প্রায় ২০ বছর ধরে সৌদি আরবে জীবিকা নির্বাহ করতেন নুরুল আলম (৪০)। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে দেশে ছুটি কাটিয়ে ফের প্রবাসে পাড়ি জমিয়েছিলেন। তিন ছেলে সন্তানের জনক নুরুল আলমের স্ত্রী নওরিন আক্তার জেরিন বর্তমানে ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস নুরুল আলম অনাগত সন্তানের মুখ দেখার আগেই মৃত্যুবরণ করলেন। গত বৃহস্পতিবার সৌদি সময় রাত ৮টার দিকে আবহার মাহাইল শহরে সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়।
জানা যায়, নুরুল আলম লোহাগাড়া উপজেলার আধুনগর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের আকবর পাড়ার ছালেহ আহমদের পুত্র। তিনি সৌদি আরবে কাপড়ের ব্যবসা করতেন। ঘটনার দিন নিজে গাড়ি চালিয়ে মালামাল সরবরাহ করতে বের হন। মাহাইল শহরের আল ব্রিক রোডে পৌঁছলে আরেকটি গাড়ির সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই নুরুল আলমের মৃত্যু হয়। বর্তমানে তার মরদেহ সেখানকার একটি হাসপাতাল মর্গে রয়েছে।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে নুরুল আলমের বাড়িতে সরেজমিনে দেখা যায়, শোকের ভারে নুয়ে পড়েছে পুরো পরিবার। ভিড় করেছেন আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও পরিচিতজনেরা। সবাই এসেছেন সমবেদনা জানাতে, বুকের কষ্ট ভাগ করে নিতে। এক কোণে বসে আছে নুরুল আলমের বড় ছেলে নওশাদ আব্রারার আদিল (১০) ও দ্বিতীয় ছেলে নাওয়াজ আব্রারার আওছাফ (৭)। তারা বুঝতে শিখেছে বাবাকে হারানোর মানে। বুক ফেটে কান্না নয়, বরং নীরব বেদনা তাদের চোখে স্পষ্ট। তারা জানে, আর কখনো বাবা দরজায় দাঁড়িয়ে ডাকবেন না, নিয়ে যাবেন না ঘুরতে। মাথায় হাত রেখে বলবেন না ‘বাবা, তোমরা বড় হও’। চার বছর বয়সী ছোট ছেলে নাওয়াজ আব্রারার আহিল নিষ্পাপ চোখে দেখছে সবাইকে। কেউ কাঁদছে, কেউ সান্ত্বনা দিচ্ছে, কিন্তু সে কিছুই বুঝতে পারছে না।
নিহতের নিকটাত্মীয় মোরশেদ আলম জানান, নুরুল আলম ছিলেন ভালো মনের মানুষ। কাজের প্রতি নিষ্ঠাবান ও পরিবারের জন্য সর্বদা উদার। এই মর্মান্তিক মৃত্যুর খবরে তার পরিবার, আত্মীয়–স্বজন ও প্রিয়জনদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার মরদেহ দেশে আনার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
নিহতের পিতা ছালেহ আহমদ জানান, গত ২৫ নভেম্বর ছেলে নুরুল আলম তার মা রাবিয়া বেগম ও খালা মরিয়ম বেগমকে ওমরাহ হজ করানোর উদ্দেশ্যে সৌদিয়া আরব নিয়ে যান। গত ২৯ নভেম্বর মা ও খালাকে সাথে নিয়ে নুরুল আলমও পবিত্র ওমরাহ হজ পালন করেছেন। বর্তমানেও তারা সেখানে রয়েছেন। ঘটনারদিন দুর্ঘটনার দশ মিনিট আগেও তার মায়ের সাথে মুঠোফোনে কথা বলেছেন। এ সময় তার মা জানান–ছেলে নুরুল আলম গাড়ি নিয়ে বাসা থেকে কাজে বের হয়েছে, একটু পরেই চলে আসবে। কিছুক্ষণ পর মুঠোফোনে জানতে পারেন সড়ক দুর্ঘটনায় তার ছেলের মৃত্যু হয়েছে।
আধুনগর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবুল কালাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, প্রবাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নুরুল আলমের মৃত্যু খবরে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার মরদেহ সেখানে দাফন কিংবা দেশে আনার ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সবধরনের সহযোগিতা করা হবে।











