সেই সৌভাগ্যবান ১৬ জন কারা

শুকলাল দাশ | বৃহস্পতিবার , ২৩ নভেম্বর, ২০২৩ at ৭:১১ পূর্বাহ্ণ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬ সংসদীয় আসনে এবার আওয়ামী লীগের রেকর্ড সংখ্যক মনোনয়ন প্রত্যাশী দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন। গত ১৮ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র বিতরণ গত ২১ নভেম্বর শেষ হয়েছে। এই চার দিনে চট্টগ্রামের ১৬ আসন থেকে ২১৭ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান। এবারের মতো এতো রেকর্ড সংখ্যক মনোনয়ন প্রত্যাশী অতীতে কোন সময় ছিল না বলে দলীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

শেষ মুহূর্তে চট্টগ্রামের ১৬ আসনের ২১৭ জন মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে কে হচ্ছেন ১৬ আসনের নৌকার কাণ্ডারী সেটা এখন দেখার বিষয়। এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা পর্যন্ত। যার কারণে সবার দৃষ্টি এখন গণভবনের দিকে। বিশেষ করে তিনচার জন মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্য ছাড়া অন্য আসন গুলোর সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে শীর্ষ নেতারা এখন শেষ মুহূর্তে নানামুখী চেষ্টাতদ্বিরে ব্যস্ত রয়েছেন। বলতে গেলে যে সব আসনের প্রার্থীরা দলীয় হাইকমান্ডের গ্রীণ সিগন্যাল পাননি তারা এখনো অনিশ্চয়তায় রয়েছেন। নানামুখী তদ্বিরের মাধ্যমে ভাগ্য পরীক্ষার অপেক্ষায় আছেন তারা। এবার চট্টগ্রামের অনেক আসনের সংসদ সদস্য নিজ সংসদীয় আসনে দলের ভেতরে চ্যালেঞ্জে পড়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে দলের অনেকেই মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে চট্টগ্রাম২ ফটিকছড়ি আসনটি তরিকত ফেডারেশনকে, চট্টগ্রাম৫ হাটহাজারী আসনটি জাতীয় পার্টিকে এবং চট্টগ্রাম৮ চান্দাগাঁওবোয়াখালী আসনটি জাসদকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে চট্টগ্রাম৮ আসন থেকে নির্বাচিত জাসদের সংসদ সদস্য মাঈনুদ্দিন খান বাদল মারা যাওয়ার পর এই আসনে আওয়ামী লীগের মোছলেম উদ্দিন আহমেদকে মনোনয়ন দিলে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি মারা যাওয়ার পর নোমান আল মাহমুদকে মনোনয়ন দিলে তিনিও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম৫ আসনের পাশাপাশি আরো একদুটি আসন বিভিন্ন জোটকে ছেড়ে দেয়া হতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে।

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি ও তাদের মিত্রদের নির্বাচনে আসার সম্ভাবনা খুব কম। এমনটাই ধরে নিয়ে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে এবং ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে বিএনপির জোটের সাথে ছিল এমন কয়েকটি দলসহ তৃণমূল বিএনপি, কল্যাণ পার্টি, বিএনএফ, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টিসহ আরো কয়েকটি দল নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে প্রস্তুতি নিয়েছে।

এই দল গুলো আওয়ামী লীগের সাথে জোটগত নির্বাচন না করলেও চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, কল্যাণ পার্টিকে একটি করে আসন দেয়ারও গুঞ্জনও রয়েছে।

এদিকে ভোটের মাঠে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলে জয় অনেকটা নিশ্চিত এমনটাও মনে করে চট্টগ্রামের ১৬ সংসদীয় আসনে এবার রেকর্ড সংখ্যাক প্রার্থী আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেতে আগ্রহী হয়েছেন। তা ছাড়া নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক দেখাতে এবং ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে এবার দলীয় হাইকমান্ড অনেকটাই নমনীয় থাকবে বলেও ধারণা এসব প্রার্থীর। এ অবস্থায় দলীয় মনোনয়ন না পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীর দৌড়ে এগিয়ে থাকতেও তারা দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দেন।

এদিকে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের প্রথম সভা বসছে আজ বৃহস্পতিবার। তবে আজকের সভায় চট্টগ্রাম বিভাগের প্রার্থী চূড়ান্ত হচ্ছে না। আজকের সভায় রাজশাহী, খুলনা ও রংপুর বিভাগের প্রার্থী চূড়ান্ত হবে বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের অফিসে অনুষ্ঠিত হবে। এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন দলের সভাপতি ও মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা। আজকের মনোনয়ন বোর্ডের মুলতবি বৈঠকে চট্টগ্রামঢাকাসহ অন্যান্য বিভাগগুলোর প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।

এবার আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ সংখ্যক মনোনয়ন প্রত্যাশী চট্টগ্রাম১১ (বন্দরপতেঙ্গা) এবং চট্টগ্রাম(চান্দগাঁওবোয়ালখালী) আসনে। চট্টগ্রাম(বোয়ালখালী ও চসিক আংশিক) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদ এর সাথে দলীয় মনোনয়নের দৌড়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন ২৭ জন। অপরদিকে চট্টগ্রাম১১ (বন্দরপতেঙ্গা) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের সাথে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন নিজ দলের ২৭ জন প্রার্থী। এছাড়াও চট্টগ্রাম(ফটিকছড়ি): আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় আছেন ২১ জন।

চট্টগ্রাম১০ (পাহাড়তলীডবলমুরিং) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মো. মহিউদ্দিন বাচ্চুর সাথে দলীয় মনোনয়ন পেতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লড়ছেন নিজ দলের ১৯ জন প্রার্থী। এদিকে চট্টগ্রাম১৬ (বাঁশখালী উপজেলা) : আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর সাথে আরো ১৯ জন দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বী দলীয় মনোনয়ন পেতে লড়ছেন।

চট্টগ্রাম১৪ (চন্দনাইশ উপজেলা এবং সাতকানিয়া উপজেলার একাংশ) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরীর সাথে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন আওয়ামী লীগের আরো ১৭ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিশ্বনেতাদের প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব বাঁচাতে যুদ্ধকে না বলুন
পরবর্তী নিবন্ধটিকটকে পরিচয়, বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