গত বছর (২০২২ সালে) সারাদেশে সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনার ১ দশমিক ৭১ শতাংশ সংঘটিত হয় চট্টগ্রাম শহরে। যা গত মাসে (সেপ্টেম্বর) এসে দাঁড়ায় মাত্র শূন্য দশমিক ৪৯ শতাংশ। এর আগে আগস্ট মাসে এ হার ছিল ১ দশমিক ১৩ শতাংশ। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সংস্থাটির তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় এবছর সড়ক দুর্ঘটনা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে নগরে। বিষয়টাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। অবশ্য চট্টগ্রাম শহরে কিছুটা কমলেও সড়ক দুর্ঘটনায় দেশের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে চট্টগ্রাম বিভাগ। গত মাসে দেশে ৪০২ সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১৭ জন মারা যায় এবং ৬৫১ জন আহত হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে ৭১টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ৭১ জন মারা যায় এবং ১৮২ জন আহত হয়। জানা গেছে, অদক্ষ চালক এবং তাদের অনিয়ন্ত্রিত ওভারটেক, ফিটনেসবিহীন যানবাহনই মূলত সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। পাশাপাশি পথচারীদের ট্রাফিক আইন সম্পর্কে অসচেতনতার জন্যও ঘটছে দুর্ঘটনা। এদিকে গত মাসে সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে ‘ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটির (বিআইজিআরএস) একটি জরিপ প্রকাশিত হয়। এতে দেখা গেছে, ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তিন বছরে চট্টগ্রাম মহানগরে সংঘটিত দুর্ঘটনায় ২৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৫৬ শতাংশই পথচারী। এছাড়া ৩০ শতাংশ মৃত্যু হয়েছে মোটরসাইকেল ও থ্রি হুইলার যাত্রীদের। এর আগে গত জুলাই মাসে ‘রোডসাইড অবজারভেশনাল স্টাডি’ শীর্ষক জন্স হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিটের সহযোগী বৈজ্ঞানিক ডা. শিরিন ওয়াধানিয়ার একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। অবশ্য বিআইজিআরএস অংশ হিসেবে জন্স হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট তাদের স্থানীয় অংশীদার সিআইপিআরবি’র সাথে সড়ক নিরাপত্তার অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের অংশ হিসেবে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় পর্যায়ক্রমে রোডসাইড অবজারভেশনাল স্টাডি পরিচালনা করছে উল্লেখ করা হয়। ওই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, নগরের সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ক্ষেত্রে ৯৫ শতাংশ দায়ী তিনটি শ্রেণি, যাদের ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা ব্যবহারকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই তিন শ্রেণি হচ্ছে পথচারী, মোটরসাইকেল চালক এবং সাইকেল চালক।
নগরে সড়ক দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা এবং ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগের কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। এছাড়া মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও তিন চাকার যানের ব্যাপক বৃদ্ধি ও এসব যানবাহন সড়ক–মহাসড়কে অবাধে চলাচলও দুর্ঘটনার কারণ। সড়ক–মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কে বাতি না থাকা, রাতের বেলায় ফক লাইটের অবাধ ব্যবহার, চলতি বর্ষায় সড়ক মহাসড়কের ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে যা দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। যানবাহনের ত্রুটি, উল্টোপথে যানবাহন চালানো, অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন এবং বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালানোর জন্যও দুর্ঘটনা ঘটছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্ট মাসে চট্টগ্রাম বিভাগে ৮০ দুর্ঘটনায় ৭০ জন নিহত ও ২১৭ জন আহত হয়। মাসটিতে দেশে ৪৪১ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় ৪২৬ জন। এ মাসে দেশে সংঘটিত দুর্ঘটনার ১ দশমিক ১৩ শতাংশ ঘটে চট্টগ্রাম মহানগরে। এছাড়া গত জুন মাসে চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৭ দুর্ঘটনায় মারা যায় ১০১ জন এবং আহত হয় ১১৯ জন। মে মাসে চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৮ সড়ক দুর্ঘটনায় ৮৬ জন মারা যায় এবং ১৪৬ জন আহত হয়। এপ্রিল মাসে ১০১ দুর্ঘটনায় ১০৩ জন মারা যায় এবং ১৮০ জন আহত হয়। মার্চ মাসে ৮৮ দুর্ঘটনায় ৯৮ জন মারা যায় এবং ২৩৫ জন আহত হয়। ফেব্রুয়ারি মাসে ৯৯ দুর্ঘটনায় ৯২ জন মারা যায় এবং ২১৯ জন আহত হয়।