লোহাগাড়ার পদুয়া ইউনিয়নের আঁধারমানিক-ধলিবিলা সংযোগ সড়কে হাঙ্গর খালে একটি সেতুর অভাবে আট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ এলাকার প্রায় ২০ হাজার মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে শত শত শিক্ষার্থী। তারপরও তাদের শেষ ভরসা ঝুঁকিপূর্ণ এই সাঁকো।
স্থানীয়রা জানান, এলাকার সিংহভাগ খেটে খাওয়া মানুষ। দীর্ঘদিন যাবত এলাকাবাসীর উদ্যোগে টাকা-পয়সা ও শ্রম বিসর্জন দিয়ে সাঁকোটি নির্মাণ করে আসছে। তবে বর্ষায় খালে পানির স্রোতে সাঁকোটি ভেঙ্গে যায়। তখন প্রায় ৪ কিলোমিটার পথ ঘুরে পূর্ব পদুয়া হাঙ্গরকুল মাঝের দোকান এলাকায় নির্মিত সেতু দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। প্রতি বর্ষায় সাঁতার কেটে খাল পারাপারে সময় দুর্ঘটনাও ঘটে। প্রয়োজনের তাগিদে এলাকাবাসীর অর্থায়নে প্রতিবছর বাঁশ, কাঠ ও খুঁটি দিয়ে সাঁকোটি নির্মাণ করে কোনরকম যাতায়াতের ব্যবস্থা করেন। বিগত দিনে জনপ্রতিনিধিরা সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিলেও এই পর্যন্ত এলাকাবাসীর ভাগ্যে দুর্ভোগ ছাড়া আর কিছুই জোটেনি। সরেজমিনে দেখা যায়, চাষাবাদের জন্য রাবারড্যামে পানি জমানোর কারণে শুষ্ক মৌসুমেও খালে পানি রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এই সাঁকো দিয়ে ৮নং ওয়ার্ডের ধলিবিলা চৌধুরী পাড়া, হাফেজের বাপের পাড়া, হানিফার চর, সেনার চর, মালিচান পাড়া, চান্দার পাড়া, মধ্যম ধলিবিলা, ৯ নং ওয়ার্ডের আঁধার মানিক বিবিজান বিবির পাড়া, আশাবিবির পাড়া, নুরজাহান বিবির পাড়া, আলী বিবির পাড়া, সাতগড় পাড়া, শীল পাড়া, পাল পাড়া, আউলিয়া পাড়া ও দিঘীর পাড়ার প্রায় ২০ হাজার লোকজন যাতায়াত করেন।
অপরদিকে, আঁধার মানিক পি.ডি.এস উচ্চ বিদ্যালয়, আঁধার মানিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আঁধার মানিক বিদ্যাকানন একাডেমি, শাহ মজিদিয়া মদিনাতুল উলুম হেফজখানা ও এতিমখানা, শাহ মজিদিয়া ইবতেদায়ি মাদ্রাসা, ধলিবিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ধলিবিলা মঈনুল উলুম রহমানিয়া ইবতেদায়ি মাদ্রাসা ও পার্বত্য এলাকার আলীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এসব এলাকার প্রায় ২ হাজার শিক্ষার্থী ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করে। এছাড়া মাস্টার ছিদ্দিক আহমদ কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে ধলিবিলা এলাকার লোকজনকে এই ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো পারাপার হয়ে আসতে হয়।
আঁধার মানিক পি.ডি.এস উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মর্জিনা আক্তার শিফা, তানিয়া সোলতানা সোনিয়া ও মোহাম্মদ মিনহাজ জানায়, প্রতিদিন ধলিবিলা হানিফার চর থেকে ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো পার হয়ে বিদ্যালয়ে আসতে হয়। এমন ঝুঁকিপুর্ণ সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করতে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। একটি সেতু নির্মাণ করা হলে স্কুলে আসা-যাওয়া করতে অনেক সুবিধা হবে। এজন্য তারা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ কামনা করেছে।
আঁধার মানিক বিদ্যাকানন একাডেমির শিক্ষক মুহাম্মদ জাহেদ বলেন, একটি সেতু নির্মাণ হলে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এলাকাবাসীও উপকৃত হবেন। স্থানীয় কৃষক আহমদ উল্লাহ জানান, ধলিবিলা ও আঁধার মানিক এলাকায় প্রচুর চাষাবাদ হয়। তাদের উৎপাদিত খাদ্যশস্য ও কৃষিপণ্যসহ বিভিন্ন কাঁচামাল বাজারজাতকরণে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। একটি সেতু নির্মাণ হলে কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি হবে। স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, সেতু নির্মাণ হলে উভয় পাশের বহু মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হবে। এলাকার জনগণের সুবিধার্থে দ্রুত সেতু নির্মাণের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ কামনা করছি।
লোহাগাড়া উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মোহাম্মদ ইফরাদ বিন মুনির বলেন, এলাকাবাসী লিখিত আবেদন করলে সেতুর প্রয়োজনীয়তা যাচাই করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে। লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আহসান হাবিব জিতু বলেন, হাঙ্গর খালের উপর সেতু নির্মাণ খুবই জরুরি। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।