স্বপ্ন বাস্তবতায় শেখ হাসিনা : এবার স্মার্ট বাংলাদেশ

ড. মো. সেকান্দর চৌধুরী | সোমবার , ৯ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৪:৩৫ পূর্বাহ্ণ

ভাষাতত্ত্ববিদ ও ব্রিটিশ বিচারক স্যার উইলিয়াম জোনস্‌ (১৭৪৬১৭৯৪) ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আহ্বানে কলকাতায় আসলেন জাহাজে চড়ে। লন্ডন থেকে কলকাতায় দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রায় তিনি চিন্তা করলেন কলকাতায় তাঁর কাজ কী কী হবে? এই চিন্তা ও উদ্ভাবনী থেকে এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল (১৭৮৪) এর সৃষ্টি। এরকম স্বপ্নউদ্বাবন ও ভিশনারি চিন্তার অনেক উদাহরণ রয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার চিন্তাপরিকল্পনা ও ভিশনারি কিছু কাজ ও সাফল্যের গল্প রয়েছে। সরকার প্রধান হিসেবে তিনি ইতোমধ্যে উদাহরণযোগ্য অনেক কর্ম সম্পাদন করেছেন।

শেখ হাসিনা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে তিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে উচ্চারণ করেন ‘আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশঅর্থাৎ আমাদের পুরো জনগোষ্ঠী হবে স্মার্ট জনগোষ্ঠী, সেটাই আমরা করতে চাই।’ ২২তম জাতীয় সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য চারটি ভিত্তির কথা উল্লেখ করেন। এগুলো হলোস্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি। সরকার আগামীর বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চায়, যেখানে প্রতিটি জনশক্তি হবে স্মার্ট। সবাই প্রতিটি কাজ অনলাইনে করতে শিখবে, ইকোনমি হবে ইইকনোমিযাতে সম্পূর্ণ অর্থ ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল ডিভাইসে করতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মযোগ্যতা সবকিছুই ইগভর্নেন্সের মাধ্যমে হবে। ইএডুকেশন, হেলথ্‌সহ সবকিছুতেই ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করা হবে। ২০৪১ সালের শেখ হাসিনা ঘোষিত ‘ভিশন৪১’ বা ‘রূপকল্প৪১’ এর প্রতিপাদ্য তাইই।

প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা কোনো ইউটোপিয়া বা রূপকথা নয়। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের গৌরব অর্জন করেছে। শেখ হাসিনার যোগ্যতা, দক্ষতা ও সাধনার সোনালী ফসল হলো এ অর্জন। ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ পর্যন্ত তিন বছর গভীর গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ শেষে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। শেখ হাসিনার শাসনামলেই বাংলাদেশ জাতিসংঘ ঘোষিত সহস্‌্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো (এমডিজি) সর্বোত্তমভাবে অর্জনের স্বীকৃতি অর্জন করেছে, যা বাংলাদেশের ঐতিহাসিক উন্নয়নের মাইলফলক হয়ে থাকবে। এখন লক্ষ্য উন্নতসমৃদ্ধআধুনিক বাংলাদেশ তথা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’।

জননেত্রী শেখ হাসিনার বয়স মধ্য সত্তর। দীর্ঘ চার দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। জীবনের সিকিভাগ পার করে দিয়েছেন সরকার প্রধান হিসেবে, দেশের হাল ধরে। নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দীর্ঘ মেয়াদে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার রেকর্ড অর্জন করেছেন শেখ হাসিনা। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল টানা ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকার রেকর্ড ছিল। শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে ১৮ বছরের বেশি সময় ধরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।

আন্তর্জাতিক সংস্থা উইকিলিকসের গবেষণা থেকে জানা যায়, নারী সরকার প্রধান হিসেবে বহুবার দেশ পরিচালনায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থেচার এবং শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গের মতো নেত্রীদের পেছনে ফেলে স্বমহিমায় এগিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা এখন নারীদের পুনর্জাগরণের প্রতীক। কেবল নারী হিসেবে নয়, অন্য দিক বিবেচনায় মাহাথির মোহাম্মদ যেমন আধুনিক মালয়েশিয়ার কারিগর, তেমনি বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ থেকে মর্যাদাসম্পন্ন একটি আধুনিক দেশে রূপান্তরের কুশীলবও শেখ হাসিনা।

