সীতাকুণ্ড উপকূলে ১৯ কিমি জুড়ে বেড়িবাঁধের ভাঙন

চরাঞ্চলবাসীর নির্ঘুম রাত

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি | রবিবার , ২৫ মে, ২০২৫ at ৭:৪৬ পূর্বাহ্ণ

সীতাকুণ্ডে উপকূলীয় ১৯ কিমি বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বেড়িবাঁধ ভেঙে পড়ায় সাগরের তীরবর্তীতে থাকা চরাঞ্চলবাসীর এখন নির্ঘুম রাত কাটছে। দীর্ঘদিন ধরে সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার কুমিরা, বাঁশবাড়িয়া গ্রামের আকিলপুর, বসরত নগর, গুলিয়া খালী, মুরাদপুর, শেখের হাট, সৈয়দপুর, আকিলপুরসহ আরো কয়েকটি অঞ্চলের বেড়িবাঁধ ভেঙে পড়ায় হাজারো মানুষ বেড়িবাঁধ ভাঙন আতংকে রয়েছে। তার মধ্যে কুমিরা, বাঁশবাড়িয়ার জমাদার পাড়া, আকিলপুর, গুলিয়াখালির বেড়িবাঁধের অবস্থা খুবই করুণ। এসব তীরবর্তী এলাকার বেশির ভাগই আবার জেলে সম্প্রদায় ও কৃষক পরিবারের সাধারণ মানুষ। বছরের পর বছর ধরে তারা উপকূলীয় এলাকায় বসবাস করে মাছ ধরা, মাছ চাষ ও ক্ষেতখামার করে আসছে। কিন্তু বেড়িবাঁধ ভেঙে পড়ায় তাদের জীবনজীবিকা ও আশ্রয়স্থল হুমকির মুখে পড়েছে।

চরাঞ্চলের মানুষরা জানান, এমনিতেই প্রতি বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ও সাগরের জোয়ারের লোনা পানিতে পুকুরের মাছ ও সবজি ভেসে যায়। এতে তাদের অনেক লোকসান গুণতে হয়। তারপরও ঝড়জলোচ্ছ্বাস উপেক্ষা করে যুগের পর যুগ ধরে তারা উৎপাদনশীল কাজ করে চলেছেন। গত কয়েক বছর আগে বেড়িবাঁধে সামান্য ভাঙন দেখা দিলেও চলতি বছরে বিভিন্ন অঞ্চলের বেড়িবাঁধ ভাঙন প্রকট আকার ধারণ করে। এতে তীরবর্তী অঞ্চলের মানুষগুলো আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

উপজেলা বেড়িবাঁধ এলাকাগুলো সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার ১৯ কিমি এর বেশি বিভিন্ন অঞ্চলের বেড়িবাঁধ দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করার কারণে তা ভেঙে পার্শ্ববর্তী ক্ষেতের সাথে মিশে একাকার হয়ে গেছে। ফলে কোনটি ক্ষেত আর কোনটি বেড়িবাঁধ বুঝাই মুশকিল। বাঁশবাড়িয়া এলাকার স্থানীয় কৃষক বৃদ্ধ অলি উল্লাহ বলেন, বাঁশবাড়িয়া ফেরীঘাট, জমাদার পাড়া, আকিলপুরের বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘদিন ধরে বেড়িবাঁধ ভেঙে পড়ে আছে। বছরের পর বছর সময়মত সংস্কার না করার কারণে আমরা কৃষক পরিবারগুলো জমিতে কোনো সবজি আবাদ করতে পারছি না। আমার মত একাধিক কৃষক পরিবারের হাজার হাজার একর জমির ফসল সাগরের লোনা পানি প্রবেশ করে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে করে আমাদের ব্যাপক হারে ক্ষতির শিকার হতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, উপকূলীয় তীরবর্তীতে থাকা চরাঞ্চলবাসীর বসতভিটায় সাগরের লোনাপানি ঢুকে পড়ে। গত বছরেও এমনটি হয়েছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী প্রশান্ত তালুকদার বলেন, কুমিরা ঘাটঘর এলাকা থেকে সৈয়দপুর পর্যন্ত বেড়িবাঁধ ভাঙা রয়েছে। তার মধ্যে কুমিরা ঘাটঘর এলাকা থেকে বাঁশবাড়িয়া ফেরীঘাট পর্যন্ত সাড়ে ৫০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের প্রজেক্ট পানি উন্নয়ন বোর্ডে সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। আর বাকি যেসব এলাকায় বেড়িবাঁধ ভাঙন রয়েছে, সেসব বেড়িবাঁধের সংস্কারের কাজও পর্যায়ক্রমে করা হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, বেড়িবাঁধ ভাঙন বিষয়টি নিয়ে আলাপ আলোচনা চলছে। তবে ইতিমধ্যে ঊর্ধ্বতন মহলে বেড়িবাঁধ ভাঙন বিষয়টি জানিয়েছি। আশা করি বেড়িবাঁধ নির্মাণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাংবাদিক মুন্নী সাহার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ৩৫টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
পরবর্তী নিবন্ধজি এম কাদেরসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন