সেন্ট মার্টিন নিয়ে ‘নেতিবাচক’ প্রচার চলছে মন্তব্য করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, দেশের একমাত্র এই প্রবাল দ্বীপকে রক্ষা করতেই পর্যটনে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে সরকার।
গতকাল সোমবার ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ওয়ান হেলথ ডে’র অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। সেন্ট মার্টিনে অনিয়ন্ত্রিতভাবে গড়ে ওঠা হোটেল–মোটেলের কারণে প্রবাল ধ্বংসের বিষয়টি তুলে ধরে রিজওয়ানা বলেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে ২০৪৫ সালের মধ্যে সকল প্রবাল ক্ষয় হয়ে সেন্টমার্টিন ডুবে যাবে। খবর বিডিনিউজের।
সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি, এই তিন মাস পর্যটকরা সেন্ট মার্টিনে যেতে পারবেন। এর মধ্যে নভেম্বরে দিনে গিয়ে দিনে চলে আসতে হবে, দ্বীপে রাত কাটানো যাবে না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে ২ হাজার পর্যটক প্রতিদিন যেতে পারবেন, রাতেও থাকতে পারবেন। তবে ফেব্রুয়ারিতে সেন্ট মার্টিনে যেতে পারবেন না কোনো পর্যটক। এ সিদ্ধান্ত নিয়ে যারা সমালোচনা করছেন, তাদের উদ্দেশে উপদেষ্টা বলেন, সেন্ট মার্টিন নিয়ে শুধু শুধুই পানি ঘোলা করা হচ্ছে। একটাতো গোষ্ঠী আছেই, আপনি যেটাই করবেন সেটাকেই একটা নেতিবাচকই প্রচারণা দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাজগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। সেটা থাকবেই, সে বাস্তবতা যে আমরা বুঝছি না, তা না।
আপনি কি সেন্ট মার্টিন আগে বাঁচাবেন নাকি পর্যটন শিল্পের আরও বিকাশ ঘটাবেন। এটাকে এ মুহূর্তে শিল্প বলা যাচ্ছে না। যেভাবে সেন্ট মার্টিনে পর্যটন চলছে সেটাকে আমার পক্ষে শিল্প বলা সম্ভব না। পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, বলা হচ্ছে যে ৪১ ভাগ কোরাল ক্ষয় হয়ে গেছে। এটা জাতীয় পরিসংখ্যান। আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্য জার্নালে বলা হচ্ছে, এভাবে চলতে থাকলে ২০৪৫ সালের মধ্যে সকল কোরাল ক্ষয় হয়ে সেন্ট মার্টিন দ্বীপটা ডুবে যাবে। তখন পর্যটনটা থাকবে কোথায়? আজকে যার বয়স এক, ২০৪৫ সালে আপনি তাকে সেন্ট মার্টিনটা কোথা থেকে দেখাবেন? সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমরা কিন্তু পর্যটনটা নিষেধ করিনি, বলেছি নভেম্বর মাসে দিনে গিয়ে দিনে চলে আসতে হবে। এটা কিন্তু পর্যটন ব্যাবসার সাথে যারা জড়িত, তারাও জানেন, কিছু পর্যটক দিনে গিয়ে দিনে চলে আসেন। এটাও সত্য। ডিসেম্বর–জানুয়ারিতে আমরা বলেছি রাতযাপন করতে পারবেন, সেটা গড়ে প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি না। সেন্ট মার্টিনে অনিয়ন্ত্রিতভাবে হোটেল–মোটেল হওয়ার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, কোরাল তুলে নিয়ে হোটেলে লাগানো হচ্ছে। পর্যটকেরা গিয়ে কোরাল তুলে ফেলছে। আপনি বিশ্বের অনেক জায়গায় যাবেন, সেখানে দেখবেন কোরাল দ্বীপে রাতযাপনতো দূরে থাক, দিনের বেলাও আপনাকে নিয়ে যাবে, ছোট বোটে নামিয়ে এক দেড় ঘণ্টা ঘুরিয়ে নিয়ে চলে আসবে। আপনি থাইল্যান্ডে দেখবেন, মালয়েশিয়ায় দেখবেন, ফিলিপাইনে দেখবেন, ওদের জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পট কয়েকবছরের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়, শুধুমাত্র রিজেনারেট করার জন্য।
আমরা একটা মাঝামাঝি অবস্থানে গেছি, কারণ এখনই যদি আমরা পর্যটনের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আনি, তাহলে ওইখানে যারা বসবাস করেন, তাদেরতো আমরা প্রস্তুতির সময়টা দিইনি। সেজন্য সেন্টমার্টিনে পর্যটন অন আছে। ডিসেম্বর–জানুয়ারিতে পর্যটকরা রাতে থাকতে পারবেন। নভেম্বরে তারা দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসতে পারবেন। আর ফেব্রুয়ারি মাসটাতে আমরা সেখানে কোন পর্যটক অ্যালাও করব না।