সড়কে ফের ব্যাটারি রিকশা

পুলিশকে ম্যানেজ করে বিশেষ টোকেনে চালানোর অভিযোগ

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১৪ অক্টোবর, ২০২০ at ৫:২৭ পূর্বাহ্ণ

নগরীর বিভিন্ন সড়কে ফের অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা নেমেছে। এসব রিকশা ঘিরে পুলিশসহ বিভিন্ন ব্যক্তি সংগঠনের নামে চাঁদা তোলারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম মহানগরী রিকশা মালিক পরিষদ নামে সংগঠনটির সাম্প্রতিক তথ্যমতে, বর্তমানে নগরীর হালিশহর, পাহাড়তলী, চান্দগাঁও, খুলশী, বায়েজিদ ও বাকলিয়া থানা এলাকায় অন্তত ১৭টি সড়কে ব্যাটারি রিকশার অবাধ চলাচল রয়েছে। এর মধ্যে হালিশহর ও পাহাড়তলী থানা এলাকায় ফইল্যাতলী বাজার থেকে সবুজবাগ পেট্রোল পাম্প, শাহজাহান বেকারি, কলেজ রোড থেকে সাগরপাড়, সাগরিকা রোড, বাইন্যাপাড়া, বেপারি পাড়া, বিল্লাপাড়া পর্যন্ত, চান্দগাঁও থানায় মৌলভী বাজার, কালুরঘাট ব্রিজ, সিএন্ডবি, উসমানিয়া পুল, খুলশী থানায় জালালাবাদ, ওয়ার্লেস, সেগুন বাগান, মামা-ভাগিনার মাজার, ঝাউতলা, আমবাগান, পলিটেকনিক মোড় পর্যন্ত, বায়েজিদে কুলগাঁও আবাসিক, অক্সিজেন মোড়, আতুরার ডিপো, চন্দ্রনগর, টেক্সটাইল, আরেফিন নগর, বাংলা বাজার, আরেফিন নগর, রৌফাবাদ, বাংলাবাজার, বাকলিয়া থানা এলাকার ধনিরপুল, সৈয়দ শাহ রোড, কোরবানীগঞ্জ, কালামিয়া বাজারসহ আরও বিভিন্ন সড়কে অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশার চলাচল রয়েছে। একটি সিন্ডিকেট পুলিশকে ম্যানেজ করে বিশেষ টোকেনের মাধ্যমে এসব ব্যাটারি রিকশা সড়কে নামাচ্ছে।
চট্টগ্রাম মহানগরী রিকশা মালিক পরিষদের উপদেষ্টা নজরুল ইসলাম সরকার আজাদীকে বলেন, সম্প্রতি শহরের বিভিন্ন রাস্তায় যেভাবে ব্যাটারি রিকশার চলাচল বেড়েছে, তা দেখে মনে হচ্ছে এসব রিকশা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। আদালতের রায় অমান্য করে এসব ব্যাটারি রিকশার চলাচল বন্ধে প্রশাসনের কোনো তৎপরতাও দেখা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি। এসব রিকশা নিয়ে মোটা অংকের চাঁদাবাজিও চলছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। পুলিশ ও বিভিন্ন সিন্ডিকেটের নাম দিয়ে দৈনিক হাজার হাজার টাকা এসব রিকশা থেকে তোলা হচ্ছে। ‘আমাদের কাছে তথ্য আছে, শুধু হালিশহরে একটি সিন্ডিকেট দৈনিক আড়াই হাজার টাকা এই ব্যাটারি রিকশা থেকে আদায় করছে। বিভিন্ন থানায় এসব টাকা উত্তোলনের পরিমাণ কোথাও দ্বিগুন আবার কোথাও কম হতে পারে বলে জানান তিনি।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মো. মুজিবুর রহমান আজাদীকে বলেন, বর্তমানে পুরো শহর জুড়ে কয়েক হজার ব্যাটারি রিকশা চলাচল করছে। হালিশহর ও পাহাড়তলী সড়কে অন্তত ৩ হাজার ব্যাটারি রিকশা চলাচল করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের আগস্টে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই এসব ব্যাটারি রিকশা সড়কে নামানো হয়। এরপরেই নিয়ন্ত্রণহীন গতির কারণে বিভিন্ন সময় যাত্রীদের দুর্ঘটনায় পড়া, বিদ্যুৎ চুরিসহ নানা অভিযোগ উঠে এসব রিকশার বিরুদ্ধে। অবৈধভাবে ব্যাটারি রিকশা চলাচল করায় সিটি কর্পোরেশনকে কোটি টাকার উপর রাজস্ব দেয়া সাধারণ প্যাডেল চালিত রিকশাগুলোর আয়ের পথ প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। পরে একটি রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ২৯ এপ্রিল নগরীতে ব্যাটারি রিকশা চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এরপর পুলিশ কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে সড়ক থেকে এসব রিকশা তুলে দেয়। কিন্তু অভিযানের কিছুদিন বাদে আবারও অবৈধভাবে চলাচল শুরু করে এসব রিকশা। অভিযোগ রয়েছে, কিছু অসাধু ট্রাফিক পুলিশসহ স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ে ম্যানেজ করে মালিকেরা এসব ব্যাটারি রিকশা সুযোগ বুঝে নগরীর বিভিন্ন অলিগলিতে চালিয়ে আসছেন।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) শ্যামল কুমার নাথ আজাদীকে বলেন, ব্যাটারি রিকশার বিরুদ্ধে আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান চালাচ্ছি। এসব রিকশা আটক করে জরিমানাও করা হচ্ছে। নগরীতে ব্যাটারি রিকশা শূণ্যের কোঠায় না আসা পর্যন্ত এই ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
পুলিশকে ম্যানেজ করে চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করে অতিরিক্ত কমিশনার জানান, মূল সড়কে ব্যাটারি রিকশা চলে না। যেগুলো চলছে তা বিভিন্ন অলিগলিতে লুকিয়ে চলছে। এসবের বিরুদ্ধে ট্রাফিক পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সময় ট্রাফিক পুলিশ ও থানা পুলিশের যৌথ অভিযানেও এসব ব্যাটারি রিকশার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এসব রিকশা সড়কে নামানোর পেছনে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে সেই যেই হোক তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান অতিরিক্ত কমিশনার শ্যামল কুমার নাথ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিএমপির এক এডিসি ও তিন এসিকে কক্সবাজার এপিবিএনে বদলি
পরবর্তী নিবন্ধমেরিন ফুয়েল বাঙ্কারিং নিয়ে নতুন জটিলতা