হকার সমস্যা নিয়ে স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত বহু সভা-সমাবেশ, এমনকি একাধিক মহান জাতীয় সংসদেও এই বিষয়ে বিভিন্ন মাননীয় সাংসদবৃন্দ বক্তব্য তুলে ধরেছেন। বিভিন্ন সরকারের সময় মাননীয় মন্ত্রী, এমপি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ হকার সমস্যা সমাধানে নানাভাবে নিজেদের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। এই চট্টগ্রামের সাবেক মন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মরহুম জননেতা জহুর আহমদ চৌধুরীর মহানুভবতায় জহুর হকার্স মার্কেট নামকরণে তৎসময়ে একটি হকার মার্কেটও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যা আজও নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার একমাত্র ভরসাস্থল। কৃতজ্ঞচিত্তে প্রিয় নেতাকে স্মরণ করি। বর্তমান সময়ের জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে তা অপ্রতুল। সে তুলনায় ঢাকায় বিশটিরও বেশি হকার মার্কেট নির্মিত হয়েছে বলে ধারণা করি। বীর চট্টলার সিংহ পুরুষ সাবেক মেয়র মরহুম জননেতা এ.বি.এম মহিউদ্দিন চৌধুরীও হকার সমস্যা সমাধানে অনেক কার্যক্রম পরিচালনা করেছিলেন। সদ্য সাবেক মেয়র চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগের সম্মানিত সাধারণ সম্পাদক জননেতা আ.জ.ম নাছির উদ্দিন সাহেবের প্রচেষ্টা চট্টগ্রামের হকার সমাজ কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ রাখবেন। তিনি চট্টগ্রামের প্রতিনিধিত্বশীল হকার সংগঠনের নেতাদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করে হকার সমস্যা সমাধানে কার্যকরী উদ্যোগও নিয়েছেন। হকাররা যাতে তাদের জীবন জীবিকা চলমান রেখে, যেন ফুটপাতের এক পাশে ব্যবসা করে পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে, সে জন্য চট্টগ্রামের হকারদের স্ব স্ব অবস্থানে শৃঙ্খলার সঙ্গে ব্যবসা করতে পারে, নগরবাসীর যাতে চলাচলে বড় ধরনের অসুবিধা না হয়, একটি সময়সীমাও নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। এমনকি হকার সমস্যার স্থায়ী সমাধানকল্পে চট্টগ্রামের হকারদের অবস্থানরত ফুটপাতগুলোতে কর্পোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দিয়ে সরেজমিনে একটি হকার তালিকা স্ব স্ব সংগঠনের কাছ থেকে নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের দপ্তরে জমা করেছেন। আমার মনে হয় তা আজও সিটি কর্পোরেশনে রক্ষিত আছে। উদ্দেশ্য ছিল হকারদের আইডি কার্ড প্রদানের মধ্য দিয়ে প্রকৃত হকার তালিকা প্রণয়ন করা। সে অনুযায়ী প্রায় ৮৫৯৯ জন হকার তালিকা প্রস্তুত করে কর্পোরেশনের দপ্তরে রেখেছিলেন। দায়িত্বের সময় স্বল্পতার কারণে হয়তো বাস্তবায়ন করা তা সম্ভব হয়নি। চট্টগ্রামের হকার সমাজ তাঁর কাছেও কৃতজ্ঞ। সেই ক্ষেত্রে একজন মাননীয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সানজদিা শারমিনের ভূমিকাকে চট্টগ্রামের হকার সমাজ কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণে রাখবে। আমি দীর্ঘদিন হকারি পেশার সাথে যুক্ত আছি বলে হকারদের সমস্যার বাস্তব ভিত্তিক মাঠ পর্যায়ে অবলোকন করেছি। সংগত কারণেই আমার মনে হয় এই সমস্যার একটি স্থায়ী ও গ্রহণযোগ্য সমাধান হওয়া সময়ের দাবি। জাতীয় স্বার্থে এই দেশের বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে হকারি পেশার আইনগত ভিত্তি দিয়ে (জাতীয় হকার নীতিমালা) প্রণয়ন করলে লক্ষ লক্ষ বেকার জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থানে সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে মনে করি, যা- জাতীয় অর্থনীতিতেও সুফল বয়ে আনতে পারে। তাই হকার সমস্যাকে আমি মনে করি এটি একটি জাতীয় সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানে বিগত সময়ে ক্ষুদ্র একজন হকার প্রতিনিধি হিসেবে যেখানে সুযোগ পেয়েছি, সভা সমাবেশ ও লেখার মাধ্যমে ‘হকার সমস্যা সমাধানে- জাতীয় হকার নীতি মালা চাই’ শিরোনামে বলার চেষ্টা করেছি। উল্লেখিত শিরোনামে গত ২ জানুয়ারি ২০২১ পত্রিকান্তরে হকার সমস্যা সমাধানে কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা