প্রথম রাউন্ডে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে আফগানিস্তানের স্বপ্নযাত্রার শুরু। সুপার এইটে তারা হারিয়ে দেয় বিশ্ব ক্রিকেটের পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়াকে। বাংলাদেশের বিপক্ষেও চাপের ম্যাচে আদায় করে নেয় জয়। কঠিন দুই ধাপ পাড়ি দিয়ে সেমি–ফাইনালে পা রাখার পর তাই অধিনায়ক রাশিদ খান বেশ জোর দিয়েই বললেন, যোগ্য দল হিসেবেই সেরা চারের একটি জায়গা আদায় করে নিয়েছেন তারা। সেন্ট ভিনসেন্টে গতকাল মঙ্গলবার ডাকওয়ার্থ–লুইস–স্টার্ন পদ্ধতিতে বাংলাদেশকে ৮ রানে হারায় আফগানিস্তান। ম্যাচের এক পর্যায়ে তাদের পরাজয়ের শঙ্কাও অবশ্য জেগেছিল। লিটন কুমার দাস একপ্রান্ত ধরে রেখে এগিয়ে নিচ্ছিলেন দলকে। ১১৬ রানের লক্ষ্যে দশ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ৭৭ রান করে ফেলে বাংলাদেশ। একাদশ ওভারের শেষ দুই বলে মাহমুদউল্লাহ ও রিশাদ হোসেনকে আউট করে আফগানিস্তানকে ম্যাচে ফেরান রাশিদ।
সামগ্রিকভাবে এখন পর্যন্ত ৭ ম্যাচে ৫ টি জয় পেয়েছে আফগানিস্তান। ২০১০ সাল থেকে বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া দলটির এটিই এক আসরে সবচেয়ে বেশি জয়। ২০১৬ সালে ৭ ম্যাচে ৪টি জিতেছিল তারা। তবে সেবার সুপার টেন থেকে পরের ধাপে যেতে পারেনি। গ্রুপের পাঁচ দলের মধ্যে সবার নিচে থেকে বিশ্বকাপ শেষ করে তারা। প্রায় ৮ বছর পর নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো দলগুলোকে বিদায় করে সেমি–ফাইনালে ওঠার পর সংবাদ সম্মেলনে রশিদ বললেন, উপযুক্ত দল হিসেবেই শেষ চারের মঞ্চে তারা ঠাঁই করে নিয়েছেন। আমি আসলে জানি না, কীভাবে অনুভূতি প্রকাশ করব। সেমি–ফাইনালে ওঠা আমাদের জন্য অনেক বড় অর্জন। এখনও পর্যন্ত যেভাবে পুরো টুর্নামেন্টে আমরা খেলেছি, আমার মতে, সেমি–ফাইনালে খেলাটা আমাদের প্রাপ্যই। যেভাবে সবাই দায়িত্ব নিয়েছে এবং দলের জন্য সেরাটা দিয়ে পারফর্ম করেছে। জাতি হিসেবে আমাদের জন্য বিশাল অর্জন। এখন সেমির দিকে তাকিয়ে আছি আমরা।
২০১৮ ও ২০২২ সালের অনূর্ধ্ব–১৯ বিশ্বকাপে সেমি–ফাইনাল খেলেছে আফগানিস্তান। বড়দের ক্রিকেটে এবারই প্রথম তারা উঠল সেরা চারে। জাতীয় দলের এই সাফল্য আফগানিস্তানের তরুণদের জন্য বড় প্রেরণা হবে মনে করেন রাশিদ। সেমি–ফাইনালে খেলাটা দেশের তরুণদের জন্য অনেক বড় অনুপ্রেরণার উৎস হবে। আমরা অনূর্ধ্ব–১৯ বিশ্বকাপে এর আগে সেমি–ফাইনাল খেলেছি। তবে এই পর্যায়ে কখনও করিনি। এমনকি সুপার এইটে ওঠাও আমাদের জন্য প্রথম ছিল। অবিশ্বাস্য অনুভূতি এটি। আমাদের সামর্থ্য আছে তবে সেটা যতক্ষণ আমরা সব কিছু স্বাভাবিক রাখছি। পুরো টুর্নামেন্টে আমরা সবকিছু স্বাভাবিক রেখেছি। কঠিন সময় এসেছে বটে। তবে আমরা নিজেদের হতাশ করিনি এবং সবসময় শক্তভাবে ঘুরে দাঁড়ানো চেষ্টা করি। সামাজিক মাধ্যমে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়া অনেক ছবি ও ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে রশিদ খান, নাভিন–উল–হাক, মোহাম্মদ নাবিদের অর্জনে আফগানিস্তানের বিভিন্ন শহরে নেমেছে উৎসবের জোয়ার। আফগান অধিনায়কের বিশ্বাস, পুরো দেশকে গর্ব করার উপলক্ষ এনে দিতে পেরেছেন তারা। তিনি বলেন আফগানিস্তানের মানুষের উদযাপন এখনও দেখিনি। তবে আমি নিশ্চিত দেশে ব্যাপক উদযাপন হবে। এটি আমাদের জন্য অনেক বড় অর্জন। সত্যি বলতে আমার কোনো ভাষা জানা নেই অনুভূতি প্রকাশের। পুরো দেশ অনেক গর্বিত হবে। দল হিসেবে আমরা যেভাবে খেলেছি তাতে আমি খুব খুশি। আমরা দায়িত্ব নিয়েছি। সেমি–ফাইনালে ওঠা অনেক বড় বিষয়। তবে এখন আমাদের স্বচ্ছ ভাবনা নিয়ে যেতে হবে। এখন পর্যন্ত আমরা যা করেছি, যেসব বিষয় আমাদের পক্ষে কাজ করেছে, সব কিছু স্বাভাবিক রাখতে হবে। আমরা যেন বড় উপলক্ষটি উপভোগ করি তা নিশ্চিত করতে হবে।