বর্ষার থই থই জল, অবিরাম বৃষ্টিমেয়ের কান্না আর কদম, কামিনী, কেয়ার স্নিগ্ধ হাসি। বর্ষাই তো বাংলার চিরায়ত রূপ। কখনো রিমঝিম গান গেয়ে বৃষ্টি নামের মিষ্টি মেয়েটি সুরে সুরে ভরিয়ে তোলে প্রকৃতি। শরতে সাদা মেঘের ভেলা, কাশফুল দোলানো শান্ত বাতাস, নীল আকাশে উড়ে যাওয়া বলাকার ঝাঁক। হেমন্তে পাকে ধান। আসে নবান্নের উৎসব। ঘাসের ওপর জমে ওঠে ছোট ছোট শিশির বিন্দু। শীত আসে কুয়াশার চাদর পরে। অসংখ্য শিশির কণায় ঝলমল করে ওঠে বাংলার মুখ। সকালের মিষ্টি রোদে ভরিয়ে দেয় উঠান। বৃক্ষের বাকল চিরে বেরিয়ে আসে নতুন পাতা। প্রকৃতি যেন অপেক্ষায় থাকে বসন্ত ঋতুর জন্য।
প্রতিদিনের প্রয়োজনে প্রকৃতিকে ব্যবহার করে চলেছি অবিরাম। আমাদের বেঁচে থাকার সকল উপাদানই উজাড় করে দিয়ে থাকেন প্রকৃতি। আমরা বাঁচার জন্য প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। প্রকৃতি ও মানুষের সম্পর্ক খুবই নিবিড়। আমরা প্রতিনিয়ত প্রকৃতি থেকে নিচ্ছি, কিন্তু প্রকৃতিকে ভালো রাখতে কিছুই ভাবছি না। প্রকৃতিকে যদি সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার না করি, প্রকৃতিকে নির্বিচারে যদি উজাড় করি, তাহলে একদিন প্রকৃতি আমাদেরকে দেওয়ার ক্ষমতা নিঃশেষ হয়ে যাবে। প্রকৃতির স্বাভাবিক পরিবেশ ঠিক রেখে আমাদের প্রয়োজন মেটানোর পরিকল্পনা যেন আমরা করি। প্রকৃতির ওপর বিভিন্ন ভাবে আমরা আঘাত করেই চলেছি। পাহাড় বনভূমি গাছপালা কেটে ফসলিজমি নদী খাল ভরাট করার যেইভাবে চারিদিকে মহোৎসব চলছে, তাই যদি চলে আমাদের জন্য কোনো ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে। এই বিপদ এড়াবার জন্য আমরা প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারে যত্নবান হই। প্রকৃতিকে নিঃশেষ করে আমাদের বাঁচার উপায় নেই। ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা, সবুজ শ্যামল প্রকৃতিময় আছে সুখশান্তি–সমৃদ্ধির অফুরন্ত ভাণ্ডার। তবে এই সোনার বাংলার সৌন্দর্য রক্ষা করতে হলে আমাদের আগে নৈতিক আদর্শে মনকে সাজাতে হবে। নইলে আমাদের অনৈতিক চলনে সব ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই নিজে সুন্দর হই এবং দেশকে সুন্দর রাখি। আসুন গাছ রোপণ করি, প্রকৃতি রক্ষা করি।