স্ত্রী-সন্তানসহ নিথর দেহে কক্সবাজারে ফিরলেন শুল্ক কর্মকর্তা শাহজালাল

কক্সবাজার প্রতিনিধি | রবিবার , ৩ মার্চ, ২০২৪ at ৬:৩২ পূর্বাহ্ণ

শুল্ক কর্মকর্তা শাহজালাল উদ্দিন (৩৭)। স্ত্রী মেহেরুন নিসা (২৪) ও একমাত্র মেয়ে ফাইরুজ কাশেম জামিরাকে () নিয়ে থাকতেন ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কাস্টম কোয়ার্টারে। কক্সবাজারে বাড়িতে আসার জন্য দুদিনের ছুটি নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন। বাড়ির পথে রওনা হওয়ার আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে স্ত্রীসন্তানকে নিয়ে তিনি রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের একটি রেস্তোরাঁয় যান। আগুনে পুড়ে সেখানেই তিনজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এতে জীবিত অবস্থায় আর ফেরা হলো না আপন নিবাস কক্সবাজারে। স্ত্রীসন্তানসহ নিথর দেহে কক্সবাজারে ফিরলেন তিনি।

গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শাহজালালের স্ত্রী মেহেরুন নিসার রামুর গ্রামের বাড়ি ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নে পৌঁছায় তাদের মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স। তাদের মরদেহ কক্সবাজার পৌঁছার পর সৃষ্টি হয় হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি। স্বজনদের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়। রামুতে রাত ১০টায় তাদের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে মরদেহ নেওয়া হয় শাহজালালের গ্রামের বাড়ি কক্সবাজারের হলদিয়াপালংয়ে। আজ রোববার সকাল ১১টায় মরিচ্যা মুক্তিযোদ্ধা আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দ্বিতীয় জানাজা হওয়ার কথা রয়েছে। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে শায়িত হবেন তারা।

এদিকে ছেলে শাহজালালসহ আদরের নাতনি ও পূত্রবধূকে হারিয়ে বাবা আবুল কাশেম এখন অনেকটাই বাকরুদ্ধ। যুদ্ধে হানাদার বাহিনীর অত্যাচার সহ্য করা এই বীর মুক্তিযোদ্ধা এখন ছেলের শোকে কাতর। বাড়ির আঙিনাজুড়ে চলছে দাফনের প্রস্তুতি। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, পাঁচ ভাই, এক বোনের মধ্যে শাহজালাল ছিলেন মেজ। ভাই হারানোর বেদনায় কাতর তার সহোদররাও। স্মৃতিচারণ করে তারা কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন।

বিডিনিউজ জানায়, গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে মরদেহ তিনটি গ্রহণ করেছেন শাহজালাল উদ্দিনের বড় ভাই শাহজাহান সাজু। তিনি উখিয়া উপজেলার হলদিয়াপালং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

বয়োবৃদ্ধ বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম বলেন, পাঁচ ছেলে, এক মেয়ের মধ্যে শাহজালাল উদ্দিন তৃতীয়। সে ২০১৭ সালে কাস্টমসের চাকরিতে যোগদান করে। তার শেষ কর্মস্থল ছিল নারায়ণগঞ্জ জেলার পানগাঁও। ছেলে প্রতিদিন আমাকে ৩৪ বার ফোন দিত। আমার ওষুধ সেবনের জন্য তাড়া দিত। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার পর আমার সাথে সর্বশেষ কথা বলেছিল শাহজালাল।

বাড়ির একটু দূরে পশ্চিম মরিচ্যা জামে মসজিদের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে তৈরি করা হচ্ছে তিনটি কবর। যেখানে দাফন করা হবে শাহজালাল উদ্দিন, তার স্ত্রী ও সন্তানকে।

শাহজালাল উদ্দিনের ছোট ভাই কাশেম বিন লিংকন বলেন, বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের ২৪ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পর কক্সবাজার কাস্টমস অফিসের ভাইয়ের এক সহকর্মী ফোন করে জানান, ফেইসবুকে অজ্ঞাত পরিচয় যে কয়েকজনের মরদেহ দেখা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে তার ভাবি ও মেয়ের ছবি দেখা যাচ্ছে। ভাইয়ের বিষয়টি ওই সহকর্মী তখনও জানেন না।

লিংকন বলেন, পরে পরিবারের পক্ষে যোগাযোগ করা হলে শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ভাবির বাবা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে গিয়ে তিনজনের মরদেহ শনাক্ত করেন।

শাহজালালের একমাত্র বোন তসলিমা আকতার বলেন, ভাইদের মধ্যে অনেকটাই পিতার ভূমিকা পালন করতেন শাহজালাল। প্রতিনিয়ত ফোন করে খোঁজখবর নিতেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়ও ফোন করে কিছু লাগবে কিনা জানতে চেয়েছিলেন। সেই ভাই এখন নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিএনপির আন্দোলন চলমান আছে : আমীর খসরু
পরবর্তী নিবন্ধকাচ্চি ভাইয়ের স্টোর রুমেই মিলেছে বেশি লাশ