সেলিম আল দীন(১৯৪৮–২০০৮)। প্রখ্যাত নাট্যকার ও গবেষক। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তিনি নাটকের আঙ্গিক ও ভাষার উপর গবেষণা করেছেন। প্রজ্ঞা, মেধা, মনন ও দক্ষতায় যে ক’জন নিরলস সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আমাদের লোকজ বাংলার উর্বর সংস্কৃতিকে বহুমাত্রিকতায় বহুদূর এগিয়ে নিয়ে গেছেন নাট্যকার সেলিম আল দীন তাদের মধ্যে অন্যতম। সেলিম আল দীনের জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৮ নভেম্বর ফেনীর সেনেরখিল গ্রামে। তিনি নিজ গ্রাম সেনেরখিলের মঙ্গলকান্দি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৪ সালে এসএসসি, ১৯৬৬ সালে ফেনী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। টাঙ্গাইলের করটিয়া সা’দত কলেজ থেকে স্নাতক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাঙলা ভাষা ও সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯৫ সালে তিনি জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে ‘মধ্যযুগের বাঙলা নাট্য’ শীর্ষক অভিসন্দর্ভের জন্য পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭৪ সাল থেকে অধ্যাপনা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁরই আগ্রহ ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৮৬ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘নাটক ও নাট্যতত্ত্ব’ বিভাগ। তাঁর হাত ধরেই বাংলা নাটক নিজস্ব সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ন রেখে বিশ্বসংস্কৃতির অঙ্গনে প্রবেশ করে। মধ্যযুগের বাংলা নাট্যরীতিকে আধুনিক স্তরে অবতীর্ণ করে তোলার প্রথম কৃতিত্ব তাঁর। ঢাকা থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের অন্যতম ছিলেন সেলিম আল দীন। নাটক রচনার ক্ষেত্রে কল্পনার চেয়ে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও তথ্য–উপাত্তের ওপর নির্ভর করতেন তিনি। এক্ষেত্রে সেলিম আল দীন ছিলেন প্রচণ্ড পরিশ্রমী ও অধ্যাবসায়ী। ‘জণ্ডিস ও বিবিধ বেলুন’, ‘বাসন’, কিত্তনখোলা’, ‘বনপাংশুল’, ‘প্রাচ্য’, ‘আততায়ী’, ‘কেরামত মঙ্গল’, ‘যৈবতী কইন্যার মন’, ‘হাত হদাই’, ‘নিমজ্জন’, ‘স্বর্ণবোয়াল’ এইসব নাটক তারই স্বাক্ষরবাহী। বিষয় নির্বাচন ও নতুন আঙ্গিক নির্মাণে সেলিম আল দীনের নাটক অতুলনীয়। সেই সাথে চরিত্র চিত্রণ, বাক্য বিন্যাস, চিত্রকল্প, শিল্পসৌকর্য, বর্ণনা রীতি সব কিছুতেই তিনি সুনিপুণ আর দক্ষ এক শিল্পী। গবেষণাধর্মী বহু নাটকের নির্দেশক হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও একুশে পদকসহ বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন এই নাট্যব্যক্তিত্ব। ২০০৮ সালের ১৪ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।