হাবীবুর রহমান (১৯২৩–১৯৭৬)। সাংবাদিক, কবি এবং শিশুসাহিত্যিক। হাবীবুর রহমান ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের ১ লা জুলাই পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট থানার পালিশ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতার হেয়ার স্কুল থেকে প্রবেশিকা পাস করেন। পরে ভর্তি হন প্রেসিডেন্সি কলেজে, কিন্তু আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে তার পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যায়। তিনি কিছুদিন কলকাতার মডেল হাই স্কুলে শিক্ষকতা করেন। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দৈনিক আজাদ পত্রিকার মধ্যদিয়ে সাংবাদিকতায় যোগ দেন। দেশ ভাগের পরে ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। এসময় দৈনিক আজাদ স্থানান্তরিত হয়ে ঢাকায় আসলে তিনি এই পত্রিকার সহসম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি দৈনিক সংবাদ (১৯৫১), সাপ্তাহিক কাফেলা, মাসিক সওগাত, মহিলা সাপ্তাহিক বেগম পত্রিকায় গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত ফ্রাঙ্কলিন বুক প্রোগ্রামসের বাংলা বইয়ের অনুবাদ সম্পাদক হিসেবে তিনি কাজ করেন। পরে তিনি ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি দৈনিক সংবাদের ছোটদের সাহিত্য পাতা খেলাঘর–এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন এবং তিনি ‘ভাইয়া’ নামে এই পাতা পরিচালনা করতেন। এছাড়া ‘বাগবান‘ নামে দৈনিক আজাদের ছোটদের পাতা ‘মুকুলের মাহফিল‘ পরিচালনা করতেন। তিনি কবিতার পাশাপাশি শিশুসাহিত্য চর্চায় বেশ মনোনিবেশ করেন। তার রচিত কাব্যগ্রন্থ উপাত্ত ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়। একই বছর তিনি অনুবাদ করেন চীনা প্রেমের গল্প, জন কেনেডি, জীবনের জয়গান, পাল তুলে দাও এবং সম্পাদন করেন কিশোর সংকলন সপ্তডিঙ্গা। এছাড়া তিনি ‘আগডুম–বাগডুম’ (প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড), ‘সাগর পারের রূপকথা, ‘বিজন বনের রাজকন্যা’, ‘লেজ দিয়ে যায় চেনা’, ‘বনে বাদাড়ে, ‘পুতুলের মিউজিয়াম’, ‘গল্পের ফুলঝুরি, ‘হীরা মতি পান্না’, ‘বনমোরগের বাসা, এর মধ্যদিয়ে শিশুসাহিত্যে বিশেষ এক স্থান দখল করে আছেন। তিনি অনুবাদ সাহিত্যেও অবদানের স্বাক্ষরস্বরূপ ‘চীনা প্রেমের গল্প’, ‘জন কেনেডি’, ‘জীবনের জয়গান’, ‘পাল তুলে দাও’ অনুবাদ করেন। হাবীবুর রহমান ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে শিশুসাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। তার স্মরণে হাবীবুর রহমান স্মৃতি পরিষদ ‘কবি হাবীবুর রহমান শিশুসাহিত্য পুরস্কার‘ প্রচলন করেন। হাবীবুর রহমান ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ জুন মৃত্যুবরণ করেন।