অবিশ্বাস্য নাটকীয়তা, রোমাঞ্চ আর উত্তেজনা পুরো ম্যাচ জুড়ে। দারুণ সব শট, দুর্দান্ত বোলিং, একের পর এক ক্যাচ ছেড়ে দেওয়া, ফিল্ডিংয়ে অভাবনীয় ব্যর্থতা, হাতের মুঠো থেকে ম্যাচ ফসকে দেওয়া। সবকিছুর পর ম্যাচ গড়াল সুপার ওভারে। সেখানেও আরেক দফা নাটকীয়তার পর ম্যাচের ফয়সালা হলো ওয়াইড বলে। পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচ জিতে ফাইনালে পৌঁছে গেল বাংলাদেশ ‘এ’ দল। এসিসি রাইজিং স্টারস টুর্নামেন্টের প্রথম সেমি–ফাইনালে ভারত ‘এ’ দলকে সুপার ওভারে হারিয়ে ট্রফির মঞ্চে পা রাখল বাংলাদেশ ‘এ’ দল। কাতারের দোহায় গতকাল শুক্রবার হাবিবুর রহমান সোহানের শুরুর ঝড় ও এসএম মেহেরবের শেষের তাণ্ডবে ২০ ওভারে ১৯৪ রান তোলে বাংলাদেশ। রান তাড়ায় শেষ বলে বাংলাদেশ অধিনায়ক আকবর আলির চরম ভুলে তিন রান নিয়ে ম্যাচ টাই করে ভারত। মূল ম্যাচের শেষ দিকে দারুণ বোলিং করা রিপন মন্ডল সুপার ওভারেও চমকপ্রদ বোলিংয়ে ভারতের দুই উইকেট নিয়ে নেন দুই বলেই। যেটির মানে, সুপার ওভারে ভারতের রান শূন্য।
জয়ের জন্য প্রয়োজন যখন মোটে একটি রান, বাংলাদেশের ইয়াসির আলি চৌধুরী উড়িয়ে মারেন ভারতের লেগ স্পিনার সুয়াশ শার্মার বল। সীমানায় অসাধারণ এক ক্যাচ নেন রামানদিপ সিং। পরের বলটি খেলতে নামেন আকবর আলি। সুয়াশ করেন গুগলি। কিন্তু বলটি রাখেন পারেননি ঠিক লাইনে। আম্পায়ার যখন দুহাত প্রসারিত করে ওয়াইডের সঙ্কেত দিলেন, আকবর তখন দাঁড়িয়ে আছেন দুহাত জোড় করে। তার সতীর্থরা তখন বাঁধনহারা উল্লাসে মেতে উঠেছেন। ম্যাচটি সুপার ওভারে গড়ায় বাংলাদেশকে বিশ্বকাপ জয় করা দলের অধিনায়ক আকবরের হতবুদ্ধিকর কাণ্ডেই। শেষের আগের ওভারে তিনি নেহাল ওয়াধেরার ক্যাচ ছেড়ে দেন। তবে এর চেয়েও ভয়াবহ ভুল করেন মূল ম্যাচের শেষ বলে।
জয়ের জন্য ভারতের প্রয়োজন ছিল চার রানের। রিপন মন্ডলের বল লং অনের দিকে পাঠান মাত্রই ক্রিজে আসা ব্যাটার হার্শ দুবে। একটির বেশি রান হওয়ার কারণ নেই। তবু ঝুঁকি নিয়ে যখন দ্বিতীয় রানের জন্য ছুটছে দুই দল, ফিল্ডারের কাছ থেকে তখন বল পেয়ে গেছেন কিপার আকবর। তবে তিনি ছিলেন স্টাম্প থেকে একটু দূরে। অনায়াসেই দুটি পদক্ষেপ এগিয়ে তিনি তুলে নিতে পারতেন বেলস। কিন্তু চাপের মধ্যে তিনি খেই হারান। গ্লাভস না খুলেই থ্রো করেন রান আউটের চেষ্টায়। বল স্টাম্পে না লেগে চলে যায় একটু দূরে। সেই সুযোগে তৃতীয় রানও নিয়ে ফেলেন দুই ব্যাটসম্যান। পরাজয়ের দুয়ার থেকে ম্যাচ ‘টাই’ করার উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে ভারতীয় দল।
