স্বজনদের নিয়েই অপরাধ জগৎ

তবুও পড়ছে ধরা

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৫ জুলাই, ২০২১ at ৬:১১ পূর্বাহ্ণ

পারিবারিকভাবেই তারা অপরাধ জীবনকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। কখনো স্বামী-স্ত্রী, কখনো বাবা-ছেলে, কখনো তিন ভাই, কখনো আবার মামা-ভাগ্নি মিলে চলছে অপরাধ জীবন।
সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) বিজয় বসাক আজাদীকে বলেন, অপরাধ জীবনে বেইমানি একটা বড় বিষয়। পাশাপাশি নিজে বাঁচতে পুলিশের কাছে অপরজনকে ধরিয়ে দেওয়ার বিষয়টিও রয়েছে। এ কারণে তারা অপরাধ জগৎ গড়ে তুলেছে স্বজনদের নিয়েই। তবুও পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে পারছে না তারা। নগরীর মতিয়ারপুল এয়ার আলী মসজিদের সামনে থেকে ইয়াবাসহ মামা ও ভাগ্নিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ডবলমুরিং থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন আজাদীকে বলেন, মামা এনায়েত টেকনাফ থেকে ইয়াবা কিনে আনে। আর ভাগ্নি মরিয়ম তা বিক্রি করে।
নকল স্বর্ণের বার দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে আসল স্বর্ণ ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অপরাধে গত ২৫ জুন ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। ওসি মো. নেজাম উদ্দীন বলেন, গ্রেপ্তারকৃত পাঁচজনের মধ্যে গ্রুপের প্রধান মো. তাজুল ইসলাম ও তার স্ত্রী রুবি বেগমও আছে।
বায়েজিদ থানার ওসি মো. কামরুজ্জামান জানান, পাঁচ ভাইয়ের ত্রাসের সাম্রাজ্য বিরাজ করছিল বায়েজিদ এলাকা জুড়ে। সামশু, সবুজ, সাইফুল ওরফে বার্মা সাইফুল, ফাহিম ও শাহিন। ছোট ছেলের বিরুদ্ধে এখনও কোনো মামলা না থাকলেও বাকি চার ছেলের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা একাধিক। এর মধ্যে বড় ভাই সামশুর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে ১২টি। সবুজের বিরুদ্ধে ২১টি, সাইফুলের বিরুদ্ধে ১৮টি এবং ফাহিমের বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে।
বায়েজিদ থানাধীন বার্মা কলোনি, আলী নগর, ফরেস্ট গেট ও রংপুর কলোনির অলিখিত নিয়ন্ত্রক তারাই। কোনো ভাই কারো সাথে ঝামেলা করলে ছুটে আসে অন্য ভাইয়েরা। এলোপাতাড়ি কুপিয়ে চলে যায়। ১৬ জুন গভীর রাতে নগরীর বায়েজিদ-ভাটিয়ারী লিংক রোডে পুলিশের চেকপোস্টে গুলি বিনিময়ের পর সাইফুল ইসলাম ওরফে বার্মা সাইফুলকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেপ্তার করে বায়েজিদ থানা পুলিশ। বন্দরে ঝাড়ুদারের অস্থায়ী ভিত্তিতে চাকরি করেন আকাশ। আবার স্ত্রী ও মামার সমন্বয়ে গ্রুপ তৈরি করে ছিনতাইও করেন। এই মামা নিজেকে কখনো পুলিশের সোর্স, কখনো আবার সরকারি দলের নেতা হিসেবে পরিচয় দেন। মাঝেমধ্যে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। কখনো মামার উছিলায় জায়গাতেই ছাড়া পেয়ে যান। কখনো চৌদ্দ শিকের ভেতর ঢুকলে বের করে আনেন তার স্ত্রী। গত তিন বছরে তিনবার গ্রেপ্তার হয়ে জেলে গেছেন। জেলে গেলেও বেরিয়ে এসে আবারও বন্দরের অস্থায়ী চাকরি ফিরে পেয়েছেন।
২৪ জুন রাতে ডবলমুরিং থানার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ আকাশসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার বাকি তিনজন হলেন আকাশের স্ত্রী তানিয়া বেগম, সৎ মামা তাজুল ইসলাম ও ছিনতাইকারী গ্রুপের কথিত গডফাদার আনোয়ার হোসেন মঞ্জু।
২৫ জুন জামালখান এলাকার শরীফ কলোনির একটি ভবনে অভিযান চালিয়ে প্রায় ৩ হাজার ৩শ পিস ইয়াবাসহ একই পরিবারের ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ইয়াবা বিক্রির নগদ ২ লাখ টাকা। পুলিশ নিশ্চিত করে, উখিয়া থেকে কম দামে ইয়াবা সংগ্রহ করে জামালখানের একটি বাসায় রেখে বিক্রি করতেন এ পরিবারের সদস্যরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করতে ব্যাংকারের অপহরণ নাটক
পরবর্তী নিবন্ধঈদে ১০ কেজি করে চাল পাবে এক কোটির বেশি পরিবার