সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে গণপরিবহন চালানো, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা ও স্বাস্থ্যবিধি না মানার অপরাধে একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন অংকের জরিমানা করেছে উপজেলা প্রশাসন। গতকাল সোমবার আনোয়ারা, লোহাগাড়া, রাঙ্গুনিয়া, বাঁশখালীতে এসব অভিযান পরিচালনা করেন নিজ নিজ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। দৈনিক আজাদীর স্থানীয় প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন।
লোহাগাড়ায় স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ৪ জনকে ৫ হাজার ৭শ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল সোমবার সকালে উপজেলা সদর বটতলী মোটর স্টেশনে অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খোরশেদ আলম চৌধুরী। তিনি জানান, করোনা ভাইরাসের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে আনতে ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন। এ সময় স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ৪ ব্যক্তিকে ৫ হাজার ৭শ টাকা জরিমানার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে মাস্ক বিতরণ করা হয়।
অভিযানে সাথে ছিলেন লোহাগাড়া ট্রাফিক বিভাগের ইনচার্জ স্নেহহাংশু বিকাশ সরকার, থানার এসআই সামশুদ্দৌহা, উপজেলা ভূমি অফিসের সমির বরণ চৌধুরী ও নয়ন। আনোয়ারা প্রতিনিধি জানান, আনোয়ারায় সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও স্বাস্থ্যবিধি না মানার অপরাধে উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে ১৯ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে ৫৪ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। গতকাল সোমবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জোবায়ের আহমদ ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর হাসান চৌধুরীর ভ্রাম্যমাণ আদালত এ অভিযান পরিচালনা করে। সরেজমিনে উপজেলার আনোয়ারা সদর, জয়কালী বাজার, চাতরী চৌমুহনীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বড় বড় মার্কেট বন্ধ থাকলেও অলিগলি ও গ্রামীণ সড়কগুলোর পাশে স্থাপিত দোকানপাট খোলা ছিল। সড়কেও যান চলাচল স্বাভাবিক দেখা গেছে। তবে দোকানপাট খোলা রাখার ব্যাপারে জানতে চাইলে একাধিক ব্যবসায়ী জানায়, বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তারা বাধ্য হয়ে দোকান খুলছেন। না হয় পরিবার নিয়ে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হবে।
এদিকে গতকাল সোমবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জোবায়ের আহমেদ ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর হাসান চৌধুরী জয়কালী বাজার, আনোয়ারা সদর, চাতরী চৌমুহনী বাজার, বন্দর সেন্টার ও বটতলী রুস্তম হাট এলাকায় লকডাউন কড়াকড়ি করতে অভিযান পরিচালনা করেন।
ইউএনও শেখ জোবায়ের আহমেদ জানান, সরকারি নির্দেশনা না মেনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও স্বাস্থ্যবিধি না মানার অপরাধে ১৯টি মামলায় ৫৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একই সাথে লকডাউন মানতে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি জানান, মহামারী করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে লকডাউনের প্রথম দিন রাঙ্গুনিয়ায় সড়কে গাড়ি চালানোর দায়ে ১০ সিএনজি অটোরিকশাকে ২ হাজার ৪৭০ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া নির্দেশনা বহির্ভূত দোকান খোলা রাখার দায়ে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। গতকাল সোমবার রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুদুর রহমান ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাজিব চৌধুরী পৃথক এই অভিযান চালান।
ইউএনও জানান, লকডাউন কার্যকর করতে উপজেলার বিভিন্ন স্টেশন, হাটবাজারে এই অভিযান চালানো হয়। অভিযানে লকডাউনের নিষেধাজ্ঞা না মেনে গাড়ি চালানোর দায়ে ১০ সিএনজি অটোরিকশাকে ২ হাজার ৪৭০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি অভিযানে জনসাধারণকে মাস্ক পরাসহ লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে সচেতন করা হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাজিব চৌধুরী জানান, লকডাউনে নির্দেশনা বহির্ভূত দোকান খোলা রাখার দায়ে উপজেলার রোয়াজারহাট, মরিয়মনগর ও লিচুবাগানের বেশ কিছু দোকানের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা মানার মুচলেকা দিলেই পরবর্তীতে তাদের পুনঃসংযোগ দেওয়া হবে। অভিযানে কারিগরি সহযোগিতা দেয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।
বাঁশখালী প্রতিনিধি জানান, বাঁশখালীতে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ২৩টি মামলায় ৩৯ জনকে ৩ হাজার ৯শ টাকা জরিমানা করা হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইদুজ্জামান চৌধুরীর নেতৃত্বে জলদী এলাকায় পরিচালিত মোবাইল কোর্টে এ জরিমানা করা হয়। এ সময় জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি মাস্ক বিহীন জনসাধারণের মাঝে মাস্ক বিতরণ করেন। ইউএনও সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, করোনা মহামারী মোকাবেলায় জনসচেতনতা সৃষ্টিতে বাঁশখালীতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। এসময় স্বাস্থ্যবিধি না মানায় জরিমানার পাশাপাশি মাস্ক বিতরণ করা হয়। এ ধারা অব্যাহত থাকবে।