স্বপ্ন ভাবনা

নাসের রহমান | বুধবার , ২২ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৭:০২ পূর্বাহ্ণ

নীরা নামের মেয়েটি একা, বড় একা। নি:সঙ্গ, একেবারে নি:সঙ্গ। তার কেউ নেই। বাবা মা ভাই বোন কেউ নেই। আত্মীয় স্বজনও নেই। কোন সঙ্গী সাথীও নেই। না খেলাধুলার সাথী, না পড়ার সাথী, কেউ নেই। সে একেবারে একা। কেউ তাকে ভালবাসে না। ভালবাসার কথা বলে না।

সে একা একা বসে থাকে। বসে বসে ভাবে। তার ভাবনায় অনেক কিছু এসে যায়। ভাবনাগুলোও কেমন যেন। পাখা মেলে না, জমাট বেঁধে যায়। নিজের মতো করে ভাবতে দেয় না। পদে পদে বাধা দেয়। নানা রকম দেয়াল তৈরি করে। উঁচু নিচু দেয়াল। এ দেয়াল ভাঙ্গতে তার সময় লাগে।

সে পাখির মতো উড়তে চায়। ডানা মেলে আকাশে উড়তে চায়। আহা পাখিরা কত স্বাধীন, একেবারে মুক্ত। যখন খুশি তখন উড়তে পারে। যেখানে মন চায় সেখানে উড়ে যেতে পারে। সে যদি পাখির মতো হতে পারতো। তার কোন ভাবনাই থাকতো না। ভাবনারা কোথায় উড়ে চলে যেতো। খুঁজেও পাওয়া যেতো না।

এ ভাবনারাই তাকে একা করে রেখেছে। যেন সে সারাদিন ভাবনার মাঝে ঘুরপাক খায়। ঘুরে ঘুরে ভাবনার ভেতর থাকে। ভাবনা থেকে আর বের হতে পারে না। সাদা কালো নানা রকম ভাবনা। রং বেরঙের ভাবনা। রঙিন ভাবনা। রঙিন ভাবনাগুলো তার ভাল লাগে। এসব ভাবনারা তাকে অনেক দুর নিয়ে যায়। এরা নানা রঙের পাখা মেলতে পারে। রঙিন প্রজাপতির মতো। কখনো মাছ রাঙার মতো। আবার কখনো হলুদ সরষে ফুলের মতো।

নীরা এসবের মাঝে থাকতে চায়। ফুল পাখি প্রজাপতির মতো দোল খেতে চায়। দোল খেয়ে খেয়ে উড়তে চায়। এভাবে দোল খেতে খেতে তার ভাবনাগুলো স্বপ্ন হয়ে যায়। ছোট বড় নানা রকম স্বপ্ন। আলোর স্বপ্ন, আঁধারির স্বপ্ন। আলোআঁধারির ধুসর স্বপ্ন। ভোরের স্বপ্ন। আঁধার পেরিয়ে ভোরের আলোর স্বপ্ন। বর্ণিল স্বপ্ন।

স্বপ্নের ভেতর কে না থাকতে চায়। সবাই চায় স্বপ্নের মাঝে বেঁচে থাকতে। স্বপ্ন পূরণ করতে। স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলতে। স্বপ্নগুলো যেরকমই হোক । এগুলো একান্ত নিজের হয়ে যায়। কিন্তু তার স্বপ্নগুলো পূরণ হয় না। একটি স্বপ্নও পূরণ হয় না। সে আবার ভাবনায় পড়ে যায়। স্বপ্ন পূরণের ভাবনা। তবে এবারের ভাবনাটা অন্যরকম। জেগে ওঠার ভাবনা। পাখিরা তার কানের কাছে এসে বলে, ইচ্ছা থাকলে তুমিও উড়তে পার।

সে একটু সাহস পায়। পাখিদের কথা মন দিয়ে শোনে। ইচ্ছাটা আসল, ইচ্ছাই মনের শক্তি যোগায়। সে এবার নড়ে চড়ে বসে। কথাটা সত্যি, ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়।

এবার প্রজাপতি তার হাতের উপর এসে বসে। রঙিন পাখা মেলে বলে, চাইলে তুমিও তোমার মনের পাখা এভাবে মেলতে পার। মনের রঙে রাঙিয়ে তুলতে পার। প্রজাপতির অপূর্ব ছোঁয়া পেয়ে তার মনটা রঙিন হয়ে ওঠে। প্রজাপতির পাখার চেয়েও রঙিন।

মাছরাঙা দূর থেকে তাকে ইশারায় বলে, দেখনা রোদে আমি কেমন করে শুন্যে ভাসি। পুকুরে পানির ভেতর সাঁতার কাটা মাছটিকে কিভাবে টুপ করে পড়ে ধরে নিয়ে আসি। মাছটি টেরও পায়না কখন সে আমার ঠোঁটের মাঝে এসে যায়। তোমাকেও চেষ্টা করতে হবে। চেষ্টা করতে করতে করতে এক সময়ে তুমিও পেরে যাবে।

হলুদ সরষে ফুলেরা বাতাসে দোল খেতে খেতে বলে, বাতাস আমাদের একটুও নোয়াতে পারে না। বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে কেমন করে দোল খেতে থাকি। যেন বাতাসের সাথে মিতালী গড়ে তুলি। তোমাকেও মিতালী গড়তে হবে। এগিয়ে আসতে হবে। তুমি একা নও, আমরা সবাই তোমার সাথী।

নীরা অবাক হয়ে শোনে। এভাবে আগে কেউ তাকে বলেনি। আশার কথা কেউ শোনায়নি। কেউ যে সাথী হবে ভাবতেও পারেনি। সরষে ফুল সাথী বলায় মনটা ভরে যায়। তার ভাবনাগুলো ছুটে যায়। এলোমেলো ভাবনারা কোথায় যেন হারিয়ে যায়। তখন স্বপ্নরা ডানা মেলতে থাকে। ডানা মেলে আকাশে উড়তে শুরু করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশীতবুড়ি
পরবর্তী নিবন্ধটার্ডিগ্রেড