সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ (১৯২২–১৯৭১)। আধুনিক বাঙালা সাহিত্যের এক স্তম্ভপ্রতিম কথাশিল্পী। কল্লোল যুগের ধারাবাহিকতায় তাঁর আবির্ভাব হলেও তিনি ইউরোপীয় আধুনিকতায় পরিশ্রুত নতুন সাহিত্য বলয়ের সৃষ্টি করেন। জগদীশ গুপ্ত, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখের উত্তরসূরী এই কথাসাহিত্যিক অগ্রজদের কাছ থেকে পাঠ গ্রহণ করলেও বিষয়, কাঠামো ও ভাষা–ভঙ্গীতে নুতন এক ঘরানার জন্ম দিয়েছেন। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর লেখন শৈলী, দৃশ্য বিন্যাস ও গল্প নির্মাণের ধরন পাঠকদের সহজেই আকৃষ্ট করে। তাঁর জন্ম ১৯২২ সালের ১৫ আগস্ট চট্টগ্রাম শহরের ষোলশহরে। তাঁর পিতা সৈয়দ আহমাদুল্লাহ ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা, মা নাসিম আরা খাতুন। পিতার বদলীর চাকরীর সুবাদে ওয়ালিউল্লাহ পূর্ব বাংলার বিভিন্ন অংশ দেখার সুযোগ লাভ করেন। ওয়ালিউল্লাহর শিক্ষাজীবন কেটেছে দেশের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে। ১৯৩৯ সালে তিনি কুড়িগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় হতে ম্যাট্রিক, এবং ১৯৪১ সালে ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। তার আনুষ্ঠানিক ডিগ্রী ছিলো ডিস্টিঙ্কশনসহ বিএ এবং অর্থনীতি নিয়ে এমএ ক্লাসে ভর্তি হয়েও শেষে পরিত্যাগ করেন। এবং স্বেচ্ছায় তিনি কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। তিনি ১৯৪৮ সালে তিনি ইংরেজি দৈনিক দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকায় চাকুরি নেন। এ সময়ে তার প্রথম গ্রন্থ নয়নচারা গল্পগ্রন্থ বের হয়। নিয়মিত লেখালেখি শুরু করেছিলেন ১৯৪১–৪২ সাল নাগাদ। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পরই তিনি দ্য স্টেটসম্যান এর চাকুরি ছেড়ে দিয়ে রেডিও পাকিস্তানের ঢাকা কেন্দ্রের সহকারী বার্তা–সম্পাদকের চাকুরি নেন। কাজের ভার কম ছিলো, লালসালু উপন্যাস লেখায় হাত দিলেন নিমতলীর বাসায়। পরের বছরই এ উপন্যাস গ্রন্থাকারে প্রকাশ করে কমরেড পাবলিসার্স। করাচি কেন্দ্রের বার্তা সম্পাদক হয়ে ঢাকা ছাড়েন ১৯৪৮ সালে। সেখান থেকে নয়াদিল্লিতে পাকিস্তান দূতাবাসে তৃতীয় সেক্রেটারির পদমর্যাদায় প্রেস–আতাশে হয়ে যান ১৯৫১ তে।
এরপর বিভিন্ন দেশে পাকিস্তান দূতাবাসের প্রতিনিধি হয়ে কাজ করেন ১৯৬১ পর্যন্ত। এরই মধ্যে প্রকাশিত হয়েছিলো লালসালুর ফরাসি অনুবাদ লারব্র্ সা রাসিন (শিকড়হীন গাছ)। দূতাবাসের চাকুরি ছেড়ে চুক্তিভিত্তিক প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট পদে যোগ দেন ইউনেস্কোতে, ১৯৬৭ সালের ৮ আগস্ট, চাকুরিস্থল ছিলো প্যারিস শহরেই, ইউনেস্কো সদর দপ্তরে। ১৯৭০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ইউনেস্কোতে তার চাকুরির মেয়াদ শেষ হয়েছিলো। অবসর গ্রহণের নিয়ম হিসাবে পাকিস্তান সরকার ইসলামাবাদে বদলি করে কিন্তু তিনি প্যারিসেই থেকে গিয়েছিলেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থগুলো হচ্ছে উপন্যাস– লালসালু, ১৯৪৯; চাঁদের অমাবস্যা, ১৯৬৪; কাঁদো নদী কাঁদো, মে, ১৯৬৮; ঢাকা ছোটগল্প– নয়নচারা, ১৯৪৫; দুই তীর ও অন্যান্য গল্প, ১৯৬৫। ১৯৭১ সালের ১০ অক্টোবর তিনি ফ্রান্সে মৃত্যুবরণ করেন।