করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি আগামী ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ছুটি বাড়ানোর এই সিদ্ধান্ত জানান। তিনি বলেন, ‘সবার স্বাস্থ্য ঝুঁকিকে বিবেচনায় নিয়ে গত মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে আমরা বাধ্য হয়েছি। আগামী ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। তবে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি অনুকূলে এলে আমরা সীমিত পরিসরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলার চেষ্টা করতে পারি।’
করোনা পরিস্থিতিতে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে এবার পঞ্চম ও অষ্টমের সমাপনী পরীক্ষা নিচ্ছে না সরকার। পাশাপাশি অষ্টমের সমাপনী এবং এসএসসি ও সমমানের ফলাফলের ভিত্তিতে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা হবে। এছাড়া নেয়া হচ্ছে না মাধ্যমিক স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষাও। কিন্তু পরবর্তী শ্রেণিতে প্রমোশন দেয়া হবে সবাইকে। কোনো মার্কিং বা গ্রেডিং দেয়া হবে না। সবাই সমান পাস। এর প্রেক্ষিতে ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত ৩০ দিনের মধ্যে শেষ করা যায় এমন সিলেবাস তৈরি করা হয়েছে। গতকাল সিলেবাসটি প্রকাশ করা হয়েছে। সব প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছে সিলেবাসটি পাঠানো হবে।
২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষা প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আশা করছি এসএসসি পরীক্ষা পেছাতে হবে না। তবুও আমরা প্রতি নিয়ত পরিস্থিতি বিবেচনা করছি। আগামী বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা অনলাইনে ক্লাস করার সুযোগ পেয়েছে। তাদের যদি আরও কিছু ঘাটতি থাকে তা বিশেষ পরিচর্যার মাধ্যমে তা পূরণের উদ্দেশ্যেই আমরা সীমিত পরীসরে ক্লাস করানোর কথা চিন্তা করছি। তবে সব কিছুই পরিস্থিতি বিবেচনা করে নেয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘আশা করছি এসএসসি পরীক্ষা পেছাতে হবে না। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে যেকোনো ধরনের সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বিবেচনা করে এবং তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টিকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়েই নেয়া হবে। সার্বিক বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষাকে প্রাধান্য দিয়েই পরীক্ষা পেছানো না পেছানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’ মন্ত্রী বলেন, ‘যে কোনো উপায়ে মূল্যায়ন করে শিক্ষার্থীদের এসএসসি পরীক্ষার জন্য নির্বাচন করা হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রাক নির্বাচনী বা নির্বাচনী পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি। পরিস্থিতি বিবেচনায় নভেম্বরে কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পরিকল্পনা আছে। সে সময় শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে। তাছাড়া নানাভাবে শিক্ষার্থীদের অ্যাসেসমেন্টের চেষ্টা চলছে। সার্বিক বিবেচনায় মূল্যায়ন করেই এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নির্বাচন করা হবে।’
দীপু মনি বলেন, ‘এবার অন্যান্য বছরের মতো বই উৎসব করা যাবে না। তবে বিকল্প কিভাবে বইগুলো শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া যায় তা ভাবছে মন্ত্রণালয়।’ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের কেউ দাবি করছে অটোপাস, কেউ বিরোধিতা করছে, আবার কেউ বলছে আগের তিন বছরের পরীক্ষার ফল গড় করে নম্বর দিয়ে তাদের ফল প্রকাশ করা হোক। পরীক্ষা ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা ঠিক হবে না।’ তিনি বলেন, ‘অনার্সের শিক্ষার্থী কম, কারিগরিরও কম, তাই সীমিত আকারে তাদের পরীক্ষা নেয়া যায় কিনা তা বিবেচনা করছি। পরীক্ষার বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যায়ের সাথে আমরা কথা বলেছি। আমরা ইঙ্গিত পাচ্ছি আসছে ডিসেম্বর, জানুয়ারিতে করোনা প্রকোপ বাড়তে পারে।’ আগামী শিক্ষাবর্ষে স্কুলগুলোতে ভর্তির বিষয়ে পরীক্ষা হবে কিনা এই প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, পরিস্থিতি বিচেনায় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে এবং যথাসময়ে সাংবাদিকদের জানিয়ে দেয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ১৬তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষার ফল খুব শিগগিরিই প্রকাশ করা হবে বলেও জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এ বিষয়ে এনটিআরসিএর কর্মকর্তারা বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মতি পেলে ফল প্রকাশ করা হবে।’ ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘আমরা পরীক্ষা নেয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার অনুশীলনটা শুরু করতে চাচ্ছি।’