সেন্টমার্টিনে অনুমতি ছাড়াই নির্মাণ হচ্ছে বহুতল ভবন

হুমকির মুখে পরিবেশ

| সোমবার , ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ১০:২৬ পূর্বাহ্ণ

সেন্টমার্টিনের পরিবেশপ্রতিবেশ রক্ষায় সরকার দ্বীপে পর্যটক সীমিত করার কাজ করলেও কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই সেখানে তৈরি হচ্ছে বিলাসবহুল বহুতল ভবন। এতে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপের পরিবেশ পড়ছে হুমকির মুখে। সেন্টমার্টিন বাজারের ডান পাশে ডেইলপাড়ায় রাস্তা ঘেঁষে হোটেল ব্লু মেরিনের পশ্চিম পাশে এই ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে দুই তলার নির্মাণকাজ ৮০ ভাগ শেষ হয়েছে। বাইরে থেকে দেখে বোঝা যাচ্ছে না যে ভবনের কাজ চলছে। খবর বিডিনিউজের।

নির্মাণাধীন ভবনটির মালিক পক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ তদারকি করছেন রিয়াজ উদ্দিন (২৮) নামে এক যুবক। তিনি জানান, ঢাকার এক ব্যক্তি হোটেলটি নির্মাণ করছেন। ভবনের নাম এখনও ঠিক করা হয়নি। তিন মাস ধরে তিনি নির্মাণকাজ তদারকি করছেন। এ সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভবন নির্মাণে কোনো বাধা দেওয়া হয়নি বলেও জানান রিয়াজ। ভবন নির্মাণে পরিবেশ অধিদপ্তর কোনো ছাড়পত্র দেয় না। তারপরও কীভাবে ভবন উঠছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টাকা দিলে সেন্টমার্টিনে সবকিছু করতে পারে। ভবন নির্মাণে রাজমিস্ত্রির কাজ করছেন কক্সবাজারের নুর মোহাম্মদ। তিনি জানান, দুই মাস ধরে তারা ছয়জন শ্রমিক কাজ করছেন। এখনো পর্যন্ত তারা মালিকের দেখা পাননি। তার সঙ্গে শুধু ফোনে কথা হয়। ভবনটিতে অত্যাধুনিক ও বিলাসবহুল আবাসিক হোটেল নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশের ১৩টি প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার (ইসিএ) একটি সেন্টমার্টিন। পরিবেশ, প্রাণপ্রকৃতি রক্ষার জন্যই সেন্টমার্টিনে স্থাপনা নির্মাণে ছাড়পত্র দেয় না পরিবেশ অধিদপ্তর। পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, ২০২২ সাল পর্যন্ত দ্বীপে অবৈধভাবে নির্মিত রিসোর্টের সংখ্যা ১৯২টি। এরপরও নিয়ম ভেঙে নতুন স্থাপনা তৈরি হচ্ছে।

ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস) কক্সবাজারের প্রধান নির্বাহী ইব্রাহিম খলিল মামুন বলেন, সেন্টমার্টিন রক্ষার নামে প্রশাসন ও প্রভাবশালীরা ধ্বংসের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে। একদিকে স্থাপনা উচ্ছেদের নামে প্রচার চালিয়ে ছোট ছোট ঝুপড়িঘর ও দোকানপাট উচ্ছেদ করা হচ্ছে। অন্যদিকে একই স্থানে বড় বড় ভবন নির্মাণের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। গত ৩ বছরে এখানে দেড় শতাধিক বহুতল ভবন গড়ে উঠেছে। পরিবেশ অধিদপ্তর ও সেন্টমার্টিনের স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতা ও সহায়তায় এখানে ভবন নির্মাণ হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক জমির উদ্দিন বলেন, সেন্টমার্টিনে স্থাপনা নির্মাণে ছাড়পত্র দেয় না পরিবেশ অধিদপ্তর। যারা আইন অমান্য করে দালান ও বিভিন্ন স্থাপনার কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হবে। আমরা শিগগিরই বড় ধরনের অভিযান পরিচালনা করব।

টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে নির্মাণ সামগ্রী নেওয়া নিষিদ্ধ। সরকারি কাজের জন্য নিতে হলেও উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি নিতে হয়। তবে কিছু অসাধু ও প্রভাবশালী গোষ্ঠী রাতের আঁধারে এসব নির্মাণ সামগ্রী দ্বীপে নিয়ে যায় বলে স্থানীয় পরিবেশবাদীদের দাবি।

বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণপূর্বে মিয়ানমার সীমান্তের অদূরে সাগরের বুকে ৮ দশমিক ৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ছোট্ট প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন। কক্সবাজার জেলা শহর থেকে দূরত্ব ১২০ কিলোমিটার। সেখানে পর্যটকদের যেতে হয় সাধারণত জাহাজে করে। চলতি বছর দ্বীপটিতে পর্যটক সীমত করার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। যারা সেখানে যাচ্ছেন তাদেরকে নিবন্ধন করে যেতে হচ্ছে।

উপজেলা প্রশাসন বলছে, দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে অবৈধভাবে নির্মাণাধীন পাঁচটি ভবনের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। একই সঙ্গে এ ব্যাপারে মামলা দায়ের করতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ উল্লাহ নেজামী বলেন, সেন্টমার্টিনে নতুন করে কোনো ভবন নির্মাণ করার সুযোগ নেই। যারা ভবন নির্মাণ করে সেন্টমার্টিনের পরিবেশ নষ্ট করছে তাদের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরকে নিয়মিত মামলা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, কয়েক দিন আগে অভিযান পরিচালনা করে ডেইল পাড়ায় নির্মাণাধীন ভবনসহ, সিনবাদ, কিংশুক, স্যান্ডি বিচ রিসোর্টের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিচ দখল করে দেওয়া ঘেরাও উচ্ছেদ করার পাশাপাশি সতর্ক করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআনন্দবাজারে খুনের ঘটনায় কুমিল্লা থেকে আরেক আসামি গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধস্বপ্না রাণী শীল