দিয়ে আমার লেখাও প্রকাশ হয়। বর্তমানে নগরবাসীর বিপুল ভোটে গণরায়ে আমাদের প্রিয় নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা জননেতা রেজাউল করিম চৌধুরী সাহেব নগর পিতা হিসেবে মাননীয় মেয়রের দায়িত্বে আছেন। হকার সমাজের পক্ষ থেকে আমি আপনার সর্বাঙ্গীন সফলতা কামনা করি। পাশাপাশি হকার সমস্যা সমাধানে হকারদের অভিভাবকের ভূমিকা প্রত্যাশা করি। আপনার নির্বাচনী সভ তথা হকার শ্রমিকদের বিভিন্ন সভা সমাবেশেও হকারদের পুনর্বাসন না করে, উচ্ছেদ না করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। আপনার দায়িত্ব গ্রহণকালটা ছিল দুর্ভাগ্যবশত খুবই একটা ক্রান্তিকাল। সারা বিশ্ব করোনা মহামারি নামক ঘাতক ব্যাধিতে দিশেহারা, বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সহ মানুষের জীবন জীবিকা স্বাভাবিক গতিপথ হুমকির সম্মুখীন ছিল। এমতাবস্থায় আমাদের প্রিয় নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে মহান আল্লাহর রহমতে বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়া সত্ত্বেও প্রিয় নেত্রীর বিচক্ষণ নেতৃত্বে সেই দুর্যোগময় ক্রান্তিকাল অতিক্রম করে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ তার স্বাভাবিকতায় ফিরে আসছে। কিন্তু চট্টগ্রামসহ সারা বাংলাদেশের হকার সমাজ মহামারি করোনার ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার মত কোনো অবলম্বন পাওয়ার মত সম্পদ হকার সমাজের নেই।
একমাত্র চট্টগ্রামের ভাসমান হকাররা স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে অদ্যাবধি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে গড়ে ওঠা জাতীয় নেতা শ্রদ্ধাভাজন মরহুম জহুর আহমদ চৌধুরী থেকে শুরু করে ধারাবাহিকভাবে বর্তমান সময়ে মাননীয় মেয়রের দায়িত্বে জাতির জনকের আদর্শের উত্তরসূরি হিসাবে আপনাকে পেয়ে নগরবাসীর পাশাপাশি আমরাও গর্বিত। আমরা হকাররাও এদেশের নাগরিক হিসেবে বিকল্প কোনো কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় ফুটপাত ঘিরে আমাদের নিজস্ব ক্ষুদ্র পুঁজি বিনিয়োগ করে হাজার হাজার হকার পরিবার জীবন-জীবিকা নির্বাহ করি। মাননীয় মেয়র, আপনি নগর পিতা। ইতিমধ্যে আমরা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, চট্টগ্রাম শহরের ফুটপাতকে পরিকল্পিতভাবে শৃঙ্খলা আনার উদ্যোগ আপনি নিচ্ছেন। এমতাবস্থায় সাবেক মেয়র মহোদয় চট্টগ্রামের হকারদের জন্য একটি নীতিমালা করার আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। যা পূর্বেও উল্লেখ করেছি। ছবি ও ভোটার আই.ডি কার্ডের ফটোকপিসহ প্রায় ৮৫০০ জন হকারের একটি তালিকা প্রস্তুত করেছিলেন। চট্টগ্রাম নগরীর সৌন্দর্যবর্ধনের সাথে সংগতি রেখে হকারদের চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক আইডি কার্ড দিয়ে, হকার পুনর্বাসনের নীতিমালা প্রণয়ন করার উদ্যোগও নিয়েছিলেন। যা বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম থেকেই হকার পুনর্বাসনের এই উদ্যোগ সারা বাংলাদেশে উদাহরণ হিসেবে গণ্য হতো বলে বিশ্বাস করি। মাননীয় মেয়র, আমরা আশা করি আপনার মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকেই হকার সমস্যার একটি স্থায়ী রূপরেখা চট্টগ্রামে প্রতিনিধিত্বশীল হকার সংগঠনের নেতা, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, পরিবেশবিদসহ নগর সংশ্লিষ্ট বুদ্ধিজীবীদের সমন্বয় করে, নগরীতে হকারদের অবস্থানরত ফুটপাতগুলো আয়তন নির্ণয় করে এক পাশে পথচারীর যাতায়াত অন্য পাশে হকারদের জন্য কিছু অংশ সিম্পল ডিজাইনের মধ্যে দিয়ে নগর সৌন্দর্য বর্ধনের পাশাপাশি হকারদের ও জীবন-জীবিকা নির্বাহ করার মধ্যে দিয়ে হাজার হাজার হকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব বলে মনে করি। বিনীতভাবে আবেদন, আপনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার শ্রমবান্ধব সরকারখ্যাত এই নীতির সাথে সংগতি রেখে চট্টগ্রামসহ সারা বাংলাদেশের অবহেলিত হকারদের সমস্যা স্থায়ী ভাবে সমাধানকল্পে চট্টগ্রাম থেকেই ‘জাতীয় হকার নীতিমালা’ প্রণয়ন করুন।
লেখক : সভাপতি, চট্টগ্রাম ফুটপাত হকার্স সমিতি, রেজি: নং- চট্ট-১৬১৪