এখনো আকাশে ভোরের আলো ফোটেনি।পাখিদের কিচির মিচির শব্দে ঘুম ভেঙেছে। হিমবাতাস গায়ে জড়িয়েই নিতেই নাইমার বেশ ভালো লাগলো।
ব্রাশ করতে করতে ছাদে ওঠে সে।চারিদিকে নির্জনতা।
পাতাবাহার গাছগুলো বেশ লিকলিকে দেখতেও চমৎকার।
নাইমা নিজের হাতে গাছের পরিচর্যা করে। গাছগুলোর প্রতি কেমন একটা মায়া বসে যায়। দু’একবার গাছের সাথে কথা না বললে তার চলে না।
সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর কোনো বিরতি নেই। হাত, মুখ ধোয়া, ড্রেস পাল্টানো, নাশতা খাওয়া। কী যে ঝামেলা, কোচিং শেষে জ্যাম আর জ্যাম।
নাইমার “মা” মেয়েকে নিয়ে কোনো টেনশেন করেন না।
নিয়মিত নামাজ, পড়ালেখা, খেলাধুলা, সব নিয়ম করে করে চলে। নাইমা অন্যায় একেবারেই সহ্য করতে পারে না। “মা” আঁচলে চোখ মোছে। বড় হলে সে কেমন হবে। সে যেমন চঞ্চল তেমন সরল। কোনো জটিলতার ধার ধারে না। ইসকুলে নাইমা প্রথম বেঞ্চ বসতো। বন্ধুরা তার বসার জন্য সিট রেখে দিতো। ওরা নাইমাকে ভালোবাসতো।
ফার্স্ট মেজবাহ্ খুবই মেধাবি ছাত্র । সেকেন্ড ছিল নাইমা, থার্ট ছিলো কায়ছার হামিদ। তাদের মধ্য একটা প্রতিযোগিতা লেগে থাকতো।
আলমস্যার, অনিতা ম্যাডাম,হামিদা ম্যাডাম, সুনীল স্যার নাইমাকে বড্ড ভালোবাসতো। আলম স্যার বড্ড সরল মনের মানুষ ছিলেন। খুব সহজে ছাত্র ছাত্রীদের পড়াগুলো বুঝাতেন। আলম স্যার অনিতা ম্যাডামকে বেশ মনে পড়ে! আলম স্যারের
মৃত্যুর খবর পেয়ে নাইমা খুব কেঁদেছিল। আলমস্যার “মা” ছাড়া কথা বলতো না।
টিফিন ছুটির সময় কত মজা করে সবাই।একজনের টিফিন একজন খুলে খেয়ে ফেলতো।
প্রতিদিন নাইমাকে তাঁর মায়ের হাতের যত্ন করা টিফিন বঙ নিয়ে যেতো।বিফ বার্গার, নুডলস, সবার টিফিন থেকে ভেসে আসা খাবারের সুগন্ধ। এলিনার টিফিন বক্স খুলে চিকেন ফ্রাই পাউরুটি সিদ্ধ ডিম,এলিনার সব সময় বক্সে চিকেন ফ্রাই তার খুব পছন্দ। বন্ধুরা মিলে আনন্দ করে পরিবেশন করতো।
অনেক সময় তারা মহসিন কলেজের সবুজ পাহাড়ে খেজুর ও কচি কচি পেয়ারা ও পেঁপে পাহাড়ের চূড়ায় বসে বসে মজা করে খায়, সেসব সোনালি দিনগুলো ফিরে হয়তো আসে না। তবুও ভাবতে ভালো লাগে সারাটি জীবন হৃদয়ের পাতায় বেঁচে থাকে।
বৃষ্টির দিনে “মা” কতো বারণ করতো ইসকুলে যাবার দরকার নেই, নাইমার ইসকুল খুব প্রিয় আর বৃষ্টিতে ভিজতে তার দারুণ লাগে। তাই চুপিচুপি বৃষ্টিতে ভিজে ইসকুলে চলে যেতো। এমন সব ছবি মনের মাঝে আঁকা হয়ে থাকে।
একদিন ইসকুল থেকে আসার পথে সহপাঠী তন্ময় নাইমাকে দুস্টমি করে। অনেক মন্দ কথা বলে। এলিনা চুপ থাকতে বলে। প্রিন্সিপাল স্যারকে ব্যাপারটা ইসকুলে জানাতে বলে। প্রিন্সিপাল স্যার খুবই রাগি মানুষ।নাইমা নিজেই খুব ভয় পায়।তারপর ও পরের দিন স্যারের সাথে দেখা করে,স্যার বলে কী ব্যাপার কী চাই?
স্যার চোখগুলো বড় বড় করে তাকানো দেখেই নাইমার গলাটা শুকিয়ে যায়।
স্যার বলল কিছুই বলছো না কেন?
নাইমা স্যারকে সবটা ঘটনা খুলে বলে, প্রিন্সিপাল স্যার বেত নিয়ে ক্লাসে তন্ময়কে জিগ্যেস করে,তন্ময় ওঠে দাঁড়ায়।, স্যার,তুমি তন্ময়কে বেতের কয়েক ঘা বসিয়ে দেয় হাতে। যে। তন্ময়ের ফর্সা হাতে বেতে মারের দাগ -দাগ পড়ে যায়। গেল। তা দেখে নাইমার খুব খারাপ লাগে। সে কেঁদে ফেলল। বুঝতে পারেনাই স্যার এইভাবে তাকে এতটুকু মারবে।
ইসকুলের সে দিনটা ছিল নাইমার কাছে খুব কষ্টের। ইসকুলের সাথে জড়িত তাকে ছাত্র ছাত্রীদের সাথে কত আবদার, আবেগ, ভালোলাগা, ভালোবাসা, হাসি,খুশি, সেসব
স্মৃতিগুলো বিদায়ের দিন বেশ কষ্টদায়ক।
সব বন্ধুদের বেশ মনে পড়ে। সব স্যার ম্যাডামরা, তাঁরা চমৎকার করে, কতো গল্পের মতো করে পড়াতেন।
পরীক্ষাতে ভালো রেজাল্ট করার কতো উপদেশ, তাছাড়া কবিতা আবৃত্তি, নাচ, গান, নাটক,
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের স্যারদের উৎসাহ প্রশিক্ষণ দিতেন। তাঁদের এই পরিশ্রম ছাত্রছাত্রীরা কোনো দিন ভুলতে পারবে না। কতো আনন্দ হৈ চৈ ইসকুল জীবনে প্রতিটি দিনের কথা মনে হলে নাইমার চোখে জল আসে।