গোটা ম্যাচেও উত্তেজনার রসদ কম ছিল না। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ প্রথম চার ওভারে তোলে ৪৩ রান। জিসান আলম আউট হন ১৪ বলে ২৬ রান করে। তিনে নামা জাওয়াদ আবরার (১৯ বলে ১৩), চারে নামা অধিনায়ক আকবর আলি (১০ বলে ৯) ভালো করতে পারেননি। ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পেয়ে আবু হায়দার পারেননি রান করতে। দলকে তখন এগিয়ে নেন সোহান। ফিফটি করেন তিনি ৩২ বলে। তবে ৬৫ করে সোহান আউট হওয়ার পর রানের গতিও যায় থমকে।
একসময় মনে হচ্ছিল, ১৬০ রানের আশেপাশে আটকে যেতে পারে স্কোর। তখনই মেহেরবের বিধ্বংসী ব্যাটিং। এর আগে টি–টোয়েন্টিতে যার সর্বোচ্চ রান ছিল ৩১, স্ট্রাইক রেট ছিল ৯৬.৪২, সেই তিনিই দেখান নিজের সামর্থ্য। ১৯তম ওভারে নামান ধিরের বলে চারটি ছক্কা একটি চারে তিনি তোলেন ২৮ রান। শেষ ওভারে দুটি চার ও একটি ছক্কা মারেন ইয়াসির আলি চৌধুরী, একটি ছক্কা আসে মেহেরবের ব্যাট থেকেও। ২৬৬.৬৬ স্ট্রাইক রেটে ৪৮ রান করে অপরাজিত থাকেন মেহেরব, ৯ বলে ১৭ রানে অপরাজিত থাকেন ইয়াসির।
রান তাড়ায় ভারতকে বিস্ফোরক সূচনা এনে দেন বৈভাব সুরিয়াভানশি ও প্রিয়ানশ আরিয়া। প্রথম ওভারে আসে ১৯ রান, ৩.১ ওভারে রান ওঠে ৫৩। এরপর আবু গাফফার সাকলাইনের দারুণ এক স্লোয়ারে সীমানায় ধরা পড়েন বিপজ্জনক সুরিয়াভানশি (১৫ বলে ৩৮)। ভালো করতে পারেননি তিনে নামা নামান ধির (১২ বলে ৭)। টুর্নামেন্টের আগের তিন ম্যাচেই প্রিয়ানশের রান ছিল ১০, ১০ ও ১০। এ দিন তিনি ২৩ বলে ৪৪ করে দলকে রাখেন লড়াইয়ে। দুই দফায় জীবন পেয়ে অধিনায়ক জিতেশ শার্মা করেন ২৩ বলে ৩১। শেষদিকে রামানদিপ সিংয়ের ব্যাট থেকে আসে ১১ বলে ১৭। নেহাল ওয়াধেরা তখন টিকে ছিলেন এক প্রান্তে। ১৯তম ওভারে তার ক্যাচ ছাড়েন আকবর। দারুণ সব স্লোয়ারের মিশেলে রান কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখেন সাকলাইন।
শেষের আগের ওভারে চমৎকার বোলিংয়ে কেবল ৫ রান দেন রিপন মন্ডল। শেষ ওভারে ভারতের প্রয়োজন পড়ে ১৬ রানের। প্রথম দুই বলে সিঙ্গলের পর তৃতীয় বলে ছক্কা মারেন আশুতোষ শার্মা। পরের বলে তিনি ক্যাচ তুলে দেন। কিন্তু লং অফ সীমানায় ক্যাচ ছেড়ে দেন জিসান, বল গড়িয়ে চলে যায় বাউন্ডারিতে। তবু মনোবল না হারিয়ে পরের বলে আশুতোষকে বোল্ড করে দেন রিপন।
এরপর শেষ ওভারে আকবরের সেই ভুল। সুপার ওভারে রিপনের প্রথম বলে রিভার্স স্কুপের চেষ্টায় বোল্ড হন জিতেশ। পরের বলে ক্যাচ দেন আশুতোষ। বাংলাদেশের জয় তখন নিশ্চিতই। কিন্তু নাটকীয়তার ম্যাচ তো শেষ হওয়ার নয়! ছক্কার চেষ্টায় ইয়াসির আলীর বিদায়ে ম্যাচে আবার ফেরে প্রাণ। এরপর সেই ওয়াইড ও বাংলাদেশের স্বস্তি। আগামীকাল রোববার ফাইনালে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের প্রতিপক্ষ পাকিস্তান ‘এ’ ও শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দলের লড়াইয়ে বিজয়ী দল।












