স্বামীর অবৈধ আয় দিয়ে সম্পদ করেছেন স্ত্রী

ঘোষণার তিনগুণ সম্পদের মালিক

| সোমবার , ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৬:২৯ পূর্বাহ্ণ

ঘোষণার তিনগুণ সম্পদের মালিক

হাবীবুর রহমান 

জমিসহ এক তলা বাড়ি কিনেছেন এক কোটি ২২ লাখ ৪ হাজার ৮৫০ টাকা দিয়ে। ৮৮ লাখ ৪১ হাজার ৪৯৮ টাকা দিয়ে সেই বাড়ি করেছেন চার তলা। সবমিলে খরচ পড়েছে দুই কোটি ১০ লাখ ৪৬ হাজার ৩৪৮ টাকা। কিন্তু সম্পদ বিবরণীতে ঘোষণা দেওয়া হয়েছেমাত্র ৫০ লাখ ৯০ হাজার টাকার সম্পদের মালিক সন্ধা চৌধুরী। তিনি বোয়ালখালীর বাসিন্দা রুপম চৌধুরী বা ইয়াবা রুপমের স্ত্রী। এই রুপমের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের আদালতে দুটি মাদক মামলা বিচারাধীন রয়েছে। মূলত তার অবৈধ আয় দিয়ে সম্পদ অর্জন করেছেন স্ত্রী সন্ধা চৌধুরী। সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এই দম্পতির বিরুদ্ধে করা মামলায় সম্প্রতি চার্জশিট দাখিল করেছে দুদক। এতে উঠে এসেছে, ইয়াবা রুপমের স্ত্রী সন্ধা চৌধুরী নিজেকে ৫০ লাখ ৯০ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদের মালিক ঘোষণা দিলেও তার প্রায় তিনগুণ বেশি সম্পদ রয়েছে। বিপরীতে তার গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া গেছে মাত্র ১৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। অর্থাৎ ঘোষিত ৫০ লাখ ৯০ হাজার টাকার মধ্যেও ৩৫ লাখ ৪৬ হাজার টাকা তার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ।

চার্জশিট সূত্রে জানা যায়, হালিশহর থানাধীন দক্ষিণ কাট্টলীতে ২.৮৭ শতাংশ জমিতে ৪ তলা বাড়ির মূল্যসহ ৫০ লাখ ৯০ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদের তথ্য দিয়েছেন সন্ধা চৌধুরী। কিন্তু মামলার তদন্তে পাওয়া গেছে, তিনি দুই কোটি ১০ লাখ ৪৬ হাজার ৩৪৮ টাকার স্থাবর সম্পদের মালিক। এক্ষেত্রে তিনি এক কোটি ৫৯ লাখ ৫৬ হাজার ৩৪৮ টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেছেন। দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে সন্ধা চৌধুরী তিন লাখ ৮০ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদের মালিক ঘোষণা করেছেন। বৈবাহিক সূত্রে তিনি তা অর্জন করেছেন। কিন্তু তদন্তে পাওয়া গেছে তিনি চার লাখ ২৬ হাজার ৮৮২ টাকার অস্থাবর সম্পদের মালিক। এক্ষেত্রে তিনি ৪৬ হাজার ৮৮২ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন।

চার্জশিটে বলা হয়, সন্ধা চৌধুরী স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার নিজ হিসাব নং এর মাধ্যমে ৫৭ লাখ টাকা এবং স্বামী রুপমের হিসাব নং এর মাধ্যমে ৬০ লাখ টাকাসহ মোট এক কোটি ১৭ লাখ টাকা দিয়ে দক্ষিণ কাট্টলীর এক তলা বাড়িসহ জমি কিনেছেন। স্বামী রুপম চৌধুরীর সহযোগিতায় তিনি উক্ত সম্পদ অর্জন করেছেন। স্ত্রীকে সম্পদ গড়তে সহযোগিতা করে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন রুপম।

আদালত সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর রুপম চৌধুরী ওরফে রুপন চৌধুরী ওরফে রিপন চৌধুরী ও তার স্ত্রী সন্ধা চৌধুরীর বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন তৎকালীন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম১ এর উপসহকারী পরিচালক আবদুল মালেক। এতে মাদক কারবারের মাধ্যমে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন ও সম্পদ বিবরণীতে তথ্য গোপনের অভিযোগ করা হয়। এজাহারে বলা হয়, দুদকে জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে ৬৫ লাখ ছয় হাজার ৯৫৯ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন ও এক কোটি ৬১ লাখ ৫১ হাজার ৯৫৯ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও ভোগদখলে রেখেছেন রুপম।

অন্যদিকে এক কোটি ৬০ লাখ তিন হাজার ২৩০ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেছেন সন্ধা চৌধুরী। এ ছাড়া তিনি এক কোটি ৯৮ লাখ ৪৯ হাজার ২৩০ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। আদালত সূত্র আরো জানায়, ২০১৯ সালের জুলাই নগরীর খুলশী থানায় এলাকায় মঞ্জুরুল আলম নামের একজন ইয়াবা কারবারিকে ধরতে যায় পিবিআই। এর আগেই তিনি গাঢাকা দিয়েছেন। কিন্তু ধরা পড়েন রুপম চৌধুরী। এরপর তার আসল চেহারা স্পষ্ট হয়। নানা নামে নানা কৌশলে তিনি দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা ব্যবসা করে আসছিলেন বলে তখন পিবিআই জানিয়েছিল। বাড়ি বোয়ালখালী হলেও রাঙামাটির এনআইডি ব্যবহার করতেন। দুদক পিপি কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু আজাদীকে বলেন, দুদকের দায়ের করা পৃথক দুটি মামলাতেই পৃথক দুটি চার্জশিট দাখিল করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। একটিতে সন্ধা চৌধুরী একমাত্র আসামি। অপরটিতে তার সাথে স্বামী রুপমও রয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘আমার এখনো হাতে মেহেদিও লাগানো হয়নি, আমার জামাই কই’
পরবর্তী নিবন্ধস্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণ