চার ধাপে শুরু হয়েছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। প্রথম ধাপে চট্টগ্রামে তিন উপজেলায় (সন্দ্বীপ, মীরসরাই ও সীতাকুণ্ড) শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ২১ মে দ্বিতীয় ধাপে চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ফটিকছড়ি ও রাঙ্গুনিয়া এবং ২৯ মে তৃতীয় ধাপে বোয়ালখালী, পটিয়া, আনোয়ারা ও চন্দনাইশ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২১ মে দ্বিতীয় ধাপে রাউজানেও ভোট হওয়ার কথা ছিল কিন্তু এই উপজেলায় চেয়ারম্যান থেকে ভাইস চেয়ারম্যান সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় ভোটগ্রহণ আর হচ্ছে না। চতুর্থ ধাপে আগামী ৫ জুন চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও লোহাগাড়া উপজেলায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
আনোয়ারা, পটিয়া, চন্দনাইশ এবং হাটহাজারী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে দেখা গেছে, এবারের উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে প্রতিটি উপজেলার গ্রামগুলো উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়েও এবারের উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গ্রামের ভোটাররা বেশ উৎসাহ–উদ্দীপনা নিয়ে প্রার্থীদের জন্য কাজ করছেন। উপজেলা সদর থেকে প্রতিটি গ্রামের রাস্তায় রাস্তায় শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ব্যানার–পোস্টার। গ্রামের চায়ের দোকানগুলোতে ভোটাররা সকল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোটের হিসেব–নিকেশে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, এবার উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কাউকে দলীয় প্রতীক (নৌকা) বরাদ্দ না দিয়ে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ায় দলের একাধিক প্রার্থী নির্বাচন করছেন। এই কারণে এবারের উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে আসছেন। প্রতিটি গ্রামে গ্রামে গণসংযোগ করছেন–ভোটারদের আস্থা অর্জনে চেষ্টা করছেন। দীর্ঘদিন পর তৃণমূলের সর্বস্তরের ভোটারদের কদর বেড়েছে প্রার্থীদের কাছে। প্রতিটি উপজেলায় প্রার্থীরা এখন তৃণমূলের নেতাকর্মী এবং সাধারণ ভোটারদের আস্থায় নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এই কারণে ভোটাররাও বেশি তৎপর এবারের উপজেলা নির্বাচনকে নিয়ে।
স্থানীয় ভোটার এবং তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক থাকায় প্রার্থীরা প্রতিটি গ্রামের অলি–গলিতে আসেন না। এক ইউনিয়নে একটি করে সভা করে চলে যান দলের নেতারা। তৃণমূলের খবরও নেননি। এতোদিন স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে বিশেষ করে ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র নির্বাচনে দল থেকে নৌকা প্রতীক দেয়ার কারণে মনোনয়নপ্রাপ্তরা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সাথে তেমন যোগাযোগ রাখতো না। তারা শুধু নৌকা প্রতীক পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠতেন। কেন্দ্রে যোগাযোগ–তদ্বির এগুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। কোনো রকমে নৌকা প্রতীক পাওয়ার পর মাঠ পর্যায়ে আর তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কাছে কেউ যেতেন না। এই নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ আর অসন্তোষ বিরাজ করছিল।
এবার আওয়ামী লীগ কাউকে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ না দিয়ে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। এমনকি দল থেকে কাউকে সমর্থনও দেয়া হয়নি। এই কারণে এবারের উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীদের কাছে তৃণমূলের সর্বস্তরের ভোটারদের কদর বেড়েছে।
এদিকে এবারের উপজেলা নির্বাচন অবাধ–সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। স্থানীয় সংসদ সদস্যরাও যাতে কারো পক্ষে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে সে দিকে প্রশাসন বেশ সর্তক দৃষ্টি রাখছেন। গত ৮ মে প্রথম ধাপে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ, মীরসরাই ও সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাচন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশ শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল এ নির্বাচনে।