হঠাৎ বড় লোক হতে আয়াতকে অপহরণ

২০ লাখ টাকা মুক্তিপণের পরিকল্পনা, সামাল দিতে না পেরে খুন দুজনের বিরুদ্ধে পৃথক চার্জশিট-দোষীপত্র

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১০ অক্টোবর, ২০২৩ at ৬:০৫ পূর্বাহ্ণ

হঠাৎ বড় লোক হতে অপহরণ করে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণের পরিকল্পনা। অপহরণ প্রচেষ্টা সফলও হয়। কিন্তু মুক্তিপণ চাইতে গিয়ে বাধে বিপত্তি। যে সিম দিয়ে মুক্তিপণের জন্য ফোন করার কথা ছিল সেটি কাজ না করাই এবং পুরো বিষয়টি সামাল দিতে না পেরে পাঁচ বছরের শিশু আলিনা ইসলাম আয়াতকে ছয় টুকরা করে খুন করা হয়। নির্মম এ হত্যাকাণ্ডে ভারতীয় সিরিয়াল ক্রাইমপেট্রোল ও সিআইডিকে অনুসরণ করা হয়। এমন কী এভিডেন্স নষ্ট করার কৌশলও এসব সিরিয়াল থেকে আয়ত্ব করা হয়েছে বলেও চার্জশিটে বলা হয়। গত রবিবার চট্টগ্রাম আদালতে দুজনকে অভিযুক্ত করে পিবিআইয়ের দেওয়া পৃথক চার্জশিট ও দোষীপত্রে উঠে আসে এসব তথ্য। অভিযুক্ত দুজন হলেন, রংপুরের বাসিন্দা ও নগরীর ইপিজেড থানার দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের নয়ারহাটে থাকা শিশু আয়াতের পরিবারের ভাড়াটিয়া আবীর আলী ও তার বন্ধু হাসিব। হাসিব নয়ারহাট এলাকার ‘ভাই ভাই হোটেলের’ মেসিয়ার হিসেবে কাজ করতো। একই এলাকার সাইফুল কলোনিতে ব্যাচেলর বাসায় ভাড়ায় থাকতো। আবীর আলী প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় তার বিরুদ্ধে চার্জশিট ও হাসিব অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় তার বিরুদ্ধে দোষীপত্র দেওয়া হয়েছে। গত রবিবার তদন্তের ১১ মাস পর দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পৃথক চার্জশিট ও দোষীপত্র জমা দিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পিবিআই পরিদর্শক মনোজ কুমার দে।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) আরফাতুল ইসলাম আজাদীকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, শিশু আয়াত খুনে দুইজন জড়িত। এর মধ্যে আবীর প্রাপ্ত বয়স্ক এবং অপরজন হাসিব অপ্রাপ্ত বয়স্ক। এ জন্য তাদের বিরুদ্ধে পৃথকভাবে চার্জশিট ও দোষীপত্র দেওয়া হয়েছে। হাসিবের বিচার কার্যক্রম চলবে শিশু আদালতে।

প্রসিকিউশন আরফাতুল ইসলাম বলেন, তদন্তে জড়িত থাকার প্রমাণ না পাওয়ায় আবীরের মা আলেয়া বেগম, বাবা আজহারুল ইসলাম ও বোনকে চার্জশিট থেকে বাধ দেওয়া হয়েছে। চার্জশিটে বলা হয়, মূলত হতাশা থেকে এবং হঠাৎ বড় লোক হতে আয়াতকে অপহরণ করে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণের পরিকল্পনা করে আবীর। কিন্তু যে সিম দিয়ে আবীর আয়াতের বাবাকে মুক্তিপণের জন্য ফোন দিতে চেয়েছিল সেটি কাজ না করাই বিপত্তিতে পড়তে হয়। কোনোভাবেই বিষয়টি সামাল দিতে না পেরে এপর্যায়ে শ্বাসরোধ করে আয়াতকে খুন করা হয়।

আদালতসূত্র জানায়, ইপিজেডের নয়ারহাটের বাসা থেকে পাশের মসজিদে আরবি পড়তে গিয়ে ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর নিখোঁজ হয় শিশু আয়াত। এ ঘটনায় তখন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে আয়াতের বাবা। তদন্তে নামে থানা পুলিশের পাশাপাশি পিবিআইও। ২৫ নভেম্বর পিবিআই জানায়, শিশু আয়াতের খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মুক্তিপণের জন্য তাকে অপহরণ করেছে আয়াতদের ভাড়াটিয়া আবীর। তাকে সহযোগিতা করে তার বন্ধু হাসিব। একপর্যায়ে সামাল দিতে না পেরে আয়াতকে ছয় টুকরা করে খুন করা হয়। পিবিআই আরো জানিয়েছিল, প্রায় ছয় মাস ধরে শিশুটির পরিবারের ভাড়াটিয়া আবীর ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে আয়াতকে অপহরণ করে। হত্যার পর মরদেহ বাবার বাসা থেকে মায়ের বাসায় বাজারের ব্যাগে করে নিয়ে যাওয়ার একটি সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশের হাতে এলে সে সূত্র ধরে ঘটনার অনুসন্ধান শুরু করে পিবিআই।

আরো বলা হয়, অভিযুক্ত আবীরের বাবামা আট মাস আগে আলাদা হয়ে যায়। এ সময় বাবা এখানে থাকলেও মা পকেট গেট এলাকায় বাসা ভাড়া করে থাকেন। ঘটনার দিন আয়াত আরবি পড়তে যাওয়ার আগে অপহরণের উদ্দেশ্যে আবির তাকে একবার কোলে নেয়। কিন্তু লোকসমাগম থাকায় সেবার ব্যর্থ হয়। এর কিছুক্ষণ পরে কৌশলে আয়াতকে তাদের বাসায় নিয়ে যায়। এ সময় তার মুখ চেপে ধরলে ১০ মিনিটের মধ্যেই মারা যায় আয়াত। এ সময় আবীর বাজারের ব্যাগে করে মরদেহ তার মায়ের নতুন বাসায় নিয়ে যায় এবং সেখানে সানসেটের ওপর রাখে। এরপর বাজার থেকে এন্টিকাটার এনে আয়াতের মরদেহ ছয় টুকরো করে সাগরে ভাসিয়ে দেয়।

আদালতসূত্র জানায়, ১৬ নভেম্বর সকালে লাশের তিনটি টুকরা নগরীর আকমল আলী রোডের শেষপ্রান্তে বেড়িবাঁধের পর আউটার রিং রোড সংলগ্ন বেটার্মিনাল এলাকার সাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হয় এবং একই দিন রাতে বাকি তিন টুকরা আকমল আলী রোডের শেষপ্রান্তের একটি নালায় স্লুইচগেটের প্রবেশমুখে ফেলে দেয় আবির। পরে আবীরের দেওয়া তথ্যে ৩০ নভেম্বর আকমল আলী রোডের শেষপ্রান্তে নালা সংলগ্ন স্লুইচগেট এলাকা থেকে আয়াতের বিচ্ছিন্ন দুই পায়ের অংশ এবং পরদিন খণ্ডিত মাথা উদ্ধার করে পিবিআই। নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) আরাফাতুল ইসলাম বলেন, মামলার ধার্য তারিখে পিবিআইয়ের দেওয়া চার্জশিট আদালতের কাছে উপস্থাপন করা হবে। অন্যদিকে দোষীপত্রটি শিশু আদালতে প্রেরণ করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৯১ শিশু নিহত