স্বাস্থ্যখাতে অগ্রগতির জন্য অধিক মনোযোগী হতে হবে

| মঙ্গলবার , ১৮ মার্চ, ২০২৫ at ৪:২৯ পূর্বাহ্ণ

ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) চট্টগ্রাম শাখার উদ্যোগে শুক্রবার অনুষ্ঠিত চিকিৎসক সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশের মানুষের পকেট ব্যয় আফগানিস্তানের চেয়েও খারাপ। আমি ডাক্তারদের বলবো, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের অবস্থা খুবই খারাপ। বাংলাদেশের বর্তমান যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, সেখান থেকে যদি ঘুরে দাঁড়াতে হয় তাহলে আমাদের আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা দরকার। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের এনএইচএস (ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস) মডেলের মতো সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এ সিদ্ধান্ত আমরা পরিপূর্ণভাবে পালন করব। এজন্য ডাক্তারদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমীর খসরু বলেন, দেশে এখন একটি বড় ধরনের পরিবর্তন সবাই প্রত্যাশা করছে। সে পরিবর্তন ডাক্তারদের কাছ থেকেও আসতে হবে। যারা প্র্যাক্টিস করেন, হাসপাতালে আছেন বা যেখানেই আছেন সবাই সহযোগিতা করেন, এ পরিবর্তন সম্ভব। বাজেটে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে জিডিপি এক শতাংশের আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। স্বাস্থ্যখাতে এত কম বাজেট বিশ্বের আর কোথাও নেই। আমরা বলেছি, স্বাস্থ্যখাতে জিডিপি ১ শতাংশ থেকে ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করব। কিন্তু আপনাদের ডাক্তার রাজনীতিবিদদের সংস্কৃতি পরিবর্তন না করলে কোনো কিছু কাজ করবে না। আমাদের মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে, যাতে পরিবর্তনের সঙ্গে আমরা তাল মিলিয়ে চলতে পারি।

সমাবেশে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, বাংলাদেশই হচ্ছে একমাত্র দেশ যেখানে স্বাস্থ্যখাতে বাজেট সবচেয়ে কম। বাজেট মাত্র দুই থেকে তিন শতাংশ। এই বাজেট দশ থেকে বার শতাংশে আসা উচিত। আমরা মনে করি, বিএনপি ক্ষমতায় আসলে স্বাস্থ্যখাতে বাজেট দশ থেকে বার শতাংশ ডাক্তার সমাজকে উপহার দেব।

এদিকে, পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারা দেশের সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত কর্মীদের বিভাগভিত্তিক দৈনিক উপস্থিতি বা হাজিরার হার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ড্যাশবোর্ডে নিয়মিতভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে। এ পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দেশে সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত কর্মীদের গড়ে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ প্রতিদিনই কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকছে।

সাপ্তাহিক কর্মদিবসের শেষদিন গত বৃহস্পতিবারের (১৩ মার্চ) তথ্য অনুযায়ী, এদিন সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের কর্মী সবচেয়ে বেশি উপস্থিত ছিল সিলেট বিভাগে। সেদিন কর্মস্থলে উপস্থিত ছিল বিভাগটির ৬১ দশমিক ৭৪ শতাংশ কর্মী। সবচেয়ে কম ছিল রংপুরে। বিভাগটির ৪৭ দশমিক ১৬ শতাংশ কর্মী সেদিন কর্মস্থলে হাজিরা দিয়েছে। এছাড়া বরিশালে ৫৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৫৭ দশমিক ৫৪, ঢাকায় ৫১ দশমিক ৭৪, খুলনায় ৫৯ দশমিক ৪১, ময়মনসিংহে ৫৮ দশমিক ৭৬ ও রাজশাহীতে ৪৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ কর্মী উপস্থিত ছিল। ওইদিন সারা দেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট ৯২ হাজার ৫৫৩ স্বাস্থ্যকর্মীর তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অনুপস্থিত ছিল ৪১ হাজার ৭২৪ জন বা ৪৫ শতাংশের কিছু বেশি।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, সারা দেশে সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত কর্মীদের উপস্থিতির হার যদি এমন হয়, তাহলে স্বাস্থ্যখাতে খারাপ অবস্থা বিরাজ করা অস্বাভাবিক নয়।

আর্থিকভাবে সচ্ছল ব্যক্তিরা বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারলেও স্বল্প আয়ের মানুষের চিকিৎসার প্রধান ভরসা হলো সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো। কিন্তু পর্যাপ্তসংখ্যক কর্মীর অনুপস্থিতিতে এসব হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের ভোগান্তি বহুলাংশে বেড়ে যায়।

প্রতিবেদেন বলা হয়, বেসরকারি চেম্বার, বাড়তি চাকরি বা উপার্জনের সুযোগ নিতে কর্মক্ষেত্রে উপস্থিতি আশঙ্কাজনক হারে কম বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য খাতসংশ্লিষ্টরা। প্রান্তিক অঞ্চলগুলোয় চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্য সহকারীদের পর্যাপ্ত আবাসন সুবিধার অভাব, যাতায়াতের অসুবিধার কারণে কর্মক্ষেত্রে উপস্থিতির হার কম বলে স্বীকার করছেন তাঁরা। তাঁদের ভাষ্যমতে, প্রতিষ্ঠান পরিচালনার স্বার্থে স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতনরা বাধ্য হয়েই স্বাস্থ্যকর্মীদের অনুপস্থিতির বিষয়টি মেনে নেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি সারা বিশ্বের সিদ্ধান্ত। শুধু বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত নয়। প্রত্যেক মানুষ, সর্বস্থানে এবং সর্বস্তরে স্বাস্থ্য সেক্টরের একটি অ্যাকসেস থাকতে হবে। এটি আমাদের জন্মগত অধিকার, এটি রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতেই হবে। যেভাবেই হোক, সর্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দেশের উন্নয়নের জন্য একে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও কার্যক্রমের মাধ্যমে যখন প্রয়োজন তখনই যেকোনো ধরনের চিকিৎসাসেবা বিনা মূল্যে গ্রহণ করতে পারবে, তখনই আমাদের দেশে ইউনিভার্সেল হেলথ কাভারেজ কার্যক্রম বাস্তবায়িত হবে। মোট কথা, স্বাস্থ্যখাতে অগ্রগতির জন্য সরকারকে অধিক মনোযোগী হতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে