চিকিৎসক দেখিয়ে মোটরসাইকেল যোগে বাসায় ফেরার পথে কংক্রিট মিক্সার ট্রাকের ধাক্কায় এক দম্পতির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেল ৫টার দিকে লালখান বাজারের ইস্পাহানী মোড়ের পিটস্টপ রেস্টুরেন্টের সামনে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- ইকবাল উদ্দিন চৌধুরী (৪৭) ও তার স্ত্রী সখিনা ফাতেমী (৩৫)। ইকবাল মীরসরাইয়ের মৃত হারুনুর রশিদের ছেলে ও ফাতেমী পূর্ব ফিরোজশাহ কলোনির মাওলানা সুলতান আহমদ নিজামীর মেয়ে। ইকবাল উদ্দিন চৌধুরী নয়াবাজারের একটি মেশিনারি কোম্পানিতে সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। স্ত্রী সখিনা ফাতেমী ছিলেন উত্তর কাট্টলীর হাজী দাউদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। তাদের ভাড়া বাসা পূর্ব ফিরোজশাহ কলোনি এলাকায়।
ঘটনার ব্যাপারে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল কবির আজাদীকে জানান, ম্যাক্স নামের একটি ঠিকাদার কোম্পানির ট্রাকে পিষ্ট হয় ওই দম্পতি। তাদের উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নেয়া হলে দুজনকেই মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। আমরা ট্রাকটিকে আটক করলেও পলাতক রয়েছে চালক। ওসি বলেন, স্কুল শেষ করে ৩টার দিকে ওয়াসা মোড়ের এক চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন সখিনা ফাতেমী। সেখানে স্বামীকে ফোন করে ডাকেন। পরে দুজনে মোটরসাইকেলে করে বাসার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। এর মধ্যেই ঘটে গেল এ মর্মান্তিক ঘটনা। ফাতেমীর পরিবার সূত্র জানিয়েছে, তারা ৭ বোন, এক ভাই। আট ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ষষ্ট। অন্যদিকে ইকবাল চৌধুরীরা ৭ ভাই, এক বোন। তিনি সবার ছোট। ফাতেমী পড়াশোনা করেছেন হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে। পড়াশোনা শেষ করে তিনি হাজী দাউদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরিতে ঢুকেন। অন্যদিকে ইকবাল চৌধুরী ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে মেশিনারি কোম্পানিতে চাকরি পান এবং শেষ পর্যন্ত ওই চাকরিতেই ছিলেন।
গতকাল সন্ধ্যার পর ফাতেমীদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্বজনরা শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছেন। একেক সময় ঢুকরে কেঁদে উঠছেন একেকজন। ছোট-বড় সবার চোখে পানি। কেউ বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না যে, ইকবাল-ফাতেমী আর বেঁচে নেই। ফাতেমীর খালাতো ভাই মো. জাহিদ বলেন, ফাতেমী খুব ভালো মেয়ে ছিলেন। স্বামীর সঙ্গে মিলমিশ ছিল খুব। তবে কোনো ছেলে-মেয়ে না থাকায় একটু অপূর্ণতায় ভুগতেন।
স্বজনদের স্বান্ত্বনা দিতে বাড়িতে আসেন হাজী দাউদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা কাজী ফেরদৌস জাহান ও অন্য সহকর্মীরা। প্রধান শিক্ষিকা বলেন, ৩টার দিকে আমাকে বলে স্কুল থেকে বের হয়েছিলেন ফাতেমী। ওয়াসা মোড়ের এক চিকিৎসকের কাছে তিনি গিয়েছিলেন। এর মধ্যে শুনি এ খবর। মেনে নিতে পারছি না তার এভাবে চলে যাওয়া। আরেক সহকর্মী রাশেদা বেগম বলেন, খুবই মিশুক প্রকৃতির ছিলেন ফাতেমী। সবসময় পড়াশোনা ও কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াতেন মায়ের আদরে। খুব কষ্ট হচ্ছে তার এমন মৃত্যুতে।