটর ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসনকে পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় সম্পদে সমৃদ্ধ হালদা ক্রমশ হুমকির মুখে পড়বে।
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, কোনো অবস্থাতেই হালদার পাড় কাটা কিংবা এ নদী থেকে বালু উত্তোলন করা যাবে না। যারা এ কাজ করবে তাদের বিরুদ্ধে নদী সংরক্ষণ আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।