জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেছেন, ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে উপজেলাগুলো ও নগরীর কোনো স্কুলমাঠে কোরবানির পশুর হাট বসতে দেওয়া হবে না। নগরীতে প্রথমে ৬টি ও পরবর্তীতে আরো ৩টিসহ মোট ৯টি গরুর বাজারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে নগরে আর কোনো গরুর বাজার বসতে পারবে না। উপজেলা পর্যায়ে অনুমোদিত বাজার ব্যতীত যত্রতত্র গরুর বাজারও বসাতে পারবে না। কোরবানির পশুর কোনো ধরনের রোগ আছে কিনা তা যাচাইয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের টিম সার্বক্ষণিক বাজারে থাকবে। পশুর বাজার ঘিরে কোনো ধরনের যানজট ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা যাবে না। এর ব্যত্যয় ঘটলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গতকাল রোববার সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় সভা এবং জেলা আইন–শৃঙ্খলা কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, দেশের সার্বিক উন্নয়নে সরকার সমন্বয়ভিত্তিক কার্যক্রমগুলোকে প্রাধান্য দিচ্ছে। জেলাভিত্তিক কার্যক্রমগুলো নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলার সার্বিক উন্নয়নে আমরা সকলে মিলে সমন্বিতভাবে কাজ করব। সরকারি প্রত্যেক দপ্তরকে সংস্কারের আওতায় এনে মেধা, দক্ষতা ও সততা দিয়ে আমাদের কার্যক্রমগুলো সুনিশ্চিত করব, যাতে সন্তোষজনক হয়। এজন্য সকলের আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন।
সভায় জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পরিবেশ ছাড়পত্র ব্যতীত হাসপাতাল, ল্যাব, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকগুলোর রেজিস্ট্রেশন হালনাগাদ করা যাচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রেশন হালনাগাদের পূর্বে পরিবেশ ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেও সময়মতো না পাওয়ার বিষয়ে অনেকের অভিযোগ রয়েছে। কোনো ধরনের হয়রানি ব্যতিরেকে আবেদনের সাথে প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট পাওয়া সাপেক্ষে পরিবেশ ছাড়পত্র প্রদানে আন্তরিক হলে ভালো হয়।
তিনি বলেন, রোগী বেড়ে যাওয়ার কারণে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। সাধারণ রোগীদের দুর্ভোগের কথা বিবেচনায় এনে সরকার ১৪ মে থেকে সিআরবিতে চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতালের বহিঃবিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে চিকিৎসাসেবা চালু করেছে। এখন থেকে রোগী সাধারণ কার্ডিয়াক সমস্যা থেকে শুরু থেকে জরুরি সেবাগুলো এখানে এসে গ্রহণ করতে পারবে। বোয়ালখালী ও চন্দনাইশসহ বিভিন্ন উপজেলার জরাজীর্ণ উপ–স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর সংস্কার কাজ দ্রুত সময়ে সম্পন্ন করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান/দপ্তরের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জুনায়েত কাউছার বলেন, ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বিভিন্ন উপজেলায় প্রচুর কোরবানির পশুর বাজার বসতে শুরু করেছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রচুর পশু এখানে আসে; পশু চুরিও হয়। আমরা ইতোপূর্বে কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে চোরাই গরুসহ গরু চোর চক্রের মূল হোতা ও চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছি। গরু চুরি রোধে সতর্ক থাকতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পশুর হাটে জাল নোট শনাক্তকরণ মেশিন বসানোর পাশাপাশি জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে হাটগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। অধিক টাকা বহনকারী গরু–ছাগল বেপারিরা নিরাপত্তা চাইলে তা নিশ্চিত করব। ঈদুল আজহার সময় বাড়ির নিরাপত্তা ও ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সড়কে যানজট নিরসনসহ সার্বিক ব্যবস্থা নিশ্চিতে প্রশাসন ও আইন–শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। সড়কে শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা আরো সময়োপযোগী করা হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামরুজ্জামানের সঞ্চালনায় পৃথক সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উপ–পরিচালক (স্থানীয় সরকার) মো. নোমান হোসেন, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. দিদারুল আলম, ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. তৌহিদুল আনোয়ার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক চৌধুরী (ফটিকছড়ি), মো. ফখরুল ইসলাম (সীতাকুণ্ড), মাহফুজা জেরিন (মীরসরাই), এবিএম মশিউজ্জামান (হাটহাজারী), মো. রাজীব হোসেন (চন্দনাইশ), ইনামুল হাছান (লোহাগাড়া), তাহমিনা আকতার (আনোয়ারা), মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ (বোয়ালখালী), মো. জামশেদুল আলম (বাঁশখালী), রিগ্যান চাকমা (সন্দ্বীপ), মিল্টন বিশ্বাস (সাতকানিয়া), জিসান বিন মাজেদ (রাউজান), মাহমুদুল হাসান (রাঙ্গুনিয়া), ফারহানুর রহমান (পটিয়া), জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এস এম আব্দুর রহমান, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুমাইয়া নাজনীন, সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসান আলী, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল আহসান, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ চন্দ্র দাস, পরিবেশ অধিদপ্তর জেলা কার্যালয়ের উপ–পরিচালক মো. মোজাহিদুর রহমান, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল আওয়াল, পরিবেশ অধিদপ্তর মহানগর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক উর্মি সরকার, বিআরটিএর সহকারী পরিচালক রায়হানা আক্তার উর্থী, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী প্রশান্ত তালুকদার, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ–সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা মু. মুনতাসির মাহমুদ প্রমুখ। সভায় মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে গত মাসের অপরাধচিত্র তুলে ধরেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) সৈয়দ মাহবুবুল হক।