ছোট ছোট ঝোঁপ, ছোট ছোট গাছ। তাতে থোকায় থোকায় ঝুলছে গাঢ় হলুদ বর্ণের ছোট গোলাকার কমলা। গাছে পাতার চেয়ে যেন ফলই বেশি। আকারে ছোট হলেও খেতে বেশ সুমিষ্ট বারি–২ জাতের এই কমলা। খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মাতৃবাগান জুড়ে ছোট ছোট গাছের শাখায় নতুন জাতের এই কমলা দেখা গেছে। পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করা হয়েছে এটি।
পাঁচ বছর আগে খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র এই জাতের উদ্ভাবন করে। বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এই ফল। কেবল খেতেই সুস্বাদু নয়, এটি দেখতেও বেশ সুন্দর। খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আলতাফ হোসেন বলেন, বারি কমলা–২ আমাদের দেশে যে চায়না কমলা আমদানি হয় তার মতোই। তবে এর মূল বৈশিষ্ট্য হল এটি চায়না কমলার চেয়েও বেশি মিষ্টি। গাছ প্রতি ফলনও বেশি। এটি আমাদের দেশের আবহাওয়া উপযোগী এবং দারুণভাবে উৎপাদনে সক্ষম। এটি চাষাবাদ করে আমাদের দেশের কৃষকরা লাভবান হতে পারবে। এতে বিদেশ থেকে কমলা আমদানির নির্ভরতাও কমবে। বারি কমলা–২ পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়াও সিলেটের পাহাড়ি অঞ্চলে চাষাবাদের উপযোগী। নিয়মিত ফলদানকারী উচ্চ ফলনশীল এই জাতের কমলা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে
চাষাবাদ করা গেলে পাহাড়ে কৃষিজ অর্থনীতি আরো সমৃদ্ধ হতে পারে বলে জানান পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মালেক। তিনি বলেন, বারি কমলা–২ অত্যন্ত উচ্চ ফলনশীল জাত। পূর্ণবয়স্ক গাছে সর্বোচ্চ ৫শ কমলা হয়। নভেম্বর মাসে কমলার রঙ আসলেও সংগ্রহ করতে হয় জানুয়ারির দিকে। চারা রোপণের তিন থেকে চার বছরের মধ্যে ফলন পাওয়া যায়। বারি কমলা–২ রোগ বালাই সহিষ্ণু একটি জাত।
সম্ভাবনাময় বারি কমলা–২ এর বাণিজ্যিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে চায় খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ–পরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার বলেন, বারি কমলা–২ খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র উদ্ভাবন করেছে। ইতোমধ্যে আমরা তাদের কিছু চারা কলম নিয়ে এসেছি। এবং এটার বংশবৃদ্ধি করা হচ্ছে। আমরা দেখেছি এই কমলার মিষ্টতা বেশি। কৃষক এই জাতের কমলা চাষের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরা হর্টিকালচার থেকে কমলা চারা তৈরি করে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করব। এর মাধ্যমে খাগড়াছড়িতে বারি কমলা–২ এর বাণিজ্যিক সম্ভাবনা তৈরি হবে।