রাঙ্গুনিয়ায় গভীর নরম কাদা থেকে উদ্ধারের দুদিন পর আবারও অন্য একটি খাদে পড়ে গিয়েছিল একটি বন্যহাতি। এরপর হাতিটিকে উদ্ধার শেষে চিকিৎসা শুরু করে বনবিভাগ। পাশাপাশি এলাকার জনসাধারণও হাতিটিকে খাবার দেয়া থেকে শুরু করে নানা যত্ন চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে হাতিটি। এলাকাবাসীর পরম যত্নের কারণে বন্যহাতি ও এলাকাবাসীর মাঝে গড়ে উঠেছে গভীর সখ্যতা। এমনকি বনে ছেড়ে দেয়া হলেও হাতিটি বার বার এলাকায় ফিরে আসছে। স্থানীয় জনসাধারণও হাতিটির সাথে মেতে উঠছেন নানা খুনসুটিতে, ছবি তুলে দিচ্ছেন ফেসবুকেও।
বনবিভাগের রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জের কোদালা বিট কর্মকর্তা নবীন ধর জানান, গত ৩০ এপ্রিল ১০ ফিট নরম কাদামাটিতে আটকে গিয়েছিল মধ্যবয়সী একটি বন্যহাতি। উপজেলার শিলক ইউনিয়নের চা বাগানের পাদদেশে ধইল্যাঘোনা বিলে এই ঘটনা ঘটে। এরপর এলাকাবাসীর সহযোগিতায় এটি উদ্ধারের দুদিন পর পাশের আরেকটি গভীর নরম মাটির খাদে পড়ে যায় হাতিটি। সেখান থেকে উদ্ধারের পর হাতিটি একেবারে দুর্বল হয়ে পড়ে। শরীরের একাধিক স্থানে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। খাবার খেতে পারছিল না হাতিটি। আমরা হাতিটির চিকিৎসা শুরু করি।
তাকে স্যালাইন, ক্ষতের স্থানে ঔষধ সেবনসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিলে কয়েকদিনের মধ্যে স্বাভাবিক খাবার খাওয়া শুরু করে। এ সময় এলাকার জনসাধারণও হাতিটিকে খাবার খাওয়ানো শুরু করে। একপর্যায়ে হাতিটিকে ছেড়ে দেয়া হলে এটি বার বার এলাকায় ফিরে এসে মানুষের দেয়া খাবার গ্রহণ করছিল। বন্যহাতিটি পালিত হাতির মতো সবার সাথে মিশে গেছে। তবে গত দুদিন ধরে হাতিটির খাবার খেতে সমস্যা হচ্ছে আবারও। তাই এটির উন্নত চিকিৎসার জন্য আমরা মেডিকেল টিম গঠন করে বিশেষ চিকিৎসা শুরু করার উদ্যোগ নিয়েছি। এজন্য ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষ ইতিমধ্যেই হাতিটিকে দেখে গেছে।
এদিকে গতকাল বুধবার সকালে সরেজমিনে উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড হরিহয় গ্রামে গেলে কথা হয় স্থানীয় নাজিম উদ্দীন নামে এক ব্যক্তির সাথে। তিনি জানান, হাতিটিকে সাধারণ মানুষ নিয়মিত খাবার দিয়েছে। বনবিভাগ চিকিৎসা দিয়েছে। এটি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠছে। এলাকার মানুষের সাথে হাতিটির সখ্যতা গড়ে ওঠছে। সবাই হাতিটির কাছে গিয়ে খাবার দিচ্ছে, যত্ন নিচ্ছে। এটিও পালক হাতির মতো সবার সাথে মিশে গেছে। বনে গেলেও বার বার ফিরে আসছে এলাকায়।
ইমরান হোসেন সাকিব নামে অপর একজন বলেন, উদ্ধার হওয়া আহত হাতিটি বর্তমান পদুয়া ইউনিয়নের হরিহর গ্রামের চা বাগানের পাদদেশে বন ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এবং স্থানীয় মানুষের সহায়তায় চিকিৎসাধীন আছে। হাতিটির সাথে মানুষের বেশ সখ্যতা গড়ে ওঠেছে। তবুও খাবার দেওয়ার সময় স্থানীয় একজন আক্রমণের শিকার হয়েছে হাতিটির। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
বন বিভাগের রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মাসুম কবির বলেন, হাতির আক্রমণে আহত ব্যক্তিকে তার পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। অসুস্থ হাতিটিকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।