দাবদাহের কারণে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধে উচ্চ আদালত যে আদেশ দিয়েছে, তার অনুলিপি মন্ত্রণালয় পায়নি বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে তিনি বলেন, আদালতের আদেশ তারা মানতে বাধ্য, কিন্তু সেজন্য আদেশ সম্পর্কে অবগত হতে হবে। ঈদের ছুটির পর গরমের কারণে আরও এক সপ্তাহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছিল সরকার। রোববার থেকে ক্লাস শুরু হওয়ার পর গরমে বিভিন্ন স্থানে শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর আসে। পরে রোববার থেকেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাপমাত্রা অনুযায়ী জেলাওয়ারি ছুটি ঘোষণা করে আসছে। খবর বিডিনিউজের।
সোমবার বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাই কোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার আদেশ দেয়। সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করলেও গতকাল ২৭ জেলা ছাড়া দেশের বাকি অংশে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস চলেছে। আজ বুধবার মে দিবসের ছুটিতে বন্ধ থাকবে এসব প্রতিষ্ঠানও।
আদালতের আদেশ অনুযায়ী বৃহস্পতিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে কিনা তা খোলাসা করেননি শিক্ষামন্ত্রী। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আদালতের সিদ্ধান্তের ওপরে আমরা শ্রদ্ধাশীল। তবে আমরা এ মুহূর্তে মন্তব্য করার অবস্থানে নেই। কারণ আমরা আদেশ দেখিনি, তাই মন্তব্য করব না। নীরবতাটা এক্ষেত্রে সম্মানের লক্ষণ, সম্মতি নয়।
আদালতের নির্দেশনায় কি আছে তা না দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, নির্দেশনা আসলে আমরা মেনে চলব। তিনি জানান, আদেশের কপি না পেলেও সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি তিনি জেনেছেন। এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে আলোচনাও করেছেন।
নওফেল বলেন, আমরা আপিল করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আসলে আদেশ কী হয়েছে তা তো জানতে হবে। বৃহস্পতিবার আদালত বন্ধ। সে কারণে আপিলের আর সুযোগ নেই। আজকে সর্বশেষ সুযোগ ছিল, আমরা অপেক্ষমাণ ছিলাম।
পরিচালনাগত সিদ্ধান্ত একান্তই নির্বাহী এখতিয়ার : গরমে স্কুল বন্ধ রাখতে আদালতের আদেশ আসার একদিন বাদে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ছুটির মতো পরিচালনাগত সিদ্ধান্ত একটি বিশেষায়িত প্রক্রিয়া। নির্বাহী বিভাগের এখতিয়ারের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, এখানে অনেক অংশীজন থাকে। আবহাওয়া অধিদপ্তর আছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আছে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আছে। সবার সাথে আলোচনা করে পরিকল্পনা নিতে হয়। নির্বাহী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিই। আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে সুনির্দিষ্ট জেলার কথা বলা হয়েছে।
নওফেল বলেন, এটি একটি বিশেষায়িত কার্যক্রম। কিছু জেলায় তাপমাত্রা কমবে, কোথাও বাড়বে। এটি নির্বাহী বিভাগের পরিচালনাগত বিষয়। এর সঙ্গে অনেকে সম্পৃক্ত। সেখানে স্বতঃপ্রণোদিত নির্দেশনা আমরা যদি পেয়ে যাই, তাহলে পরিচালনার বিষয় কঠিন হয়ে যায়। সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি আমাদের যথাযথ সম্মান আছে। কিন্তু আমার অভিমতটা তো প্রকাশ করতে পারি। অভিমতটা হলো এটি একান্তই নির্বাহী এখতিয়ার।
আদেশ বৈষম্যমূলক : আদালতের আদেশে যে দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পেয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন রেখেছেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, গণমাধ্যমে দেখলাম ইংরেজি মাধ্যমের ও লেভেল, এ লেভেল স্কুল খোলা থাকবে। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রভাবশালী, ধনশালী ব্যক্তিরা সন্তানদের পড়াশোনা করতে পাঠান। আর প্রান্তিক পর্যায়ে যাদের বাবা–মা মাঠে–ঘাটে ঘাটে কাজ করেন, এদেশের অর্থনীতি–সমাজকে চালিয়ে রেখেছেন; তাদের সন্তানরা পাঠদান কার্যক্রম করতে পারবে না। দৃশ্যত এটি বৈষম্যমূলক পরিস্থিতি তৈরি করবে। এটি দুঃখজনক।
নওফেল বলেন, সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার জন্য কেবল প্রভাবশালী, ধনী ও রাজধানীকেন্দ্রিক অভিভাবক কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কথা বিবেচনায় নিলে চলবে না। ঢাকার সঙ্গে অন্য জেলাগুলোর পার্থক্যও বিবেচনায় নিতে হবে। সিলেটে এখন বৃষ্টি হচ্ছে। বন্যা হলে তারা স্কুলে যেতে পারবে না। তখন কিন্তু ঢাকা শহরে কোনো সমস্যা হবে না।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত দুদিন বিভিন্ন জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে বললেও অনেক প্রতিষ্ঠান ক্লাস নিয়েছে। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যারা মানছেন না, তাদের বিষয়ে আমরা দেখব।