কিন্তু শেখ হাসিনার এই যাত্রা কুসুমাস্তীর্ণ ছিলো না। জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা পোড়ামাটির এক ধ্বংসস্তূপকে সোনার বাংলা বানানোর ব্রতে জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। তাঁর জীবনের কর্ম/সাধনা বাংলার মানুষের সর্বোত্তম কল্যাণ। এই যাত্রাপথের বাঁকে বাঁকে ছিলো জীবনের ঝুঁকি। তবুও তিনি সব বাধাবিড়ম্বনা পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। ২১বার তাঁকে হত্যার অপচেষ্টা হয়েছে। কিন্তু তিনি অকুতোভয়। সবকিছুর উর্ধ্বে স্থান দিয়েছেন মামাটি মানুষের কল্যাণ। ১৮ বছরের বেশি সময় ধরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনে তিনি নিজের মেধা, মনন, নিষ্ঠা, সততা, যোগ্যতা, প্রজ্ঞা, দক্ষতা, সৃজনশীলতা, উদার গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ও দূরদর্শী নেতৃত্বে দেশের আমুল পরিবর্তন সাধন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক প্রেরিত এক চিঠিতে তিনি শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন “বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক, সহনশীল, বন্ধুত্ববাদী এবং মধ্যপন্থি জাতির দেশ।

শেখ হাসিনা বাংলা ও বাঙালির জন্যে আশীর্বাদসরূপ। কেননা পূর্বের কোনো সরকারের শাসনামলে এদেশে এতো উন্নয়ন সাধিত হয়নি। চোখের সামনে এখন দিবালোকের মতো জ্বলজ্বল করে ওঠে পদ্মাসেতু, ঢাকার বুকে মেট্রোরেল, কর্ণফুলীর নিচে বঙ্গবন্ধু টানেল, চট্টগ্রামঘুমধুম রেললাইন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ, কয়লাভিত্তিক রামপাল থার্মাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট১ ও পায়রা বন্দর নির্মাণ প্রকল্পসহ বাস্তবায়নাধীন আরো অসংখ্য ছোটবড় প্রকল্প। এতে প্রভাব পড়েছে মানুষের জীবনমান উন্নয়নে। এখন শেখ হাসিনার লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ। ২০০৮ সালের ভিশন২১ এর মূল লক্ষ্য ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়। আমাদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারে বাংলাদেশে বিপ্লব সাধিত হয়েছে।

করোনাকালীন দুঃসময়ে অনলাইন পদ্ধতিতে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও বিচারিক কার্যক্রম সচল রাখার পদক্ষেপ প্রশংসাযোগ্য। এছাড়া ইন্টারনেটসেবা এখন গ্রাম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। ব্যাংকিং খাত থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যসেবাসহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই আজ বয়ে যাচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়ন প্রবাহ। শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ এর স্বপ্ন তখনই বাস্তবায়িত হবে যদি সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। আর স্থিতিশীলতা রক্ষা করাও জরুরি। অন্ধকারের অপশক্তি আবার মাঠে নেমেছে তাদের কালো থাবা নিয়ে। আগামী বছরের জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। শেখ হাসিনার স্বপ্ন স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে তাই আওয়ামী লীগের সরকার ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

যে গতিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে সে পথ এদেশের জনগণ কোনো অবস্থাতেই রুদ্ধ হতে দেবে না। তাই আমাদের আগামীর প্রত্যাশাস্মার্ট বাংলাদেশ। জননেত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্ন দেখতে জানেন, দেখাতেও জানেন। শুধু স্বপ্ন নয় অষ্টাদশ শতকের দার্শনিক ডিরোজিওর স্বপ্নডানা দেখতে পাই শেখ হাসিনার মধ্যে। মধ্য সত্তুরের আয়ুষ্কালেও যেন উইলিয়াম শেক্সপিয়ার ও নজরুলের তারুণ্যের প্রতিভূ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। ৭৫’র পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের সামগ্রিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ এবং আজকের বিস্ময়কর অভূতপূর্ব অবস্থান বিবেচনায় শেখ হাসিনার যাদুকরি ও স্বাপ্নিক বাংলাদেশের রূপরেখা স্পষ্ট হয়। তাই এ ধারণা নিশ্চয়ই পোষণ করতে পারি যে আগামী দিনের বাংলাদেশ হবে সুখী, সমৃদ্ধ, সচ্ছল, আধুনিক বাংলাদেশ। স্মার্ট বাংলাদেশ।

লেখক : সাবেক ডিন, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ, চট্টগ্রাম

বিশ্ববিদ্যালয়; প্রাবন্ধিক ও গবেষক

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅধ্যাপক কাজী সামশুর রহমান স্মরণে
পরবর্তী নিবন্ধবিচ্ছেদের শহরে আমরা রয়ে যাব আমৃত্যু