সড়ক দুর্ঘটনায় একদিনে ৭ মৃত্যু

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার

আজাদী ডেস্ক | সোমবার , ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৬:৫৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে সড়ক দুর্ঘটনায একদিনে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফ ও চট্টগ্রামের পটিয়ায় পৃথক মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় এক নারীসহ ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। চন্দনাইশে বাসের ধাক্কায় নিহত হয়েছেন এক বাইসাইকেল আরোহী। এছাড়া বাঁশখালী ও মীরসরাই উপজেলায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।

শালাদুলাভাইসহ নিহত ৩ : কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ সড়কে কাভার্ডভ্যানের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে মোটরসাইকেলের তিন আরোহী নিহত হয়েছেন। গতকাল রোববার বেলা ৩টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই দুইজন মারা যান, সন্ধ্যার দিকে কক্সবাজার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মৃত্যু হয় একজনের। ঘটনাস্থলে নিহতরা হলেন টেকনাফের সাবরাং কাটাবনিয়ার মৃত নুনু মিয়ার ছেলে সাইফুল ইসলাম (২২) এবং কক্সবাজার শহরের সমিতি পাড়ার আমির হামজার ছেলে আব্দুর রব (২৫)। তারা সম্পর্কে শালাদুলাভাই। হাসপাতালে নিহত সাদ্দাম হোসেন (২৪) মহেশখালীর মাতারবাড়ি মাঝেরডেইল এলাকার আবু তালেবের পুত্র।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একটি মোটরসাইকেলে তিনজন ঘুরাঘুরি করছিলেন। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি কাভার্ডভ্যানের সাথে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ সময় কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় মোটরসাইকেলটি দুমড়ে মুচড়ে যায় এবং তিন আরোহী মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন। এতে দুইজন ঘটনাস্থলেই মারা যান। অন্যজন গুরুতর আহত হন। পরে তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

টেকনাফ মডেল থানার ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নুর বলেন, নিহতদের মরদেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

ভাইয়ের বাইক থেকে ছিটকে মৃত্যু : পটিয়া প্রতিনিধি জানান, ভাইয়ের বাইক থেকে ছিটকে প্রাণ হারালেন পটিয়া উপজেলার জিরি ইউনিয়নের কৈগ্রাম এলাকার রুহুল আমিনের কন্যা রাফেজা সুলতানা উর্মি (৪০)। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রামকক্সবাজার মহাসড়কের উপজেলার জঙ্গলখাইন ইউনিয়ন পরিষদের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, ভাইয়ের সাথে মোটরসাইকেলে করে পটিয়া সদরে যাওয়ার সময় সড়কের গতিরোধকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উর্মি ছিটকে পড়ে যান। এ সময় দ্রুতগামী একটি কাভার্ডভ্যানের নিচে চাপা পড়ে তার একটি পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে পটিয়া ফায়ার সার্ভিস তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে যায়।

পটিয়া ক্রসিং হাইওয়ে পুলিশের ওসি জসীম উদ্দীন জানান, ভাইয়ের মোটরসাইকেলে করে পটিয়া সদরে যাওয়ার সময় গতিরোধকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে গাড়ি চাপায় উর্মি মারা গেছেন। গতকাল রাতে এ ঘটনায় পটিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বাসের ধাক্কায় বাইসাইকেল আরোহীর মৃত্যু : চন্দনাইশ প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রামকক্সবাজার মহাসড়কে চন্দনাইশের গাছবাড়িয়া কলেজ গেইট পেট্রোল পাম্পের সামনে দ্রুতগতির যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল এক বাইসাইকেল আরোহীর। তার নাম মহিবুল ইসলাম (১৭)। এ ঘটনায় তুষার (১৮) নামে আরো এক বাইসাইকেল আরোহী গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গতকাল রোববার সন্ধ্যা ৬টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা মহাসড়ক অবরোধ করে এবং ঘাতক বাসটি ভাংচুর করে। এ সময় প্রায় আধঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।

