শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার জন্য সদ্য ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সহ সমন্বয়ক।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সহসমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, ‘পরাজিত পক্ষই’ দেশের সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য এসব করছে। ফ্যাসিস্ট রেজিমের প্রধান হেলিকপ্টার দিয়ে গণভবন থেকে পালিয়ে গেছে। এই দেশের ছাত্র জনতা তাদের সম্পদ বুঝে নিয়েছে। গণভবন এদেশের মানুষের সম্পত্তি। এই দেশের মানুষ তাদের সম্পদ বুঝে নিয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
গতকাল আন্দোলনকারীদের ঢাকা মার্চ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া লাখো জনতা তার আগেই পুরো ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়। এক পর্যায়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনের দখল নেয় এবং বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে যায়। এর মধ্যে বিভিন্ন স্থানে থাকা, সরকারি স্থাপনা এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িতে হামলার খবর আসতে থাকে। হামলা হয় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপরও।
সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মাসুদ বলেন, যখন তারা পরাজিত হল, তখন তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করতে শুরু করল। তারা বিশ্বের কাছে বোঝাতে চাইছে যে, বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক দেশ। এই অঞ্চলের মানুষ হাজার হাজার বছর ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির সঙ্গে বসবাস করছে। ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করছে পরাজিত গোষ্ঠীটি। তারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর প্রেতাত্মাদের মত মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ব্যবহার করে বার বার এদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল। তারা যখন এই দেশে থাকতে পারে নাই, তখন এই দেশের ইমেজকে নষ্ট করার জন্য প্রতিটি জায়গায় হামলা ভাঙচুর শুরু করেছিল। এই হামলা ভাঙচুরের সঙ্গে এই দেশের ছাত্রজনতার ন্যূনতম সম্পর্ক নেই।
আন্দোলনকারীদের এই প্রতিনিধি বলেন, এই যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের খেলা চলছে, এর সঙ্গে এই দেশের ছাত্রজনতার ন্যূনতম সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশের ছাত্র জনতা শান্তিপূর্ণভাবে বিজয় উদযাপন করেছে। প্রতিটি জায়গায় সব ধর্মবর্ণের মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য প্রতিটি জায়গায় অবস্থান নেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। যাতে এই পরাজিত শক্তিটি আরেকবার এই দেশের মানুষের ওপর নির্যাতন চালাতে না পারে। তারা এখন মুখোশ পাল্টে সাধারণ ছাত্র জনতার ভেতরে ঢুকে এই দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে এই দেশকে সন্ত্রাসী কর্যকলাপ পরিচালনার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু ছাত্র জনতা যেভাবে একটি ফ্যাসিস্ট সরকারকে পরাজিত করেছে। সুতরাং এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের প্রতিরোধ করতে ১০ মিনিটও লাগবে না।
তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার পক্ষ থেকে এই দেশের ছাত্রদের বলব, প্রতিটি জায়গায়, প্রতিটি গ্রামে গঞ্জে, পাড়া মহল্লায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার্থে আপনারা সকলে আমাদের সংখ্যালঘু ভাই বোনদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্যে দাঁড়িয়ে যান। যাতে আরও কেউ এই ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে না পারে।
বিজয়ের পর প্রতিপক্ষের ওপর হামলা হচ্ছে কিনা, সেই প্রশ্নে মাসুদ বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বা এই দেশের ছাত্রজনতা কোনো প্রতিপক্ষের ওপর হামলা করেনি। তারা সন্ত্রাসীদেরকে প্রতিরোধ করেছে। আপনারা দেখেছেন পথে প্রান্তরে গুলি নিয়ে, পিস্তল নিয়ে, লাঠিসোঁটা নিয়ে যারা ছাত্র জনতার ওপর হামলা করেছিল, ছাত্ররা তাদের প্রতিরোধ করেছে। বিভিন্ন জায়গায় গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলার বিষয়ে প্রশ্ন করলে মাসুদ বলেন, এ বিষয়ে আমরা আমাদের লোকজনকে বলেছি যে, গণমাধ্যমের কর্মীরা আমাদের বন্ধু। তাদের ওপর কোনো হামলা নয়। তবে কিছু কিছু গণমাধ্যমের উচ্চ পর্যায়ে যারা আছেন, তারা বার বার ফ্যাসিস্ট রেজিমের পক্ষ নিয়েছিল। সেই কারণে হয়তো তারা ক্ষুব্ধ হয়েছিল।