সীতাকুণ্ডে ৯০ প্রাইমারি স্কুলে নেই শহীদ মিনার

ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে পারে না শিক্ষার্থীরা

লিটন কুমার চৌধুরী, সীতাকুণ্ড | শনিবার , ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৮:১০ পূর্বাহ্ণ

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফখরুল ইসলাম। ২০২১ সালে ২য় শ্রেণিতে ভর্তি হয় সীতাকুণ্ড পৌরসদরের দত্তবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ফখরুল ২১ শে ফেব্রুয়ারির গৌরবোজ্জ্বল তাৎপর্যের কথা জানলেও ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারেনি কখনো। শুধু ফখরুল নয়, সীতাকুণ্ডের বেশিরভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সশরীরে শহীদ মিনারে গিয়ে ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ পায়নি। কারণ তাদের বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শহীদ মিনার নেই। আর শুধু যে ফখরুলের বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই তা কিন্তু নয়। ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ফুল দেয়ার জন্য সীতাকুণ্ডের ৯৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৯০টিতে শহীদ মিনার নেই।

যদিও সরকারিভাবে প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসগুলো পালন করার নির্দেশনা রয়েছে। আর এসব দিবসে শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করার কথা থাকলেও শহীদ মিনার না থাকায় সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, ভবিষৎ প্রজন্মের মধ্যে শ্রদ্ধাবোধ, দেশাত্মবোধ, ইতিহাসঐতিহ্য চেতনা জাগ্রত করার প্রয়োজনে হলেও প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা বাঞ্ছনীয়। স্বাধীনতার ৫৩ বছরে এসেও প্রাকপ্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেবল বই পড়ে আর শিক্ষকদের কাছ থেকেই জানছে প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি সারাবিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। এসকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনার না থাকার কারণ হিসেবে সরকারি কিংবা নিজস্ব তহবিল সংকট এবং জায়গার সংকটের কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাওয়ার প্রবল আগ্রহ থাকলেও তাদের বিদ্যালয় নেই শহীদ মিনার। তাই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও শহীদ মিনারে ফুলেল শ্রদ্ধা জানাতে পারে না তারা।

বাড়বকুণ্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খুরশীদ আলম জানান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সহায়তায় তিন বছর আগে তাদের বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। শহীদ মিনার নির্মাণ পরবর্তী শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ বিভিন্ন দিবসে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শহীদ বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দীপক কান্তি ভট্টাচার্য বলেন, উপজেলার ৯৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লক্ষাধিক শিক্ষার্থী আছে। তাদের ভাষা দিবসের গুরুত্ব জানানোর জন্য প্রতিটি বিদ্যালয়েই শহীদ মিনার থাকা দরকার।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নুরুচ্ছোফা বলেন, আমরা সরকারিভাবে শহীদ মিনার নির্মাণ করছি না। আর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের কোনো বরাদ্দ নেই। তবে নিজস্ব উদ্যোগে আমাদের বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কয়েকটি বিদ্যালয়ে দাতাদের আর্থিক সহযোগিতায় শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনাগরদোলায় উঠার সময় ওড়না পেঁচিয়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধলিবিয়ায় বন্দি বাংলাদেশিদের ৭৯ শতাংশই নির্যাতনের শিকার