সোনাইছড়ি খাল পুনঃখনন, উপকৃত হবেন সাড়ে তিন হাজার কৃষক

মোহাম্মদ মারুফ, লোহাগাড়া | রবিবার , ১২ মে, ২০২৪ at ১১:৪১ পূর্বাহ্ণ

লোহাগাড়ার বড়হাতিয়ায় সোনাইছড়ি খাল পুনঃখননে উপকৃত হবেন প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কৃষক। ইতোমধ্যে খালের খনন কাজ শুরু হয়ে গেছে। খনন কাজ শেষ হলে পানি প্রবাহ ও ফসল উৎপাদন বাড়বে। খাল খননে নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন কৃষক ও মাছ চাষিরা। এছাড়া আগামী আমন মৌসুমে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পাবে বলে জানিয়েছেন তারা। তবে যেসব এলাকায় এখনো খাল খনন করা হয়নি সেসব এলাকার খালগুলো পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। এতে এসব এলাকায় সেচের পানির তীব্র সংকট রয়েছে। শীঘ্রই ওইসব এলাকার খাল খননের দাবি জানিয়েছেন চাষিরা।

জানা যায়, উপজেলার বড়হাতিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত সোনাইছড়িসহ কয়েকটি খাল পুনঃখননের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর আবেদন করেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বিজয় কুমার বড়ুয়া। উক্ত আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়ে পত্র প্রেরণ করেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। তারই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন ‘চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় ভূউপরিস্থ পানি ব্যবহারের মাধ্যমে সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের’ আওতায় সোনাইছড়ি খালের ২ কিলোমিটার পুনঃখনন কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, সোনাইছড়ি খাল খননের ফলে সারা বছর পানি পাবে এলাকাবাসী। এছাড়া খালের পানি ব্যবহার করে আবাদ করা যাবে। খাল খনন কাজ শেষ হলে এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসন, মাঠে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি, দেশি মাছের প্রজনন বৃদ্ধিসহ পরিবেশ বাঁচবে। দেরিতে হলেও এমন উদ্যোগ এলাকাবাসীসহ সবার জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে। তবে খাল খনন কাজ যাতে স্বচ্ছতার সাথে হয় সেই উদ্যোগ নিতে হবে। খননের পাশাপাশি পুণরায় যাতে বেদখল হয়ে না যায় সে বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান স্থানীয়রা। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন সূত্রে জানা যায়, ২০২৩২৪ অর্থ বছরে ‘চট্টগ্রাম ও কঙবাজার জেলায় ভূউপরিস্থ পানি ব্যবহারের মাধ্যমে সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের’ আওতায় সোনাইছড়ি খালের ২ কিলোমিটার পুনঃখনন কাজের বরাদ্দ ২৪ লাখ টাকা। খননের পর খালের প্রস্থ হবে ২৬ ফুট আর গভীরতা ১০ ফুট। খনন কাজ শেষে খালের সেচ সুবিধা পাবে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কৃষক। সেচ সুবিধার আওতায় আসবে প্রায় ২৫০ হেক্টর জমি।

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, বড়হাতিয়া ইউনিয়নের চাকফিরানি দরবেশ পাহাড় এলাকা থেকে সেনেরহাট পর্যন্ত বিস্তৃত সোনাইছড়ি খাল। খালের ওই বিস্তৃত অংশের ২ কিলোমিটার পুনঃখনন করা হচ্ছে। ওই খালটি সেনেরহাট এলাকায় গিয়ে হাতিয়ার খালের সাথে যুক্ত হয়েছে। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, সোনাইছড়ি খালটি বহু পুরোনো। আগে ওই খালের প্রবাহিত পানি দিয়ে চাষাবাদ হতো। পর্যায়ক্রমে পলি জমে ভরাট ও বেদখল হয়ে যাওয়ার কারণে খাল তার যৌবন হারিয়ে ফেলে। এক পর্যায়ে খালটি নালায় পরিণত হয়েছে। এছাড়া খালের নাব্যতা না থাকায় বর্ষায় বৃষ্টির পানি জমা হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য ও ক্ষেতে ফলানো ফসল নষ্ট হতো। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হতো সাধারণ মানুষকে। খালটি পুনঃখনন কাজ শেষে হলে কৃষি বিপ্লবের পাশাপাশি উপকৃত হবেন সাধারণ মানুষ।

স্থানীয় কৃষক আমির হোসেন জানান, এই জনগুরুত্বপূর্ণ সোনাইছড়ি খালের পানির উপর এলাকার কৃষকরা নির্ভরশীল ছিলেন। কিন্তু খালটি কখনো খনন করা হয়নি। ফলে এক সময়ের খরস্রোতা এ খালের দুই পাশের অনেক জমি অনাবাদি হয়ে পড়ে। খাল খনন হলে ঠিক সময়ে ক্ষেতে পানি পাওয়া যাবে। ফলে সঠিক সময়ে চাষাবাদ শুরু করতে পারবো। পতিত জমির পরিমাণ কমবে। ধানসহ সবজি উৎপাদনও বেশি হবে। এছাড়া খালের পানিতে মাছ চাষও করা যাবে।

অপর কৃষক নাজিম উদ্দিন জানান, সোনাইছড়ি খাল পুনঃখনন কাজ শুরু হওয়ায় এলাকার কৃষকরা নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। এতে আমাদের এই এলাকার চাষিদের কৃষি কাজে অনেক সুবিধা হবে। পানির প্রবাহ ঠিক থাকলে আমাদের ক্ষেতগুলো বছরজুড়ে ফসলে ভরে থাকবে। এছাড়া শুষ্ক মৌসুমেও খালের পানি সংরক্ষণ করা যাবে।

বড়হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বিজয় কুমার বড়ুয়া জানান, সোনাইছড়ি খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে কৃষকরা সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতেন। এছাড়া বর্ষায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে এলাকাবাসী দুর্ভোগ পোহাতেন। খালটি খনন কাজ শেষ হলে শুষ্ক মৌসুমেও কৃষকরা সেচ সুবিধা ও এলাকাবাসী বর্ষায় জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে লাঘব পাবেন। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদ ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার বদান্যতায় খালটি খনন হচ্ছে।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ইউনিটের উপসহকারী প্রকৌশলী (ক্ষুদ্রসেচ) মো. ইকবাল হোসেন জানান, সোনাইছড়ি খাল পুনঃখনন কাজ আগামী জুন মাসের মধ্যে শেষ হবে। খালটি খননের ফলে কৃষকসহ এলাকার সর্বস্তরের লোকজন উপকৃত হবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা হালিশহর থানা কমিটির সম্মেলন
পরবর্তী নিবন্ধসরফভাটায় শিক্ষাসামগ্রী বিতরণ