জানা যায়, চট্টগ্রামগামী একটি যাত্রীবাহী বাস ওভারটেক করতে গিয়ে দুটি বাইসাইকেলকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে বাইসাইকেল আরোহী মহিবুল ইসলাম ও তুষার গুরুতর আহত হয়। এ সময় স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কতর্ব্যরত চিকিৎসক মহিবুলকে মৃত ঘোষণা করেন এবং তুষারকে গুরুতর অবস্থায় চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করেন। তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক। ঘাতক বাস চালক হানিফকে (৪৫) আটক করে পুলিশে দেয় স্থানীয়রা। তিনি নীলফামারী জেলার সদর নীলফামারী শান্তিনগর এলাকার মৃত মাহতাব উদ্দীনের ছেলে। খবর পেয়ে আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে প্রায় আধঘণ্টা পর মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। নিহত মহিবুল চন্দনাইশের হাশিমপুর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড খুনিয়ারপাড়ার ফখরুদ্দিন চৌধুরীর ছেলে এবং আহত মো. তুষার একই এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে। তারা গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজের ছাত্র বলে জানা গেছে।

দোহাজারী হাইওয়ে থানার ওসি মাহাবুব আলম জানান, ঘাতক বাসের চালক আটক রয়েছে। এ ব্যাপারে মামলা প্রক্রিয়াধীন।

বাঁশখালী : বাঁশখালী প্রতিনিধি জানান, পৌরসভার মিয়ারবাজার এলাকায় গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে ট্রাক চাপায় মো. রিয়াদ (১৫) নামে এক তরকারি ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। নিহত রিয়াদ বাঁশখালী পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের রুহুল্লা পাড়া এলাকার তরকারি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মনসুরের পুত্র।

জানা যায়, গতরাত সাড়ে ৮টার দিকে মিয়ার বাজারে দোকান থেকে নাস্তা খেয়ে তরকারির দোকানে যাওয়ার সময় হঠাৎ পা পিছলে ট্রাকের নিচে পড়ে যান মো. রিয়াদ। এ সময় তার মাথা থেতলে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বাঁশখালী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক রিয়াদকে মৃত ঘোষণা করেন।

বাঁশখালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শুধাংশু শেখর হাওলাদার বলেন, ট্রাক চালকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মীরসরাই : মীরসরাই প্রতিনিধি জানান, মীরসরাই উপজেলায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি কাভার্ডভ্যানের পেছনে দ্রুতগামী বাসের ধাক্কায় বাস চালকের সহকারী ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছেন। ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়কে এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত আরও ১০ জন। গতকাল সকাল ৭টার দিকে উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের দক্ষিণ সোনাপাহাড় এলাকায় ঢাকামুখী লেনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত বাস হেলপারের নাম মোহাম্মদ মুরাদ (২৫)। তিনি কক্সবাজারের চকরিয়ার হারবাং মুসলিমপাড়ার জামাল হোসেনের ছেলে।

জানা যায়, কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা সৌদিয়া পরিবহনের একটি এসি বাস ভোরে কাভার্ডভ্যানটিকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই মুরাদ নিহত হন। আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে মীরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে দুইজনকে পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহতরা হলেন দিনাজপুর সদরের সোহেল রানা (৩৫), চট্টগ্রামের চকবাজার এলাকার সাইদুল ইসলাম (২৮), নোয়াখালীর সোনাইমুড়ির আব্দুল মোমেন (৪৮), লক্ষ্মীপুরের নুর আলম (৪৩), পাবনার সোহেল রানা (৩৮), সিরাজগঞ্জের আব্দুল কাদের (৩৪) ও মিজানুর রহমান (৫০), শরিয়তপুরের রিপন মন্ডল (৩৪) এবং মাগুরার রবিউল হোসেন (৩৬)

আহত যাত্রী নুর আলম বলেন, আমরা ১৯ জন মিলে কক্সবাজার ঘুরতে গিয়েছিলাম। ভোরে ঘুমের মধ্যে হঠাৎ জোরে ধাক্কা লাগে। অনেকে জানালা ভেঙে বের হয়, বাকিদের ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার করে।

মীরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত চিকিৎসক ফাহিম ফেরদৌস বলেন, আহতদের মধ্যে দুজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আশঙ্কামুক্ত আছেন। জোরারগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বোরহান উদ্দিন বলেন, কাভার্ডভ্যানটি দাঁড়িয়ে ছিল। বাস ধাক্কা দিলে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মুরাদের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দুর্ঘটনার কারণে মহাসড়কে কিছু সময় যান চলাচল ব্যাহত হলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই যানচলাচল স্বাভাবিক করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদিনভর লেনদেন বন্ধ, বিক্ষুব্ধদের থামাতে পুলিশের লাঠিচার্জ, আহত ৭
পরবর্তী নিবন্ধখাগড়াছড়ি ও গুইমারার ঘটনা সম্পর্কে সেনাবাহিনীর বিবৃতি