ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে মামলার আসামি হওয়ার পর পালিয়ে ভারতে গিয়ে গ্রেপ্তার বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানাকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ। তবে ভারতে তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে পাসপোর্ট আইনে মামলা হওয়ায় ফিরিয়ে আনার বিষয়টি কিছুটা বিলম্বিত হতে পারে বলে মনে করছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। এদিকে সোহেল রানাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় তার সাময়িক বরখাস্তের আদেশ হয় বলে ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপকমিশনার আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন।
ই-অরেঞ্জের মালিকসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে গত ৩১ আগস্ট ঢাকার হাকিম আদালতে একটি মামলা করেন এক ভুক্তভোগী। সেখানে আসামির তালিকায় রানার নামও ছিল। তিনি দালাল ধরে ভারতে পালিয়েছিলেন। তিনি ভারতে গিয়ে ধরা পড়ার পর তার সহকর্মীদের কাছে এই তথ্য পাওয়া গেছে। খবর বিবিসি বাংলা ও বিডিনিউজের।
সোহেল রানাকে বিএসএফ আটক করার পর পুলিশ বলছে, তারা রানাকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। শুক্রবার ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন তিনি। তাকে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ থানা পুলিশ গতকাল আদালতে হাজির করে। আদালত তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। রানা এখন মেখলিগঞ্জ থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান জানান, শেখ সোহেল রানার আটকের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত ভারতের পুলিশের কাছ থেকে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানতে পারেননি। তবে গণমাধ্যমের বরাতে জানতে পারার পর তারা রানাকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।
তিনি বলেন, ই-অরেঞ্জ সংক্রান্ত দুইটা মামলা হয়েছে, যার একটিতে সোহেল রানার নাম আছে। ই-অরেঞ্জের স্বত্বাধিকারী সোনিয়া মেহজাবিনের ভাই এবং রানা পালিয়ে গেছেন। সব মিলিয়ে আমরা তদন্ত করছি। প্রোপারলি আমাদের কাছে হ্যান্ডওভার করার কাজ করছি। আমাদের দেশে যেহেতু তার নামে ফৌজদারি মামলা আছে সেহেতু আমাদের হাতে তাকে হ্যান্ডওভার করার জন্য বলব।
বিএসএফ জানিয়েছে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তারা শুক্রবার বিকেলে শেখ মো. সোহেল রানাকে চ্যাংড়াবান্ধা সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার করেছে। দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহল দিয়ে তিনি দালালের মাধ্যমে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করেন। তার গন্তব্য ছিল নেপালের কাঠমান্ডু। সেখানে তার এক বোন থাকেন। বোনের স্বামীর ভারতের শিলিগুড়িতে এসে তাকে নেপালে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল।
এদিকে পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর বলেছেন, যেহেতু ভারতের সঙ্গে আসামি প্রত্যার্পণ চুক্তি রয়েছে। তাই সোহেল রানাকে আসামি হিসেবে ফেরত আনা যাবে। যেহেতু সেখানে মামলা (ভারত) হয়েছে, আসামি হিসেবে ফিরিয়ে আনা যাবে বলে আমরা মনে করি। গতকালও (শনিবার) আনঅফিসিয়ালি যোগাযোগ করা হয়েছে। এখন ফরমালি আবেদন করব। সরকারি চাকরিবিধি অমান্য করায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশে রানার বিরুদ্ধে মামলা এবং একই সঙ্গে অনুপ্রবেশের অভিযোগ থাকায় তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সুস্পষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে বলে আইনজীবীরা বলছেন। আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, সোহেল রানার বিরুদ্ধে যেহেতু ফৌজদারি মামলা আছে দেশে। তাই তাকে ফিরিয়ে আনা জটিল কিছু হবে না। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৮৮ নম্বর ধারায় উল্লেখ করা এক্সট্রা টেরিটরিয়াল জুরিসডিকশন অব বাংলাদেশ ল’য়ের উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে করলে অপরাধ হবে, এমন কোনো অপরাধ যদি বিদেশে বসে করেন তাহলে সেটার বিচার বাংলাদেশে করা সম্ভব। তবে সেটার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লিখিত অনুমোদন লাগে। এই বিষয়গুলো উল্লেখ করেই যদি আলোচনা করা হয় তাহলে তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য খুব বেশি জটিলতা নেই। তবে পুরো ব্যাপারটা কূটনৈতিক লেভেলে আলাপ আলোচনা করে কত দ্রুততম সময়ের মধ্যে করতে পারেন সেটার উপর নির্ভর করবে।
সোহেল রানা ২০০৩ সালে পুলিশ বাহিনীতে এসআই হিসেবে যোগ দেন। ওই বছরই আরও ২১ জনের সঙ্গে চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন তিনি। তবে ২০০৮ সালে চাকরি ফিরে পান।
এর আগে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমদকে ভারতে অনুপ্রবেশের দায়ে গ্রেপ্তার করা হয় ২০১৫ সালে। ২০১৮ সালে তিনি খালাস পান অনুপ্রবেশের দায় থেকে। কিন্তু পাসপোর্ট ভিসা না থাকায় রাষ্ট্রপক্ষ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। ফলে এখনো দেশে ফিরতে পারেননি তিনি।