বিশ্বের সর্ববৃহৎ সেবা সংগঠন লায়ন্স ইন্টারন্যাশনালের অক্টোবর সেবা মাস উপলক্ষে ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫–বি ৪ বাংলাদেশ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর লায়ন কোহিনুর কামাল বলেছেন, চট্টগ্রামে নিরবচ্ছিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের ব্যাপ্তি ছড়িয়েছে লায়ন্স ক্লাব। দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে চট্টগ্রামের প্রতিটি উপজেলার পাশাপাশি বৃহত্তর চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালীসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে নানামুখী সেবা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে আন্তর্জাতিক এই সেবা সংগঠনটি। বিশেষ করে আই ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা, সিএলএফ কমপ্লেক্স মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন, অন্ধত্ব নিবারণ, ওয়ান ক্লাব ওয়ান চাইল্ড, ডায়াগনস্টিক ট্রিটমেন্ট অ্যান্ড এডুকেশন, ক্ষুধা নিবারণ, ডায়াবেটিস সচেতনতা, খৎনা ক্যাম্প, সাদাছড়ি দিবস উদযাপন, লায়ন্স স্বর্ণপদক প্রদান, লায়ন্স স্কলারশিপ ট্রাস্টের মাধ্যমে বছরজুড়ে বিভিন্ন সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। যেকোনো দুর্যোগ, দুর্বিপাকে লায়ন্স সদস্যরা নানা মানবিক কার্যক্রমের মাধ্যমে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। ঘূর্ণিঝড়, বন্যাসহ নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সর্বস্ব হারানো মানুষের পাশে আপনজন হয়ে তারা হাত বাড়ান।
করোনার ভয়াবহ সময়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই সময় মানুষ ঘর থেকে বের হতে ভয় পেতেন। অথচ লায়ন্স সদস্যরা রাতের আঁধারে ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিয়ে দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে করোনা সাপোর্ট সেন্টার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে লায়ন্স ক্লাব একটি ভরসার জায়গা হিসেবে পালন করেছে অগ্রণী ভূমিকা।
গতকাল শনিবার দুপুরে নগরীর লায়ন্স ফাউন্ডেশনের হালিমা রোকেয়া হলে অক্টোবর সেবা মাস উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অক্টোবর সেবা মাসের প্রেস কনফারেন্স কমিটির চেয়ারম্যান লায়ন রাজিব সিনহার সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি লায়ন হাসান আকবরের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে লায়ন কোহিনুর কামাল বলেন, আমরা সরকার নই; আমাদের অগাধ সামর্থ্য নেই। তবে আমাদের সীমিত সামর্থ্য নিয়েই আমরা মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নিরন্তর চেষ্টা করি।
জেলা গভর্নর বলেন, এ বছর জেলা গভর্নর হিসেবে আমি শেয়ার অ্যান্ড কেয়ার (যত্নের ছায়া ছড়ায় মায়া) ডাক দিয়েছি, যাতে লায়ন্সরা সেবাকর্মে আরও বেশি আন্তরিক হন। সেবার গুণগত মান নিশ্চিতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নিকট যাতে সহজে পৌঁছানো যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখেন। ইতোমধ্যে লায়ন্স আই ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে চট্টগ্রাম তথা সারা দেশের চিকিৎসাসেবায় লায়ন্সরা যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন লায়ন্স জেলার প্রথম ভাইস গভর্নর লায়ন মোসলেহ উদ্দিন অপু, দ্বিতীয় ভাইস জেলা গভর্নর লায়ন কামরুজ্জামান লিটন, কেবিনেট সেক্রেটারি লায়ন মোহাম্মদ বেলাল ও কেবিনেট ট্রেজারার লায়ন ইমতিয়াজ ইসলাম। সম্মানিত অতিথি ছিলেন প্রাক্তন জেলা গভর্নর লায়ন মোস্তাক হোসাইন ও লায়ন নাজমুল হক।
লায়ন কাশেম শাহ’র কোরান তেলাওয়াত ও লায়ন সুজিত কুমার দাশের গীতা পাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত লায়ন নিশাত ইমরান, আবু মোরশেদ, কামরুল হাসান হারুন, ইঞ্জিনিয়ার চন্দন দাশ, পারভীন মাহমুদ, মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম, আনিসুল হক, প্রফেসর নিলাদ্রী শেখর, কবিতা শর্মা, শহীদুল ইসলাম টিটু, লোকমান হোসেন, আবদুর রব শাহীন, আবু তাহের প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী সেবাকর্মে নিয়োজিত লায়ন্স ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বন্যায় নগদ অর্থ, ওষুধ, খাদ্য, বস্ত্র দিয়ে যে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে তা ছিল অনুকরণীয়। সারা বছর লায়ন্সরা সেবা কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত থাকার পরও অক্টোবর মাসকে সেবা মাস হিসেবে উদযাপন করা হয়। সচেতনতা তৈরি এবং দেশের মানুষকে উদ্ধুদ্ধ করার জন্যই এই সেবা মাসের আয়োজন বলে উল্লেখ করেন জেলা গভর্নর।