এ বছর ৭৬ জন মেধাবী অসচ্ছল শিক্ষার্থীকে শিক্ষা বৃত্তি দিয়েছে সরকারি কমার্স কলেজ প্রাক্তন ছাত্র সমিতি। গতকাল সোমবার সকালে আজাদী অডিটরিয়ামে এ শিক্ষাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সরকারি কমার্স কলেজ প্রাক্তন ছাত্র সমিতির সভাপতি ও একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব আজাদী সম্পাদক এম এ মালেকের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন সরকারি কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর সুসেন কুমার বড়ুয়া। বক্তব্য দেন, সরকারি কমার্স কলেজের উপাধ্যক্ষ মো. আলাউদ্দিন আল আজাদ, সমিতির সাধারণ সম্পাদক তৈয়বুর রহমান। সঞ্চালনা করেন মেধাবৃত্তির আহ্বায়ক নাজমুল হক ডিউক। এবারের বৃত্তি প্রদান উৎসর্গ করা হয়েছে সমিতির প্রাক্তন সহ–সভাপতি লায়ন এম শামশুল হকের নামে। দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, শিক্ষাবৃত্তি দেশকে এগিয়ে নেওয়ার মহৎ উদ্যোগগুলোর একটি। অর্থের অভাবে অসংখ্য শিক্ষার্থী বিভিন্ন স্তরে ঝরে পড়ে। সরকারি কমার্স কলেজ প্রাক্তন ছাত্র সমিতির উদ্যোগে যে বৃত্তি দেয়া হচ্ছে তার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়া কিছুটা হলেও রোধ করতে সাহায্য করবে এবং ভবিষ্যতে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। এ শিক্ষাবৃত্তি ছাত্র–ছাত্রীদের যৎসামান্য উপকারে আসলে আমাদের উদ্যোগ সফল হয়েছে বলে মনে করবো।
এ সময় তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কে লইবে মোর কার্য, কহে সন্ধ্যারবি। শুনিয়া জগৎ রহে নিরুত্তর ছবি। মাটির প্রদীপ ছিল, সে কহিল, স্বামী, আমার যেটুকু সাধ্য করিব তা আমি’ উদ্ধৃত করে বলেন, সেই মাটির প্রদীপের মত আমরা যদি প্রত্যেকে নিজেদের হাতটুকু একটু প্রসারিত করি, মনকে যদি একটু উদারতায় ভরিয়ে দিই তাহলে আমাদের সমাজ অনেকখানি এগিয়ে যাবে।
তিনি ভূপেন হাজারিকার ‘মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্যে একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না?’ উদ্ধৃত করে বলেন, এখানে আমার একটু দ্বিমত আছে। কারণ আজকে আমরা আপনাদের (বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী) সহানুভূতি দেখাচ্ছি না। আমরা মনে করি, এটা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আল্লাহ আমাদের একটু ভালো অবস্থানে রেখেছেন, সেখান থেকে আপনাদের দিকে সেবার হাতটা প্রসারিত করা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব মনে করেই আজকের আয়োজন।
শিক্ষকের মর্যাদা স্মরণ করিয়ে দিয়ে এম এ মালেক বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, পৃথিবীতে তিনজন লোক আপনার উন্নতি ছাড়া আর কিছুই চাইবে না। এরা হচ্ছেন মা, বাবা এবং শিক্ষক। যেদিন আপনি সফল হয়ে বা বড় কোনো অফিসার হয়ে তাদের কাছে যাবেন তারা বুকে জড়িয়ে ধরে বলবে, আরও বড় হও। কোনোদিন শিক্ষককে অবহেলা করবেন না, হোক তিনি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। আপনাকে অ, আ এই শিক্ষকই শিখিয়েছেন, আপনার আরম্ভ সেখানে। সুতরাং তাকে অবহেলা করবেন না। পারলে তাদের দিকে একটু লক্ষ্যও রাখবেন।
