হার্ডলাইনে যাচ্ছে সিটি কর্পোরেশন

সড়ক-ফুটপাত থেকে হকারসহ দখলদার উচ্ছেদে অভিযান আগামী সপ্তাহে ।। কাজ নিম্নমানের হলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ।। চসিকের সাধারণ সভায় মেয়র

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৩১ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৮:২৪ পূর্বাহ্ণ

সড়কফুটপাত থেকে হকারসহ অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে হার্ডলাইনে যাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। সড়ক ও ফুটপাত থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে আগামী সপ্তাহ থেকে অভিযান শুরু করবে সংস্থাটি। অবশ্য উদ্ধারকৃত ফুটপাত বেদখল রোধে পুলিশের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করেন চসিকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। বিশেষ করে যে এলাকায় উচ্ছেদ করা হবে ওই এলাকার সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের এ বিষয়ে মনিটরিং প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।

গতকাল নগরের থিয়েটার ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হয় চসিকের বর্তমান পর্ষদের ৩৬তম সাধারণ সভা। এতে অবৈধ দখলে থাকা সড়কফুটপাত উদ্ধারে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, আগামী সপ্তাহ থেকে অভিযান শুরু করব।

তিনি বলেন, নগরের ফুটপাত দখল জনগণের জন্য অসহনীয় হয়ে গেছে। মানুষ স্বস্তিতে হাঁটতে পারবে না, মুক্ত বাতাসে নি:শ্বাস নিতে পারবে না, তা হতে পারে না। আমরা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার সাথে সভা করেছি। দখল হওয়া ফুটপাত উদ্ধারে ব্যাপক অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি পেপার্কিং চালুসহ বহুমুখী পদক্ষেপ নেয়া হবে। জানা গেছে, সাধারণ সভায় ফুটপাত দখল নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন চসিকের কাউন্সিলর এবং প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। তাদের অভিযোগ, দখলমুক্ত করার কিছুদিন পরেই ফুটপাত আবার দখল হয়ে যায়।

সভায় চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক বলেন, চসিক ল এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি না। আমাদের কাজ রাস্তা, ফুটপাত, নালা বানানো। এগুলো যাতে বেদখল না হয় সেজন্য পুলিশের সহযোগিতা প্রয়োজন।

চসিকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে ফুটপাত ও সড়ক উদ্ধার করে চসিক। প্রায় দুই মাস উদ্ধার হওয়া স্থান উন্মুক্ত ছিল। পরে সেই জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। দখলমুক্ত করার পর সংশ্লিষ্ট থানাগুলো যদি নিয়মিত মনিটরিং করে তাহলে ফুটপাত ও সড়ক উন্মুক্ত রাখা সম্ভব হবে।

চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের কারণে আমাদের অভিযান পরিচালনা কার্যক্রম কিছুটা কম ছিল। আগামী সপ্তাহ থেকে পুরোদমে অভিযান পরিচালিত হবে।

সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের এডিসি মো. কাজী হুমায়ুন রশীদ বলেন, হকার উচ্ছেদে সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। বর্তমানে কিছু এলাকায় ফুটপাত পুরোপরি দখল হয়ে গেছে। এ কারণে অনেক পথচারীকে ফুটপাতে জায়গা না পেয়ে রাস্তায় হাঁটতে হচ্ছে, যা দুর্ঘটনা ও জ্যাম বাড়াচ্ছে। তিনি বলেন, পর্যাপ্ত জেব্রা ক্রসিং না থাকায় পথচারীরা সমস্যায় ভুগছেন। পর্যাপ্ত জেব্র ক্রসিং নির্মিত হলে যানজট ও দুর্ঘটনা কমবে।

কাজ নিম্নমানের হলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা : নিম্নমানের কাজ না করার জন্য ঠিকাদারদের সতর্ক করে সিটি মেয়র বলেন, কোনো ঠিকাদারের বিরুদ্ধে নিম্নমানের কাজের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে জরিমানা করা হবে। প্রয়োজনে কার্যাদেশ বাতিল করা হবে। কাজ নিম্নমানের হলে, কাজ শেষ না করে ফেলে রাখলে ঠিকাদারকে বাদ করে দেব। পিসি রোডের ঠিকাদার কাজ ফেলে পালিয়ে যাওয়ার পর যেভাবে কার্যাদেশ বাতিল করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে কাজ শেষ করেছি।

প্রকৌশলীদের মেয়র বলেন, বর্ষা মৌসুমে ২ মাস কাজ করা যায় না। এজন্য শুষ্ক মৌসুমেই গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত কাজে অগ্রগতি নিশ্চিত করতে হবে।

জলাবদ্ধতা প্রকল্পে ধীরগতি : সিডিএর জলাবদ্ধতা প্রকল্প প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, সিডিএর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ অত্যন্ত ধীরগতিতে হচ্ছে। আমি প্রকল্পের এলাকাগুলোতে পরিদর্শন করে দেখেছি। চাক্তাই খাল, বির্জা খালসহ বিভিন্ন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এলাকায় মাটি জমে আছে। এ মাটি উত্তোলন করা না হলে এ বছরও নগরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। এজন্য বর্ষাকাল আসার আগেই নালাখালের মাটি উত্তোলন করতে হবে।

অন্যান্য : সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের এডিসি মো. কাজী হুমায়ুন রশীদ বলেন, নগরে দুর্ঘটনা বেশি হচ্ছে মোড়গুলোতে। আমরা যদি পরিকল্পনামাফিক মোড়গুলোকে গড়তে পারি তবে দীর্ঘমেয়াদে শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নত হবে। বর্তমানে যে সমস্ত গাড়িকে আইনভঙ্গের জন্য আটক করা হয় সেগুলোকে রাখার জন্য পুলিশের ডাম্পিং স্টেশন প্রয়োজন। চসিক এ ধরনের গাড়ির জন্য ডাম্পিং স্টেশন করলে নগরে যানজট হ্রাস পাবে এবং আটককৃত গাড়ির ব্যবস্থাপনা উন্নত হবে।

চসিকের আওতায় বিমানবন্দর সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক জসিম উদ্দিন বলেন, প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ১৭ শতাংশ শেষ হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচসিকের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে সম্পৃক্ততা চান কাউন্সিলররা
পরবর্তী নিবন্ধনৈরাজ্যের রাজনীতি ছেড়ে কল্যাণের পথে আসুন