অসচ্ছল প্রতিবন্ধী হিসেবে সমাজসেবা অধিদপ্তরে তালিকভুক্ত সুপ্রিয় চাকমা (৩৮)। তবে সুনিপুণ কারুশিল্পী হিসেবে ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে তার নাম। কৃষি নির্ভরশীল পরিবারে জন্ম নিয়েও শারীরিক অক্ষমতা ও চোখের দৃষ্টি কমে আসায় সে কাজ করতে পারেন না তিনি। যদিও গত ৫ বছরে কাঠ দিয়ে শিল্প কর্ম তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন এই কারুশিল্পী।
দুর্গম এলাকা বলতে যা বোঝায়, সেখানেই সুপ্রিয় চাকমার ভাঙা বেড়ার বাড়ি। খাগড়াছড়ি জেলা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে, মহালছড়ি উপজেলার মুবাছড়ি ইউনিয়নের মধ্য আদামের খামারবাড়ি এলাকায়। কিন্তু তার আগে পেরোতে হয় কাঁচা-পাকা সড়ক। কয়েকটি পাহাড়।
সুপ্রিয় চাকমার বাড়ির ভেতরে ছড়িয়ে রয়েছে নানা শিল্পকর্ম। বিভিন্ন বরণ্যে ব্যক্তি, বন্যপ্রাণী ও বৌদ্ধমূর্তির অবয়ব তৈরি করেছেন তিনি। গামারি, কাঁঠালসহ বিভিন্ন গাছের কাঠের আকৃতি পরিবর্তন করে কারুকাজ করে থাকেন এই শিল্পী। এলাকাবাসী জানায়, তার এসব কাজ দেখতে দূর-দুরান্ত থেকে ছুটে আসে দর্শনার্থীরা।
কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই শিল্পকর্ম তৈরির দক্ষতা অর্জন করেছেন সুপ্রিয় চাকমা। একেকটি শিল্পকর্ম তৈরি করতে সময় লাগে প্রায় ৭-৮ দিন। তবে সনাতনী যন্ত্রপাতি দিয়ে কাঠের ওপর কারু কাজ করা বেশ পরিশ্রমের ব্যাপার, এমনটাই জানালেন সুপ্রিয় চাকমা।
তিনি বলেন, একসময় ছেলেদের বিজ্ঞানের ব্যবহারিক খাতায় অংকন করতাম। কিন্তু পাঁচ বছর আগে রাউজানের একটি বিহারের অধ্যক্ষ আমাকে কাঠ খোদাই করে হাঁস বানানোর অনুরোধ করেন। সংশয় নিয়ে শুরু করলেও সেই চেষ্টায় সফল হয়েছি। এরপর চেষ্টা করেছি বন্য প্রাণীর অবয়ব তৈরি করতে।
তিনি বলেন, কাঠ দিয়ে জুম্ম জাতির পথপ্রদর্শক এম এন লারমার কাঠের ভাস্কর্য প্রস্তুত করেছি। এছাড়া বাংলাদেশের মানচিত্রের ওপর ফুটিয়ে তুলেছি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের অবয়ব। এসব কাঠের শিল্পকর্ম অনেকে সংগ্রহ করে নিয়ে যায়।
সুপ্রিয় চাকমার স্ত্রী জ্ঞানবালা চাকমা বলেন, আমরা স্বামী শারীরিকভাবে অক্ষম, চোখেও ভালো দেখতে পায় না। কৃষিসহ সব কাজ আমি করি। সে সারাদিন বাড়িতে কাঠ খোদাই করে বিভিন্ন শিল্পকর্ম তৈরি করে। তবে এসব কাজ করতে আধুনিক সরঞ্জাম লাগে। অভাবের কারণে সে ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। সুপ্রিয় চাকমার প্রতিবেশী আলোক বিকাশ চাকমা ও রতন বিকাশ চাকমা। তারা জানান, এলাকার অনেকে আগ্রহ নিয়ে সুপ্রিয় চাকমার কাছে যায়। তার কাছে শিল্পকর্ম তৈরি শিখতে চায়।
সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে মাসে সাড়ে ৭শ টাকা ভাতা পান সুপ্রিয় চাকমা। তবে নিজের শিল্পচর্চাকে এগিয়ে নিতে সরকারের সহায়তা চান তিনি। ভাঙা বাড়িতে ঝড়-বৃষ্টিতে পরিবার নিয়ে ভিজতে হয়। সরকারের কাছে দুর্যোগ সহনীয় ঘর দাবি করেছেন তিনি।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা মো. শাহজাহান বলেন, কারুশিল্পী সুপ্রিয় চাকমা সম্পর্কে আগে তেমন কিছু জানতাম না। তার শিল্পকর্মকে এগিয়ে নিতে আমরা আর্থিক সহায়তা করব।