অধ্যক্ষ প্রফেসর সুসেন কুমার বড়ুয়া বলেন, প্রতিবছর বৃত্তি দিয়ে যাচ্ছে প্রাক্তন ছাত্র সমিতি। এটা মহৎ কাজ। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বৃত্তির ১০০ টাকাও যদি খরচ হয়, একটা বইও কিন সেটা হবে ইনভেস্ট, এটা মূলধন জাতীয় ব্যয়। তোমরা একদিন নিজের পায়ে দাঁড়াবে। যেদিন তোমরা বড় হবে। সেদিন প্রাক্তন ছাত্র সমিতিতে যোগ দিয়ে তোমাদেরও অন্য শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব নিতে হবে।
সুসেন কুমার বড়ুয়া শিক্ষার্থীদের বলেন, তোমরা সার্টিফিকেট নির্ভর জ্ঞান অর্জন করো না। তিনি শিক্ষার্থীদের দক্ষতা নির্ভর কর্মমূখী শিক্ষা অর্জনে জোর দেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, জ্ঞান–বিজ্ঞানে দক্ষ মানুষ হতে হবে। ভাষাগত দক্ষতা অর্জন করতে হবে। ল্যাঙ্গুয়েজ ও স্কিল বেইস শিক্ষা অর্জন করতে হবে।
তিনি বলেন, কমার্স কলেজের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন সময়ে দরিদ্র মেধাবীদের সহযোগিতা করেছি। আমার সাহসের জায়গা মালেক ভাই (দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক)। তিনি দৈনিক আজাদী চট্টগ্রামের মানুষের প্রাণ বলেও মন্তব্য করেন।
উপাধ্যক্ষ মো. আলাউদ্দিন আল আজাদ বলেন, এ কলেজের অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী রয়েছে যারা দরিদ্র পরিবারের সন্তান। প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা তাদের সহযোগিতা করতে যে এগিয়ে আসেন তা প্রশংসনীয়, এ জন্য তাদের ধন্যবাদ।
তৈয়বুর রহমান বলেন, সদস্যদের আন্ত:সর্ম্পক উন্নয়নসহ সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।
নাজমুল হক ডিউক বলেন, বৃত্তির টাকা খুব বেশি না। কিন্তু এর মাধ্যমে এটাই স্পষ্ট আমরা প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা আপনাদের পাশে আছি।
অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তব্য দেন, দ্বাদশ শ্রেণির বৃত্তিপ্রাপ্ত আরিফুল ইসলাম ও অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রেহেনা বেগম উর্মি।
আরিফুল ইসলাম বলেন, অস্বচ্ছল মেধাবীদের এ মহৎ উদ্যোগের জন্য ধন্যবাদ। এ বৃত্তির মাধ্যমে শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে সকল বাধা অতিক্রম করে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছুতে পারবেন।
শিক্ষাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সমিতির সহ–সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাশেম, নুরুল আমিন খান, অধ্যাপক দিলীপ দাশ, সোলায়মান খান, প্রফেসর মো. রহিম উল্ল্যা, আ ন ম ওয়াহিদ দুলাল, সৈয়দ মোহাম্মদ খালেদ, সৌরভ বড়ুয়া, ফরিদ আহমদ, নওশাদ আলম চৌধুরী, জিয়া উদ্দিন আসিফ, মাহমুদ হাসান জগলুল, রানু চক্রবর্তী, বিলকিস বানু পলি, মোহসেন আলী, মাখন লাল দাশ, মাইনুল ইসরাম চৌধুরী, হুমায়ুন কবির ঢালী, মনোরঞ্জন সাহা, রনজন কান্তি দে, এহেতেশাম রিসতা, আনোয়ারুল আনিস কাঞ্চন, আবদুর রহিম আরসেনী, রুপম পালিত, মো. আবুল ফয়সাল চৌধুরী, একরাম উল্লা রনি, হারুন রশিদ রিয়াদ, তাজুল ইসলাম, মো. হাফিজুর রহমান, সৈয়দ মফিজুর রহমান, আমান উল্যা আলকাদের, শাহরিয়ার মাহমুদ খান ও জীবন সদস্য জহরুল আলম।