সৈকত থেকে শতাধিক টং দোকান উচ্ছেদ

সুগন্ধা পয়েন্টের ঝাউবনে অভিযান, দিনভর উত্তেজনা

কক্সবাজার প্রতিনিধি | সোমবার , ১৩ অক্টোবর, ২০২৫ at ৭:৫১ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজার সৈকতের বালিয়াড়ি দখলমুক্ত করতে অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসন। গতকাল বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টের ঝাউবনে এ অভিযান চালানো হয়। এ সময় উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিপুল সংখ্যক সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশের সদস্য মোতায়েন করা হয়। এর আগে বেলা ১১টার দিকে বালিয়াড়িতে বসানো দোকানপাট ও স্থাপনা সরিয়ে নিতে সময় বেঁধে দেয় জেলা প্রশাসন। এ সময়ের মধ্যে অনেকেই টং দোকান সরিয়ে নেয় এবং বালিয়াড়ি থেকে তুলে সড়কে ফেলে রাখে। জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সৈকতের প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা থেকে সব ধরনের স্থাপনা উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত হয়েছে। শনিবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অংশীজনদের সঙ্গে এক জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কক্সবাজারে সদ্য যোগদান করা জেলা প্রশাসক মো. . মান্নানের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই অভিযান ঘিরে দিনভর নানা নাটকীয়তা আর উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। অবৈধ দোকানগুলো দখল সরিয়ে নিতে সকালের দিকে প্রথমবার সময় দেয়া হয়। ওই সময় নানা চেষ্টা ও চাপ প্রয়োগ সত্ত্বেও অধিকাংশ দোকান সরিয়ে নেয়নি। যারা নেয় তারাও বালিয়াড়ি থেকে তুলে রাস্তায় নিয়ে রাখে। এসময় মাইকে প্রশসানের পক্ষ থেকে বার বার ঘোষণা দিলেও তাতে কর্ণপাত করেনি দখলদাররা। এক পর্যায়ে দুপুর ১২টার দিকে আরো দুই ঘণ্টা সময় বাড়িয়ে বেলা ২টা পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। এই সময়েও দোকানগুলো সরিয়ে নেয়নি দখলদাররা। এক পর্যায়ে প্রশাসন অ্যাকশনে যায়। বুলডোজার দিয়ে দোকানগুলো গুড়িয়ে দিতে শুরু করলে তড়িঘড়ি করে সরিয়ে নিতে শুরু করে দখলদাররা। তারপরও নানা গড়িমসি করে এবং তা সন্ধ্যা নাগাদ চলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত নানা চেষ্টা করে সব দোকান উচ্ছেদ করতে সক্ষম হয় প্রশাসন।

এ ব্যাপারে ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার অঞ্চলের প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ জানান, বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে না সরানোর কারণে শতাধিক টং দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে। বালিয়াড়ি দখলমুক্ত রাখতে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে থাকবে। প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় আর কেউ যেন স্থাপনা না করে তার জন্য সতর্ক করা হয়েছে।

কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহিদুল আলম বলেন, জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মতে, দখলদারদের উচ্ছেদ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হয়েছে। আমরা চেয়েছি কোনো অঘটন ও ভাঙচুর ছাড়াই উচ্ছেদ কার্যক্রম চালাতে। সারাদিন নানা বিড়ম্বনার পর অবশেষে সব দোকান উচ্ছেদ করতে সক্ষম হয়েছি। দখলদাররা যাতে আর বসতে না সে জন্য কঠোর ব্যবস্থা জোরদার করা হবে।

অভিযোগ রয়েছে, গত এক বছরে কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক, সুগন্ধা, কলাতলী, দরিয়ানগর, হিমছড়ি, সোনারপাড়া, ইনানী, পাটুয়ারটেক ও টেকনাফ সৈকতে কয়েকশ দোকানপাট ও স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। সৈকতের জনপ্রিয় পর্যটন স্পটগুলোতে বেশি দখলের ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে গতমাসে বিদায়ী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনের বদলি আদেশ আসার পর পরই সুগন্ধা পয়েন্ট সৈকতে শতাধিক টংঘর বানিয়ে বসানো হয়। পাশাপাশি সৈকতের অন্যান্য পয়েন্টেও বসেছে ভ্রাম্যমাণ দোকান পাট। সৈকতের প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় এসব স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ ওঠে। কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার সমুদ্রসৈকত ১৯৯৯ সালে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে সরকার। আইন অনুযায়ী, সৈকতের জোয়ারভাটার অঞ্চল থেকে ৩০০ মিটার পর্যন্ত যেকোনো স্থাপনা নির্মাণ ও উন্নয়ন নিষিদ্ধ। এর আগে গত বছরের ডিসেম্বর ও ২০২৩ সালেও একাধিকবার অভিযান চালিয়ে জেলা প্রশাসন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছিল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবান্দরবানে ডাকা আজকের হরতাল প্রত্যাহার
পরবর্তী নিবন্ধআড়াই টন ইলিশসহ ৪ নৌকা জব্দ