নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে জিতে সিরিজে এগিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ ‘এ’ দল। গতকাল দ্বিতীয় ম্যাচে জিতে এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজও জিতে নিল স্বাগতিকরা। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় এক দিনের ম্যাচে নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দলকে ৮৭ রানে হারায় বাংলাদেশ ‘এ’ দল। এক ম্যাচ বাকি থাকতেই তিন ম্যাচ সিরিজের ট্রফি নিশ্চিত করে ফেলে তারা। গতকালের ম্যাচে সোহান এবং মাহিদুলের সেঞ্চুরির পর বোলারদের সম্মিলীত আক্রমণে বড় জয় পায় বাংলাদেশ ‘এ’ দল।
টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে চতুর্থ ওভারে ক্রিস্টিয়ান ক্লার্কের অফ স্টাম্পের বাইরে চমৎকার ডেলিভারিতে স্লিপে ক্যাচ দেন পারভেজ হোসেন। তিন নম্বরে নেমে শুরুতে কয়েকটি শর্ট বলে অস্বস্তিতে ভোগেন এনামুল হক। তবে দ্রুতই সামলে নেন। শুরুর ধাক্কা সামলে দ্বিতীয় উইকেটে ৫৬ বলে ৭৩ রান যোগ করেন এনামুল ও নাঈম। কিন্তু দুজনের কেউই সম্ভাবনাময় ইনিংসের পূর্ণতা দিতে পারেননি। নিজের ভুলে রান আউট হয়ে ফিরেন ৩৪ বলে ৩৯ রান করা এনামুল। দুই ওভার পর দলকে একশর কাছে রেখে আউট হন নাঈম। ৪১ বলে ৬টি চারের সাহায্যে ৪০ রান করে বাঁহাতি ওপেনার ধরা পড়েন লং অফ সীমানায়। এরপর শুরু মাহিদুল ও সোহানের ম্যারাথন জুটির। শুরুতে রানের জন্য কিছুটা ধুঁকতে থাকেন মাহিদুল। তবে সোহান ছিলেন সাবলীল। ৫৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি পুরণ করেন সোহান। অন্য প্রান্তে মাহিদুলের পঞ্চাশ করতে লাগে ৬৮ বল। ফিফটির পর দুজনই রানের গতি বাড়ানোয় মন দেন। কিন্তু ব্যক্তিগত ৮০ রানের মাথায় জীবন পার সোহান। ক্লার্কের লেগ স্টাম্পের বাইরের বল ফাইন লেগে ক্যাচ দেন সোহান। কিন্তু সহজ সুযোগ নিতে পারেননি ফোকস। জীবন পাওয়ার পর ৯২ বলে লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরি পূরন করেন সোহান। তিন অঙ্ক ছোঁয়ার আগে মাহিদুলও বেঁচে যান অল্পের জন্য। ক্লার্কসনের বলে পয়েন্টে ক্যাচ নিয়ে ভারসাম্য ধরে রাখতে পারেননি কার্টার। ৯১ রানে জীবন পান মাহিদুল। এরপর আর ঝুঁকি না নিয়ে ১০৩ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। পঞ্চাশ থেকে একশতে যেতে মাত্র ৩৫ বল খেলেন তিনি। মাহিদুলের সেঞ্চুরির আগেই অবশ্য ড্রেসিং রুমে ফিরে যান সোহান। তার বিদায়ে ভাঙে ১৯৩ বলের ম্যারাথন জুটি। দেশের ক্রিকেটে এই সংস্করণে চতুর্থ উইকেটে এর চেয়ে বড় জুটি আছে আর একটি। ১১০ বলে ১১২ রান করে ফিরেন সোহান। সোহানের বিদায়ের পর কাঙ্খিত গতি পায়নি বাংলাদেশের ইনিংস। আশা জাগিয়েও সাড়ে তিনশ ছোঁয়া হয়নি তাদের। মাহিদুল ফিরেন ১০৫ রান করে। আর তাতেই ৩৪৪ রানের সংগ্রহ পায় স্বাগতিক দল।
জবাবে ব্যাট করতে নামা নিউজ্যিলান্ডের ডেল ফিলিপস শুরুতে ঝড় তুললেও আর কারও সমর্থন পাননি। ৪১ বল বাকি থাকতেই ২৫৭ রানে গুটিয়ে যায় সফরকারীরা। শুরুর কয়েক ওভার দেখেশুনে কাটিয়ে পরে ঝড় তোলেন ফিলিপস। অষ্টম ওভারে আক্রমণে এসে হিফিকে ফিরিয়ে ৪৬ বলে ৫২ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন মোসাদ্দেক। তবু ঝড় থামাননি ফিলিপস। ১৫তম ওভারে বোলিংয়ে ফিরে বিপজ্জনক হয়ে ওঠা ফিলিপসকে আউট করেন শরিফুল। বড় শট খেরতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ দেন ফিলিপস। ফেরার আগে ৫৪ বলে ৭৯ রান করা ওপেনার। এরপর ম্যাট বয়েল, জো কার্টার ও নিক কেলি দ্রুত ফিরলে চাপে পড়ে যায় নিউজিল্যান্ড। ছয় নম্বরে নেমে পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করেন ক্লার্কসন। তবে তাকে বেশি দূর যেতে দেননি তানভির। বোল্ড হওয়ার আগে ৪ চার ও ১ ছক্কায় করেন ৩৪ রান। গত মাসে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭৮ বলে ৯৯ রানের ইনিংস খেলা মিচেল হে এবার দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে এক প্রান্ত আগলে রাখেন। তবে ক্রমেই বাড়তে থাকে চাপ। দ্রুত রানের খোঁজে বড় শট খেলার চেষ্টায় ওয়াইড লং অনে এনামুলের দারুণ ক্যাচে বিদায় ঘটে তার। ২টি করে চার–ছক্কায় করেন ৪৪ বলে ৩৮ রান। শেষ দিকে ৩৬ বলে ৩৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ৯ নম্বরে নামা ক্লার্ক। স্বাগতিকদের পক্ষে মোসাদ্দেক নেন ৩ উইকেট। এছাড়া শরিফুল, তানভির ও শামীমের শিকার ২টি করে উইকেট। একাদশে সুযোগ পাওয়ার ম্যাচে ১ উইকেট পেলেও ৬ ওভারে ৫৭ রান দেন রাজা। ম্যাচ সেরা হয়েছেন নুরুল হাসান সোহান। আগামী শনিবার তৃতীয় ও শেষ এক দিনের ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই দল।