স্বাচ্ছন্দময় অনলাইন ক্লাস

সুলতানা কাজী | শনিবার , ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৭:৪৪ পূর্বাহ্ণ

আবারো শিক্ষার সমস্ত চেহারাটা পাল্টে গেলো! ক্লাসরুম ঢুকে পড়লো আমাদের শোয়ার ঘরে, ডাইনিং টেবিলে। শিক্ষক হিসেবে কিছু জিনিস চিরকালের সঙ্গী আমাদের। ব্ল্যাকবোর্ড, হোয়াইটবোর্ড, চক, মার্কারপেন, ডাস্টার। এসব ছাড়া পড়ানো আবারো শুরু হয়ে গেলো! এখন আবারো পড়াতে গেলে প্রয়োজন কিছু যন্ত্র বা গ্যাজেট, কম্পিউটার, ফোন আর নানা অ্যাপস।
গত তিন-চার মাস ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মোটামুটি সরব ছিলো। প্রাণময় মনে হতো, প্রতিটা ক্লাস! প্রতিটা বিষয় বুঝার জন্য একটা আকর্ষণ লক্ষ্য করতাম, শিক্ষার্থীদের। বোর্ড ওয়ার্ক শেষে শিক্ষার্থীরা চিৎকার করে বলতো, ‘টিচার, আমার লেখা হয়নি, বোর্ড মুছবেন না’। জানি না, আর কতোদিন পর সেই পরিচিত আদুরে কণ্ঠগুলো সরাসরি শুনতে পাবো! পরিচিত চিরচেনা ক্লাসরুমের মায়া, যন্ত্র দিয়ে পুষে না। শিক্ষার্থীদের না দেখেই ক্লাস নিতে হয় এখন। শিক্ষক শিক্ষার্থীর সম্পর্ক প্রগাঢ় হয়, চোখে চোখ রাখাতে। পড়ানোর সময় ওদের চোখের দিকে তাকালেই বুঝা যায়, কে বুঝতে পারছে, কে বুঝার ভান করছে। ক্লাসে বসে দুষ্টুমি করা শিক্ষার্থীদের ধরে ফেলা যায়, একটু পায়চারি করলেই। তাদের সাথে এভাবে হৃদ্যতারও একটা বন্ধন তৈরি হয়। মুখহীন, ভাষাহীন ক্লাসকে জাদুক্লাসই মনে হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মানে শুধু পড়াশোনার অঙ্গন নয়, বড় হয়ে ওঠার এক বিশাল ক্ষেত্রও! বন্ধুত্ব, শিক্ষকদের শাসন-ভালোবাসা, ছোট-বড় বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থীদের সাথে মেলামেশা করে সামাজিক জীব হয়ে ওঠা। সবকিছুই শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেই শেখে। মহামারি আসলে কাউকে বলে কয়ে আসে না। করোনা নামক এক অদৃশ্য পরাশক্তির কাছে আমরা বারবার পরাজিত হচ্ছি। সৃষ্টিকর্তার অসীম দয়ায় হয়তো আমরা আবারো আমাদের আগের প্রেক্ষাগৃহে ফিরবো। আমি শিক্ষক হিসেবে ভীষণভাবে চিন্তিত এবং মা হিসেবে হতাশায় ভুগছি প্রতিনিয়ত। আমাদের প্রজন্ম ভবিষ্যৎ আসলেই কোনমুখী? পৃথিবী এগিয়ে চলছে। বাংলাদেশও এগুক পুরোদমে। আমাদের অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম কল্যাণময় হোক। ভাষাহীন, মুখহীন কার্যক্রমকেও প্রাণময় করা যায়। আমরা একমুখী চিন্তাধারায় বন্দী না থেকে, জনকল্যাণময় চেতনা মনে পোষণ করতে পারি! শিক্ষকদের বিভিন্নমুখী ক্লাস নেয়ার স্বাধীনতা আনয়নে প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ সজাগ হোক। একজন শিক্ষকই জানেন, তার পাঠ রসালো, প্রাণময়, স্বতঃস্ফূর্ত কী করে করতে হয়।
লেখক : শিক্ষক

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্মৃতিসৌধে জুতা পায়ে ওঠা বন্ধ হোক
পরবর্তী নিবন্ধজ্ঞান ও শিল্পের দেবী